স্ত্রীর অধিকার পেতে এবার অনশন

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৪:৩৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীতে কয়েকদিন ধরে আলোচনায় থাকা ফারহানা ইয়াসমিন এবার অনশনে বসেছেন। স্ত্রীর অধিকার পেতে নগরীর নাসিরাবাদ হাউজিংয়ের ৫ নং রোডের ৯ নং বাড়ির সামনে তিনি গত রোববার রাত থেকে অনশন করছেন। গতকাল বিকালে সরেজমিনে গিয়ে ফারহানার সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, স্বামীর সঙ্গে তিনি সংসার করতে চান। কিন্তু তাকে গ্রহণ করছে না। এজন্য তিনি অনশনে বসেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন।

ফারহানা বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে অনেকদিন হচ্ছে। স্বামীকে নিয়েই আমার সব স্বপ্ন। আমার কাবিন লাগবে না, কোনো কিছু লাগবে না। আমি শুধু স্ত্রীর অধিকার চাই।

ফারহানা ইয়াসমিন যশোর জেলার শার্শা থানার যাদবপুর এলাকার মো. জিল্লুর রহমানের মেয়ে। থাকেন ঢাকায়। ঢাকায় আবদুল আহাদ মর্তুজা নামে একজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর কাজী অফিসে বিয়ে করেন। কিন্তু আহাদ মর্তুজার পরিবার মেনে না নেওয়ায় পারিবারিকভাবে আবার তাদের বিয়ে হয়। কিছুদিন পর বিচ্ছেদ হয়। ফারহানার দাবি অনুযায়ী, বিচ্ছেদের সময় তার কাছ থেকে জোরপূর্বক সাক্ষর নেওয়া হয়েছিল। এরপর আহাদ মর্তুজার সাথে তৃতীয়বারের মতো বিয়ে হয়। কাবিন ধরা হয় এক কোটি টাকা। তৃতীয়বার বিয়ের পরও স্ত্রীর অধিকার পাচ্ছিলেন না তিনি। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। উপায় না পেয়ে তাই তিনি গত শুক্রবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসেন এবং আহাদ মর্তুজার বাড়ির সামনে হাজির হন। সেখানে তাকে মারধর করা হয় উল্লেখ করে ফারহানা পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। স্বামী আহাদ মর্তুজা, শ্বশুর মর্তুজা সিদ্দিক চৌধুরী ও শাশুড়ি রহিমা বেগমকে আসামি করা হয়। তখন থানা থেকে ফোন করে শ্বশুর মর্তুজা সিদ্দিককে ডেকে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে পুত্রবধূর মামলায় গ্রেপ্তারও দেখানো হয়। আদালতে পাঠালে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একইসাথে বিচারক ফারহানাকে সেইফ হোমে (নিরাপদ হেফাজত) পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আদালত সূত্র জানায়, মর্তুজা সিদ্দিক মারসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কারাগারে পাঠানোর একদিন পর তিনি জামিন পেয়ে কারামুক্ত হন। অন্যদিকে আইনজীবীর মাধ্যমে সেইফ হোম থেকে বের হয়ে আহাদ মর্তুজাদের বাড়ির সামনে অবস্থান নেন ফারহানা।

থানায় করা মামলার এজাহারে ফারহানা উল্লেখ করেন, আব্দুল আহাদ মর্তুজার সাথে ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কাজী অফিসের মাধ্যমে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক রেজিস্ট্রি করে তার বিয়ে হয়। বাবা মর্তুজা সিদ্দিক চৌধুরী এই বিয়ে মেনে না নেওয়ায় ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পারিবারিকভাবে দ্বিতীয়বার বিয়ে হয়। পরে বাবামার চাপে আহাদ মর্তুজা ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে তালাক দেন। এ সময় জোরপূর্বক তার কাছ থেকে সাক্ষর নেওয়া হয়।

এজহারে বলা হয়, তালাকের পর আহাদ মর্তুজা নানা প্রলোভন দেখিয়ে এবং বাবামার পরামর্শে একই বছরের ১ জুলাই তৃতীয়বারের মতো তাকে ফের বিয়ে করেন। দেনমোহর ধরা হয় এক কোটি টাকা। এর কিছুদিন পর ঘরে তোলার কথা বললে ফের সমস্যা সৃষ্টি হয়। ঘরে তোলার কথা বলায় আহাদ মর্তুজা তাকে কটূক্তি করতে থাকেন। একপর্যায়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এজন্য তিনি শুক্রবার দুপুরে নাসিরাবাদের বাসার সামনে যান। সেখানে তাকে পথরোধ করে মারধর করা হয়। হত্যার উদ্দেশ্যে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয়। গলা চেপে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করা হয়। চিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

উল্লেখ্য, আহাদ মর্তুজারা সাতকানিয়ার বাসিন্দা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিয়ের প্রলোভনে কোচিং সেন্টারে ধর্ষণ, ঘুমের ওষুধ খেয়ে মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধগর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না