কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরে জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত রাখা হয়নি। গতকাল বুধবার ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। বিবৃতিতে স্থানান্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই বলেও জানানো হয়।
দুই বছর আগে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার। তবে সাগরের ভেতরে জনমানবহীন ওই চরে আশ্রয় নিতে অনাগ্রহ থাকায় এতদিন তাদের সেখানে স্থানান্তর সম্ভব হয়নি। আগামী সপ্তাহে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়। খবর বিডিনিউজের।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটামুটি ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে ভাসানচরে নিয়ে রাখা হয়েছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দলকে ভাসানচরে পাঠানো হয়। ফেরার পর তাদের কথা শুনে রোহিঙ্গাদের একাংশ ভাসানচরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে বলে জানায় সরকারি কর্মকর্তারা। অবশ্য এক লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরে সরকারের যে পরিকল্পনা, সেটির সঙ্গে শুরু থেকে দূরত্ব রেখে চলেছে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।
জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্থানান্তরের বিষয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেন ‘প্রাসঙ্গিক, নির্ভুল এবং হালনাগাদ’ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ বরাবরই আহ্বান জানিয়ে এসেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতেও জাতিসংঘ এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করছে। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে যে ওই দ্বীপে শরণার্থীদের স্থানান্তর হবে স্বেচ্ছামূলক। জাতিসংঘ এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছে। ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং জীবিকার নিশ্চয়তা বিধানের পাশাপাশি দ্বীপ থেকে মূল ভূখণ্ডে চলাচলের স্বাধীনতা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
ভাসানচরে স্থানান্তর বিষয়ে আগে থেকে টেকনিক্যাল প্রোটেকশন এসেসমেন্ট করার প্রস্তাবও দিয়ে আসছে জাতিসংঘ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে জাতিসংঘ প্রায়োগিক এবং সুরক্ষা বিষয়ক মূল্যায়ন করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। জাতিসংঘ সরকারের ভাসানচর প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত হতে পারবে কি না, সেটা নির্ধারণে এই মূল্যায়নগুলো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।