স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে লঞ্চে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মো. হানিফ মাঝি। পথে চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী দুই লঞ্চের সংঘর্ষের প্রাণ হারান হতদরিদ্র এই জেলে। নদীর ঢেউ আর জালের টানে সারাজীবন লড়াই করে সংসার চালিয়েছেন হানিফ। তার এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। একটি দুর্ঘটনা অসহায় পরিবারটিকে অথই সাগরে ভাসিয়ে নিল। নিহত হানিফ মাঝি (৪২) উপজেলার আহাম্মদপুর ইউনিয়ন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদাবাদ গ্রামের মো. গেদু শনির ছেলে। বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী ‘অ্যাডভেঞ্চার–৯’ লঞ্চের সঙ্গে ঢাকামুখী ‘এমভি জাকির সম্রাট–৩’ লঞ্চের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজনের প্রাণ গেছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা বাবু লাল বৈদ্য। নিহতদের একজন হানিফ মাঝি; যিনি স্ত্রী রহিমা বেগমের চিকিৎসার জন্য সম্রাট–৩ লঞ্চে করে ঢাকার যাচ্ছিলেন বলে জানান স্বজনরা।গতকাল বিকালে হানিফের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, চার সন্তানের জনক হানিফ মাঝি মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সম্প্রতি তার স্ত্রী রহিমা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয় চিকিৎসায় কাজ না হওয়ায় ধারদেনা করে স্ত্রীকে ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বৃহস্পতিবার বিকালে স্ত্রীকে নিয়ে চরফ্যাশনের ঘোষেরহাট লঞ্চঘাট থেকে ‘এমভি জাকির সম্রাট–৩’ লঞ্চে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন হানিফ। রাত ২টার দিকে সন্তানরা খবর পান তাদের বাবা হানিফ আর নেই। বাবার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে কান্না থামছে না সন্তানদের। যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকা থেকে বরিশালগামী অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চ মেঘনা নদীতে জাকির সম্রাট–৩ লঞ্চকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে লঞ্চটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে অনেকেই নদীতে পড়ে যান। সংঘর্ষের পর অ্যাডভেঞ্চার–৯ দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। অপর লঞ্চটির বহু যাত্রীকে এমভি কর্ণফুলী–৯ নামের একটি লঞ্চ উদ্ধার করে; যাদের মধ্যে হানিফও ছিলেন। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা সদরঘাটে নেওয়ার পথে হানিফ মারা যান। এ খবর হানিফের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিকালে হানিফের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বসতঘরের সামনে মেয়ে আকলিমা ও ছেলে শামিম বসে আছেন। কিছুক্ষণ পর পর তাদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে চারপাশ। তারা বলেন, আমাদের মা অনেক দিন ধরে অসুস্থ। বাবাই সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী। ধারদেনা করে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলেন। মধ্যরাতে ফোনে শুনি বাবা দুর্ঘটনায় আহত। কিছুক্ষণ পর জানি আমার বাবা মারা গেছেন। আমরা দুই লঞ্চ চালকের বিচার চাই। হানিফের ভাই আক্তার বলেন, স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে যাওয়া মানুষটি শেষ পর্যন্ত লাশ হলেন। নদীর বুকে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষ শুধু দুটি লঞ্চের নয়, এটি একটি গরিব জেলে পরিবারের জীবনের সঙ্গে নিয়তির ভয়াবহ ঘটনা। নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবি করছি। চরফ্যাশনের দুলারহাট থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনায় হানিফ নামের একজনের নিহতের খবর পেয়েছি। তার পরিবারের সার্বিক খোঁজ খবর নেওয়া হবে।











