স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯ টায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে…রাজেউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। মরহুমের মেয়ের জামাই লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার জাহান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করছেন। স্ত্রী ও এক মেয়ে, জামাতাসহ স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন অধ্যাপক তোফায়েল। তোফায়েল আহমেদের নামাজে জানাযা আজ সকাল ১১টায় হাটহাজারীর মদনহাট হাই স্কুল মাঠে (ফতেহপুর) অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন চবি উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তোফায়েল আহমেদকে দাফন করা হবে বলে জানান তাঁর জামাতা।
১৯৫৪ সালের ১ মার্চ হাটহাজারী উপজেলার ফতেহপুরে জন্মগ্রহণ করেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি ফতেহাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৭৬ ও ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বি এ ও এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে, তিনি সোয়ানসির ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্টাডিজে এমএসসি (অর্থনীতি) ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন –চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার, উপ–উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান এবং উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন। এক শোকবার্তায় তাঁরা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। সাবেক এমপি মজহারুল হক শাহ চৌধুরী শোক প্রকাশ করেন এবং মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ছিলেন তোফায়েল আহমেদ। এ ছাড়া নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনেরও সদস্য ছিলেন। ২০০৬–২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠিত ‘স্থানীয় সরকার কমিশনের’ও সদস্য ছিলেন তিনি। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করার লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে গত ১৮ নভেম্বর স্থানীয় সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এ অধ্যাপকের নেতৃত্বে কাজ করেন সাত সদস্য। গত ২০ এপ্রিল তারা দুই খণ্ডের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ‘খ’ গ্রুপ লোকপ্রশাসন থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা তোফায়েল আহমেদ পরে যুক্তরাজ্যের ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের সোয়ানসি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ও রাজনৈতিক অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন। ১৯৮১ সালে কুমিল্লায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির অনুষদ সদস্য (শিক্ষক ও গবেষক) হিসেবে ১৪ বছর কাজ করে যোগ দেন চবির লোকপ্রশাসন বিভাগে। ২০০০ সালে তিনি অধ্যাপক হন। ১৯৯৬ থেকে সিভিল সোসাইটির সদস্য হিসেবে দেশে গণতন্ত্র, সুশাসন ও স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তোফায়েল আহমেদ স্থানীয় শাসন উপদেষ্টা হিসেবে ২০০৯ সাল থেকে ছয় বছর জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচিতে (ইউএনডিপি) কাজ করেন। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস ও দর্শন বিভাগেও অধ্যাপনা করেন। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) বোর্ড অব গভর্নরের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।