স্কুল বয়সী রোহিঙ্গা মেয়েদের মাত্র ৩% শিক্ষার আওতায় : জরিপ

স্কুল বয়সী রোহিঙ্গা শিশুদের ৫২ শতাংশ মেয়ে

| বুধবার , ৫ নভেম্বর, ২০২৫ at ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে বসবাসরত স্কুল বয়সী রোহিঙ্গা মেয়েদের মাত্র ৩ শতাংশ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে বলে উঠে এসেছে এক জরিপে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন জাস্টিস ফর অলের ‘বার্মা টাস্ক ফোর্স’ এ জরিপ পরিচালনা করেছে। টাস্ক ফোর্স বলছে, স্কুল বয়সী রোহিঙ্গা শিশুদের ৫২ শতাংশ মেয়ে হলেও তাদের বেশিরভাগই শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য একটি সুসংহত, স্বীকৃত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা কাঠামো নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টাস্ক ফোর্সের প্রতিনিধিদল। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে এক হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন জাস্টিস ফর অলের প্রেসিডেন্ট ও বার্মা টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান আবদুল মালিক মুজাহিদ। খবর বিডিনিউজের।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ রোহিঙ্গাদের প্রতি যে পরিমাণ সহানুভূতি দেখিয়েছে, তা বিশ্বের আর কোনো দেশ দেখায়নি। এখন সময় এসেছে পরবর্তী সেতু নির্মাণের। একটি সুসংহত ও স্বীকৃত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, যেন রোহিঙ্গা শিশু, বিশেষ করে মেয়েরা তাদের ভবিষ্যৎ থেকে বঞ্চিত না হয়। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে গবেষণা ও সাম্প্রতিক মাঠ পরিদর্শনের ভিত্তিতে প্রতিনিধিদলটি একটি আনুষ্ঠানিক স্মারকলিপিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের সুপারিশ তুলে ধরেছে বলে আবদুল মালিক মুজাহিদ জানান।

তিনি বলেন, সেখানে তিনটি পদক্ষেপের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো রোহিঙ্গা শিক্ষার জন্য একটি একীভূত জাতীয় নীতিমালা নির্দেশনা জারি করা, একটি স্বীকৃত সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, যা উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের পথ উন্মুক্ত করবে। মার্কিন মুসলিম ত্রাণ সংস্থাগুলোকে শিক্ষা উদ্যোগে অবদান রাখার সুযোগ দেওয়া, যাতে বিপুল পরিমাণ দাতব্য সম্পদ ও দক্ষতা কাজে লাগানো যায়।

জাস্টিস ফর অল প্রস্তুত আছে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অংশীদারত্বে কাজ করতে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সম্প্রদায়ের ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি বার্ষিক দান রোহিঙ্গা শিক্ষাকে শক্তিশালী করতে কাজে লাগে এবং কোনো শিশুই যেন পিছিয়ে না থাকে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এক হাজার রোহিঙ্গা নারীর সাক্ষাৎকার, শিক্ষাবিদ ও প্রশাসকদের সঙ্গে পরামর্শ এবং একাধিক শিবিরে স্কুল পরিদর্শনের ওপর ভিত্তি করে তারা জরিপটি চালিয়েছে।

অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শিক্ষার ওপর বার্মা টাস্ক ফোর্সের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে শিক্ষার বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। রোহিঙ্গা শিক্ষার দায়িত্বে থাকা জাতিসংঘের শিশু তহবিলইউনিসেফ এবং সেইভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালএসসিআই ২০২৫ সালের জুন মাসে জানিয়েছে, তহবিল সংকটের কারণে তারা অনেক শিক্ষা কেন্দ্র বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে; যার প্রায় ৬ হাজার ৪০০টি শিক্ষা কেন্দ্র এবং ৩ লাখ শিশুর শিক্ষাজীবন এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৭৮৯টি শিক্ষা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে ২০২৫ সালের জুন থেকে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪২০ জন রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষার সুযোগ হারিয়েছে। এছাড়া এসব কেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় ৪ হাজার ৯১৪ জন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক কাজ হারিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গারা নিজেদের শিক্ষাব্যবস্থাকে কীভাবে দেখছেন তা বোঝার জন্য জাস্টিস ফর অল ২০২৪ সালের নভেম্বরডিসেম্বরে বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষার তথ্যকে আরো সমৃদ্ধ করতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে সংগঠনটির সাতজন কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের একটি প্রতিনিধিদল কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে সরেজমিন পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী রোহিঙ্গা নারী শরণার্থীদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেন, যারা প্রতিনিধিদলটির কাছে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের সাবেক চেয়ারম্যান নাদিন মানজা বলেন, কঙবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে সফরের সময় আমরা এমন পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করেছি যারা জানে, শিক্ষাই তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। বাংলাদেশের জন্য শিবিরে শিক্ষা প্রদান কেবল মানবিকতার কাজ নয়, এটি একটি কৌশলগত বিনিয়োগ। অশিক্ষিত প্রজন্ম নির্ভরতা ও অনিরাপত্তা বাড়াবে, কিন্তু শিক্ষিত প্রজন্ম শান্তি, স্থিতিশীলতা ও বাংলাদেশ ও বার্মা দুই দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে অবদান রাখতে পারে। প্রতিনিধিদলের সদস্য ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক মুখপাত্র রিচার্ড রিওচ বলেন, শিক্ষা হলো গণহত্যার ভয়াবহতার মধ্যে বন্দি তরুণদের পুনরুদ্ধারের জীবনরক্ষাকারী পথ। যেভাবে তাদের খাবার ও পানির প্রয়োজন, ঠিক তেমনই প্রয়োজন শিক্ষা থেকে পাওয়া মানসিক যত্ন ও দক্ষতা প্রশিক্ষণ। শিক্ষাই তাদের নতুন জীবনের পাসপোর্ট। রোহিঙ্গা শিক্ষক ও অভিভাবকদের সন্তানদের শিক্ষার প্রতি অঙ্গীকারই সেই দৃঢ় মনোবলের প্রতিফলন, যা গণহত্যাও নিভিয়ে দিতে পারেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিবন্ধন ও প্রতীক পেল এনসিপিসহ ৩ দল, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রাথমিকের সংগীত শিক্ষক পদ বাতিলের ব্যাখ্যায় যা বলছে সরকার