চট্টগ্রামে বাড়ছে স্ট্রোক রোগীর সংখ্যা। স্ট্রোক রোগের চিকিৎসায় চট্টগ্রামের বিশেষায়িত হাসপাতাল না থাকায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) নিউরোলজি বিভাগই একমাত্র ভরসা। বর্তমানে নিউরোলজি ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টায় রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। ফলে রোগী চাপ বেড়েছে। তবে বর্তমানে ওয়ার্ডে স্ট্রোক আক্রান্ত হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আসা রোগীদের থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি দেয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডে এখন পর্যন্ত ২০ জন রোগীকে রক্ত জমাট বাঁধাজনিত স্ট্রোকের থ্রম্বোলাইসিস দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ওয়ার্ডে প্রতি সপ্তাহে এপিলেপসি ক্লিনিকে খিঁচুনি রোগী এবং হেডেক ক্লিনিকে মাথাব্যথার রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া স্ট্রোক ক্লিনিকে স্ট্রোকে আক্রান্ত ভর্তিকৃত রোগীদের পরবর্তী ফলোআপে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের তথ্য মতে, গত ২০২৩ সালে ওয়ার্ডে স্ট্রোকে আক্রান্ত ভর্তি রোগী ছিলেন ৬ হাজার ৭৭৬ জন, চলতি ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫০০ জন। এরমধ্যে স্ট্রোক আক্রান্ত রোগী রয়েছে ৬ হাজার ৮৬৯ জন।
নিউরোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা বলছেন, ওয়ার্ডে অনুমোদিত শয্যা রয়েছে মাত্র ৩৩টি। এরমধ্যে রোগীর বাড়ার কারণে ওয়ার্ডে বেড বসানো হয়েছে ৮৫টি। বর্তমানে ওয়ার্ডের ভিতরে ও বাইরে মিলে গড়ে শতাধিক রোগী ভর্তি থাকছে। নিউরোলজি ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, ওয়ার্ডে বেড থাকুক, আর না থাকুক, আমাদের সপ্তাহে এখন ছয়দিন ২৪ ঘণ্টা ভর্তি নিতে হচ্ছে। ওয়ার্ডের ভিতরের বেড ও মেঝে ছাড়িয়ে এখন গেটের বাইরে সিঁড়ির পাশের করিডোরেও রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। রাতের বেলায় নারী চিকিৎসকদের সেখানে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ গেটে দায়িত্বরত আনসার থাকে, ওয়ার্ডের ভিতরে নিরাপত্তার জন্য। এছাড়া মেঝেতে রোগী থাকার কারণে নিয়মিত চিকিৎসা রাউন্ডে রোগীদের ফলোআপ করতেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বেগ পেতে হয়। এছাড়া গেটের বাইরে রোগীদের জরুরি প্রয়োজনের অঙিজেন দেয়াও যাচ্ছে না। এটিও একটি বড় সমস্যা।
চমেক হাসপাতাল নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. হাসানুজ্জামান দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে স্ট্রোক রোগের প্রকোপ বাড়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম মেডিকেলের নিউরোলজি ওয়ার্ডে সেবার মানও বেড়েছে। রোগীরা অনেক নতুন নতুন সেবা পাচ্ছে। এটি ঠিক আমাদের এখানে রোগীর চাপও বেশি। বৃহত্তর চট্টগ্রামের নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, কঙবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলার স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীদের জন্য একমাত্র ভরসা এই চট্টগ্রাম মেডিকেল। আমাদের সম্পদ সীমিত। এই সীমিত সম্পদের মধ্যেও আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ দিয়ে আসছি। ফলে মৃত্যুহারও কমেছে। তবে চট্টগ্রামে যদি স্ট্রোকের চিকিৎসায় একটি মানসম্মত বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলা সম্ভব হয়, এক্ষেত্রে চমেক হাসপাতালের ওপর চাপটাও কমে যাবে।