স্বপ্নভাঙা আগুনে নিঃস্ব তারা

হালিশহরে গ্যারেজে পুড়ল টেক্সি ও বাইকসহ ২৫ গাড়ি

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

নিজের জমানো টাকা আর ধার নিয়ে দুটি সিএনজি অটোরিকশা কিনেছিলেন আনোয়ারুল করিম। ঋণ করলেও বিশ্বাস ছিল গাড়ি চালিয়ে সেই ঋণ পরিশোধ করে দিবেন। দুটি অটোরিকশার টাকা দিয়েই চলছিল তার সংসার। কিন্তু এক আগুনেই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে অটোরিকশার মালিক আনোয়ারুল করিমের।

কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখা ছারখার করে দিয়েছে তার জীবন। এখন তিনি নিঃস্ব। কিছুক্ষণ আগে যিনি ছিলেন লাখপতি, মুহূর্তেই তিনি বনে গেলেন ঋণগ্রস্ত।

নগরের ২৫ নং ওয়ার্ডের হালিশহর বউবাজার এলাকায় একটি অটোরিকশা গ্যারেজে গত রোববার মধ্যরাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শুধু আনোয়ারুল করিম নয় আরও অনেকের জীবনে নেমে এসেছে বিষন্নতা। রাত পৌনে ২টার দিকে লাগা আগুনে গ্যারেজে থাকা ১৯টি সিএনজি অটোরিকশা, ৫টি মোটরসাইকেল ও একটি রিকশা পুড়ে গেছে। এতে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে আনেয়ারুল করিমের মত আরও বহু গাড়ির মালিক ও চালকদের। মাত্র ত্রিশ মিনিটের আগুনে তাদের জীবনের সব সঞ্চয়সহ সব আশাভরসা শেষ হয়ে গেছে বলেও হতাশা ব্যক্ত করেন তারা।

অনেকের স্বপ্ন শেষ করে দেয়া ভয়াল এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে রোববার দিবাগত রাত ১টা ৪০ মিনিটের দিকে নগরীর হালিশহর থানাধীন ঈদগা বউ বাজার এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের মালিকানাধীন একটি টিনশেড গ্যারেজে। আগুনের লেলিহান শিখায় ওই গ্যারেজে থাকা ১৯টি সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ সবগুলো গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মধ্যরাত থেকে যে বিলাপ শুরু হয়েছিল গতকাল দুপুরেও তা থামেনি। সিএনজি টেক্সি ও রিকশার মালিক, চালক এবং তাদের পরিবারের আহাজারীতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।

স্থানীয় মোহাম্মদ মনজুর আলম নামে একজন বাসিন্দা দৈনিক আজাদীকে বলেন, রাতে ফায়ার সার্ভিসের সাথে আমরাও অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আগুন এত ব্যাপক ছিল যে তা নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই সবগুলো গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সিএনজিচালিত গাড়িগুলোর প্রতিটির ট্যাংকে গ্যাস ছিল উল্লেখ করে স্থানীয় কবির হোসেন নামে অপর একজন বলেন, এতে গাড়িগুলো দ্রুত পুড়ে গেছে। আগুনে গ্যাস যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠে।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার খলিলুর রহমান বলেন, গ্যারেজে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৯টি সিএনজি অটোরিকশা, একটি রিকশা এবং ৫টি মোটরসাইকেল পুড়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট কাজ শুরু করে। প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি এখন বলা যাচ্ছে না। তদন্ত করে বলতে হবে। অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও তিনি জানান।

গ্যারেজের মালিক জাহাঙ্গীর আলম সর্বস্ব শেষ হয়ে গেছে উল্লেখ করে বলেন, আমার গ্যারেজে নিজের একটিসহ মোট ১৯টি সিএনজিচালিত টেঙি, একটি রিকশা এবং ৫টি মোটরসাইকেল ছিল। এগুলো মাসিক ভিত্তিতে থাকতো। একটি সিএনজি টেঙির জন্য প্রতি মাসে এক হাজার টাকা, মোটরসাইকেল ৫০০ টাকা এবং রিকশার জন্য ৩০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হত। অনেকদিন ধরে গ্যারেজ চালাচ্ছেন উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তার গ্যারেজে গাড়ি মেরামতের যন্ত্রপাতি এবং সিএনজি টেঙির পার্টসের ব্যবসা ছিল। নগদ এক লাখ সত্তর হাজার টাকাসহ সবই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, রাতে গ্যারেজ বন্ধ করে যাওয়ার পর হঠাৎ গ্যারেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে স্থানীয়দের সহায়তার কোন রকম একটি সিএনজি অটোরিকশা উদ্ধার করলেও বাকিগুলো পুড়ে যায়। এ ঘটনায় প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গ্যারেজের দারোয়ান মোহাম্মদ আলী আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে কেউ নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে না পারলেও ধারণা করা হচ্ছে যে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে সিএনজি টেঙির ট্যাংকে লিকেজ কিংবা কোনো ধরনের স্পার্ক থেকেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।

সর্বস্ব হারানো পথে বসে যাওয়া মানুষগুলো সরকারের বিশেষ সহায়তা কামনা করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি ভোটে এলে তফসিল পুনঃনির্ধারণেও রাজি ইসি
পরবর্তী নিবন্ধসশস্ত্র বাহিনী দিবস আজ