স্ক্র্যাপ করে বিক্রি হচ্ছে এলপিজির সিলিন্ডার!

লোহার উচ্চ দাম

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৮ এপ্রিল, ২০২২ at ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ

সারা দেশে বেড়ে গেছে রডের দাম। ফলে চাহিদা বেড়েছে রড তৈরির অন্যতম উপাদান স্ক্র্যাপেরও। আর এ সুযোগে অবৈধভাবে ভর্তুকির সিলিন্ডার কেটে স্ক্র্যাপ বানিয়ে বিভিন্ন রোলিং মিলে বিক্রি করছে সীতাকুণ্ডের বেশ কিছু স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী। এতে বাজারে সিলিন্ডারের সঙ্কটের পাশাপাশি এলপিজি সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।
জানা যায়, গত বছরের ১১ জুলাই ভাটিয়ারী ইউনিয়নের তুলাতলি এলাকায় কুসুম নামের এক ব্যবসায়ীর গোডাউনে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় প্রায় ১০ হাজার তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার, স্ক্র্যাপ সিলিন্ডার এবং খালি বোতল কেটে স্ক্র্যাপ বানানোর মালামাল উদ্ধার করা হয়। ওই সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কুসুম ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। অভিযানের পর কুসুম দীর্ঘদিন আড়ালে চলে গেলেও নতুন করে সেখানে অপর একটি সিন্ডিকেট চালিয়ে যাচ্ছে এ অবৈধ ব্যবসা। এর সঙ্গে খোকন, রানাসহ ভাটিয়ারির এক ইউপি সদস্যও জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় ডিপু করে নতুন নতুন এলপিজির সিলিন্ডার কিনে তা কেটে স্ক্র্যাপ বানিয়ে বিভিন্ন রড তৈরির কারখানায় সরবরাহ করছে তারা। এতে এলপিজি ভর্তুকির সিলিন্ডার বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকিতে পড়ছে। শুধু এই সিন্ডিকেটই না, গত এক বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অনেকেই চোরাইভাবে এলপিজি সিলিন্ডার স্ক্র্যাপ করে বিক্রি করছে। বিশেষ করে ফৌজদারহাট, বারআউলিয়া, মদনহাট, কদমরসুল এলাকায় বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভাটিয়ারী তুলাতলি বেড়িবাঁধ সংলগ্ন একটি গোডাউনে শত শত সিলিন্ডারের স্তূপ। ওয়ার্কশপে গ্যাসের মাধ্যমে সিলিন্ডারগুলো কেটে স্ক্র্যাপ করা হচ্ছে। এর আগে সিলিন্ডারের বাল্বগুলো খুলে রাখছে শ্রমিকরা। কারণ কাটা সিলিন্ডারের পাশাপাশি আলাদাভাবে বিক্রি হচ্ছে বাল্বগুলোও। কাটা সিলিন্ডারের মধ্যে লাফস, পদ্মা, কর্ণফুলী, বসুন্ধরাসহ অনেক ব্র্যান্ডের সিলিন্ডার দেখা গেছে। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ভাটিয়ারীর এক ইউপি সদস্য জানান, পুলিশসহ বিভিন্ন বিভাগকে ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা চালানো হচ্ছে। সেখানে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক জানান, সিলিন্ডার কেজি ৩৮ টাকা করে কিনছি। আমরা চট্টগ্রামের সাগরিকা থেকে বাল্ব ছাড়া কিনেছি। একটি খালি সিলিন্ডার ১২ কেজি থেকে সাড়ে ১২ কেজি হয়। ১২ কেজি হলে ৪৫০-৪৬০ টাকা দাম পড়ে। সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রতিকেজি স্ক্র্যাপ লোহার মূল্য ৬০-৬২ টাকার বেশি। একটি সিলিন্ডার কাটলে ৭০০ টাকার লোহা ও ৮০-১০০ টাকায় বাল্বটি বিক্রি হয়। এতে একটি সিলিন্ডারে ২০০ টাকার মত লাভ হয় সিন্ডিকেটের।
জানা যায়, এলপিজির ১২ কেজির একটি সিলিন্ডার তৈরিতে বিনিয়োগকারীদের খরচ হয় আড়াই হাজার টাকা। বাজার ধরার জন্য ভর্তুকি দিয়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় এসব সিলিন্ডার বিক্রি করা হয় ডিলার-ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে। সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক বাজারে লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে বাড়তে থাকে ইস্পাতের দাম। এ সুযোগে ভর্তুকির সিলিন্ডার স্ক্র্যাপ করে রোলিং মিলে বিক্রি করছে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট।
চট্টগ্রামে দায়িত্বরত এলপিজি কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, একটি সিলিন্ডার তৈরি করতে কোম্পানিগুলোর ২ হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়। ভবিষ্যতে লাভ করার আশায় কোম্পানিগুলো ভর্তুকিতে সিলিন্ডারগুলো বাজারে ছাড়ছে। বর্তমানে কোম্পানি থেকে নতুন সিলিন্ডার বাজারে দেওয়া হচ্ছে না। এখন পুরনো সিলিন্ডারগুলো স্ক্র্যাপ করা হলে বাজারে সিলিন্ডারের সঙ্কট তৈরি হবে। এলপিজি সেক্টরের বিনিয়োগকারীরা বলছেন, সিলিন্ডার স্ক্র্যাপ করার মাধ্যমে বাজারে সিলিন্ডারের সঙ্কট তৈরি করে এলপিজির দাম অস্থির করার চেষ্টা করছে অসাধু সিন্ডিকেট।
বিস্ফোরক অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, সিলিন্ডার কাটতেও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হয়। তারপরও অবৈধভাবে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার কাটছে একটি চক্র। এ ব্যাপারে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেব আমরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনির্বাচনের ট্রেন কারো জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে না : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধধর্ষণের বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি উদ্বোধন