গণভবনে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস ২০২৩ উদযাপন অনুষ্ঠানে সারাদেশের স্থানীয় সরকারের তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের সাথে চট্টগ্রামের জনপ্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। গতকাল বেলা ১১টায় গণভবনের মাঠে সারাদেশের ৯ হাজারের মতো তৃণমূল পর্যায়ের স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় সরকারের তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলামসহ ১৬ উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন। এই সভায় চট্টগ্রাম থেকে বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, রাউজান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল এবং রাউজান উপজেলার নোয়াজিষপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সরোয়ার্দী সিকদার।
জনপ্রতিনিধিদের সভায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজকে বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে–তা বলে শেষ করা যাবে না বা লিখে শেষ করা যাবে না। পদ্মা সেতু করতে পারবে না, করতে দেবে না বলেছিল–আজকে পদ্মা সেতু হয়েছে, এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে হয়েছে, মেট্রোরেল হয়েছে, উড়াল সেতু হয়েছে, গভীর সমুদ্র বন্দর হয়েছে, কঙবাজার রেল লাইনসহ আইকনিক রেলস্টেশন হয়েছে, কোনটি হয়নি ? কোনটি বলে শেষ করা যাবে না।’ শুধু উপমা দিয়ে এইটুকু বলতে চাই-‘প্রবাস জীবন থেকে ভাইটি গ্রামে এসেছে–কিন্তু সে গ্রামটি চিনতে পারছে না, গ্রামে এতো উন্নয়ন হয়েছে। প্রবাস জীবন থেকে আর এক ভাই এসেছে, সে ঢাকা শহর–চট্টগ্রাম ঘুরছে, সে বলছে–আমি কি অন্য কোন দেশে এসেছি ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে প্রতিটি গ্রামে–গঞ্জে শহরে–রাজধানীতে উন্নয়ন করেছেন–তার বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। আপনাকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আগে গ্রামে যেখানে মঙ্গা ছিল, দুর্ভিক্ষ ছিল, খরা ছিল, মানুষ না খেয়ে থাকতো, সেখানে সামাজিক নিরাপত্তার বলয়ে যে উন্নয়ন হয়েছে–হাজারো–লাখো মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে দোয়া করছেন। আমরা স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা আজকে শপথ নিচ্ছি–আগামী নির্বাচনে আমরা আমাদের জান বাজি রেখে আবারো আপনাকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনবো।
রাউজান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল বলেন, আর আপনি যু্্্দ্ধাপরাধীদের বিচার করে রাউজানকে যুদ্ধাপরাধী মুক্ত করেছেন, এজন্য আপনাকে আবারো ধন্যবাদ। আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি এই কারণে–বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছেন, আর আপনি পরম মমতায়–দক্ষতায় পুরো দেশ গড়েছেন। গ্রাম বলে এখন আর কিছু নেই, গ্রাম এখন শহরের সকল উন্নত সুযোগ–সুবিধায় পাল্টে গেছে। আপনি বিদ্যুৎ দিয়েছেন, ব্রিজ দিয়েছেন, স্বাস্থ্য–শিক্ষার সকল উন্নত সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন। আপনি মাতৃ ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিক্ষার্থীদের উপ বৃক্তি, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ এমন কোনো ভাতা নেই যা আপনি দেননি। আমরা আপনার কর্মী–আমাদের কিছু দরকার নেই। আমাদের চাই শেখ হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী। মাননীয় নেত্রী আমি আপনার অনুমতি পেলে হাজার দশেক চশমা কিনে বিএনপির অফিসে অফিসে গিয়ে দিয়ে আসতে চাই। তারা যেন চমশাগুলো দিয়ে দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি উন্নয়ন করেছেন। আমার স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন। আমি আর কিছু চাই না, উত্তরে আর দক্ষিণে দুটি শিশুপার্ক চাই।
সভার শুরুতেই সর্বপ্রথম বক্তব্য রাখার জন্য সুযোগ পান রাউজান উপজেলার নোয়াজিষপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সরোয়ার্দী সিকদার। তিনি বলেন, আমাকে সভার শুরুতে এক নম্বরে বক্তব্য দিতে দিয়েছেন। আমি বলেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে বলেছিলেন-‘গ্রাম হবে শহর।’ আজকে সেটা বাস্তবায়িত হয়েছে। দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের আধুনিক উন্নত সুযোগ–সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত হয়েছে। আপনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশ এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমাদের রাউজান এক সময় সন্ত্রাসের জনপদ ছিল। এখন শান্তির জনপদে পরিণত হয়েছে। আপনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের তৃণমূলের উন্নয়ন দেখতে হলে রাউজানে আসতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাউজানের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে আপনাকে রাউজানে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
সাতকানিয়া পৌর সভার মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের আজাদীকে বলেন, জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে সারাদেশের স্থানীয় সরকারের তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা গণভবনে উপস্থিত ছিলেন। জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রেখেছেন। আমরা সারাদেশের তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা সকাল ১১টার আগেই গণভবনের মাঠে হাজির হয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেলা ১১টা ২০ মিনিটে সভাস্থলে আসেন। সভা একনাগাড়ে চলে বেলা ৩টা পর্যন্ত। এরপর আমরা এক সাথে লাঞ্চ করেছি।