‘স্বকাল শিশু সাহিত্য সংসদ’ ২০ জুন আয়োজন করেছিলো– ‘কিশোর কবিতা পাঠ উৎসব’। আমাদের দেশে গল্প পাঠের আয়োজন সচরাচর হয় না কিংবা কোনো অনুষ্ঠানেও গল্প পাঠের সুযোগ থাকে না। গত ১২ জুলাই স্বকালের আয়োজনে চট্টগ্রাম একাডেমির ফয়েজ নুরনাহার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘কিশোর গল্প পাঠ উৎসব ২০২৫’। কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এলিজাবেথ আরিফা মুবাশশিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সাবেক মহা পরিচালক আনজীর লিটন। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত কবি ও শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ। তিনি বলেন – যে কেউ গল্প লিখতে পারে না একমাত্র সৃজনশীল ও কথাসাহিত্যিকরাই গল্প লিখতে পারেন। গল্প শোনা অনেক ধৈর্য্যের ব্যাপার। স্বরচিত গল্প পাঠ করে শোনান ইফতেখার মারুফ, কাসেম আলী রানা, দীপক বড়ুয়া, নাসের রহমান, মিলন বনিক, রুনা তাসমিনা, লিপি বড়ুয়া, শিপ্রা দাশ, সিমলা চৌধুরী, সুসেন কান্তি দাশ ও সৌরভ শাখাওয়াত।। কিশোর গল্প পাঠ উৎসবের প্রতিটা গল্পই ছিল অসাধারণ। বৈরী আবহাওয়া সত্ত্বেও মিলনায়তনে দর্শক শ্রোতার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেককে দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে দেখা যায়। দর্শক শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধের মতো গল্প শুনছেন, কারো মধ্যে বাড়ি ফিরে যাবার তাগাদা ছিল না, কিংবা কাউকে বিরক্তবোধ বা অধৈর্য্য হতে দেখা যায় নি। আনজীর লিটন বলেন, ‘স্বকাল শিশু সাহিত্য সংসদ’ আজ একটা উৎসবের আয়োজন করে ফেলেছে। যাঁরা গল্প পাঠ করেছেন এবং যারা শুনেছেন সকলকে তিনি ধন্যবাদ জানান। এ ধরনের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। অনুষ্ঠানে পঠিত প্রতিটি গল্পে মানুষ, প্রাণী, প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে গল্পকাররা চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন। গল্পের পটভূমিতে বৈচিত্র্য আনতে পারলে পাঠককে ভালো গল্প উপহার দেয়া সম্ভব। নতুন ধারার, নতুন চিন্তার প্রতিফলন লেখায় থাকতে হবে। লেখালেখি নিয়ে তাঁর নিদের্শনা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উপস্থিত দর্শকদের নেপাল ও যুক্তরাজ্যের ২টি গল্পের কথা শোনান। উপস্থিত সকলে তুমুল করতালির মাধ্যমে তাঁকে অভিনন্দন জানান। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ও শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়ের ‘মহেশ’ গল্পগুলোর কথা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেন। প্রতিটি গল্পে একটা ম্যাসেজ থাকতে হবে যেটি পাঠককে বহুদূর নিয়ে যাবে। গল্পে থাকতে হবে উপমা, চিত্রকল্প এবং বহুত্ববাদ। তিনি দুঃখ করে বলেন, আমরা যারা লিখি আমরাই পড়ি, পাঠকের কাছে সে লেখা খুব কম যাচ্ছে। পরিশেষে ‘আমরা সেই লেখাটিই লিখি যে লেখাটি কেউ লেখে না’– এই বলে তাঁর বক্তব্যের ইতি টানেন। সভাপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আজ যে গল্পগুলো শুনলাম প্রতিটা গল্পই আমার কাছে ভালো লেগেছে, তিনি গল্পকারদের ধন্যবাদ জানান। তিনি আরো বলেন, আমরা সমাজ, প্রকৃতি ও মানুষ থেকে এখনো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই নি, এক একজন একেক ধরনের গল্প পড়তে ভালোবাসে, অভিভাবকদের শিশুদের হাতে গল্পের বই তুলে দেয়ার পরামর্শ দেন। শুরু থেকে শেষ পর্য্যন্ত প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্বকালের পরিচালক কবি ও শিশুসাহিত্যিক অরুণ শীল।