বিশ্বজুড়ে বৈশ্মিক অতিমারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর বাংলাদেশেও বন্ধ হয়ে যায় স্কুল কলেজসহ যাবতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ থাকার পর প্রায় ১৮ মাস পর সরকারি নির্দেশনায় সারাদেশে খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রায় এক সপ্তাহের প্রস্তুতির পর স্কুল খুললেও চট্টগ্রামে সচল হয়নি বিআরটিসির স্কুল বাস। শিক্ষার্থীদের পরিবহন সুবিধা দেওয়ার জন্য একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে ৫ লক্ষ টাকা করে অর্থ পেয়ে আসলেও স্কুল খোলার দিনে সরকারি পরিবহন পরিষেবাটি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক। এদিকে নতুন এসব বাস ২৬ মাসের মধ্যে সেবা দিয়েছে মাত্র দুইমাস। ২৪ মাস কোন সেবা দেওয়া ছাড়াই
অলস সময় ব্যয় করে আয়ুষ্কাল পার করেছে গাড়িগুলো।
স্কুল খোলার দিনে গাড়িগুলো চালু না করার বিষয়ে পরিষ্কার কোন বক্তব্য দিতে পারেনি বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (বিআরটিসি)। তবে বাস চালুর বিষয়ে গতকাল রোববার জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠক করেছেন বিআরটিসি কর্মকর্তারা। বৈঠক শেষে চলতি বুধবার থেকে ট্রায়াল হিসেবে চালু করা হবে বলে দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন বিআরটিসি চট্টগ্রাম বাসডিপোর ম্যানেজার মো. আবদুল লতিফ। তবে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ জানিয়েছেন, ‘আগামী শনিবার থেকে অফিসিয়ালি স্কুলবাসগুলো চালু হবে। বুধবার থেকে ট্রায়াল দেওয়ার বিষয়টি বিআরটিসির আভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত।’
জানা যায়, বিগত ২৬ মাসের মধ্যে ২৪ মাসই বসা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) ১০টি নতুন বাস। প্রথমে চালক সংকটের কারণে ৭ মাস বসে থাকার পর বাসগুলো চালু হয়। চালুর দু্ই মাসের মাথায় করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে আবারো বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ এসব বাস। অলস বসে থাকার কারণে আয়ুষ্কাল যেমনি কমছে, তেমনি অবচায়িত ক্ষতিও বাড়ছে।
এর আগে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৩ জুন ৭৩ আসনের ৫টি দ্বিতল ও ১৩ জুলাই ৪৫ আসনের পাঁচটি এক তলা বাস আসে চট্টগ্রাম বিআরটিসিতে। এরপর প্রাথমিক পর্যায়ে নগরীর ২নং গেট থেকে জিইসি-টাইগারপাস হয়ে আগ্রাবাদ এবং ২নং গেট হতে চকবাজার-কোতোয়ালী- নিউমার্কেট-টাইগারপাস হয়ে আগ্রাবাদ দুটি রুটে বাস সার্ভিস চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হলেও চালক সংকটের কারণে বাস সার্ভিস চালু বিলম্বিত হয়। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত বাসগুলো আসলেও চালক ও পরিচালন ব্যয় নির্বাহের জন্য কোনো নির্দেশনা না থাকায় চট্টগ্রাম বাস ডিপো শিক্ষার্থীদের জন্য সার্ভিসটি চালু করতে পারেনি বলে জানানো হয়।
পরবর্তীতে গত বছরের জানুয়ারিতে একতলা বাসগুলোর পরিবর্তে আরো ৫টি দ্বিতল বাস যুক্ত হয় শিক্ষার্থীদের জন্য বহরে। এরপর জেলা প্রশাসন বাসগুলো পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের জন্য একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হন। এরপর গাড়িগুলো পরিচালনার জন্য ব্রান্ডিং চার্জ হিসেবে মাসে ৫ লাখ টাকা করে দিয়ে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের জন্য ১০টি ডাবল ড্রেকার বাস চালু হয়।
এদিকে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব শুরু হলে গত বছরের ১৭মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। এতে বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের জন্য বিআরটিসির বাস সার্ভিস। এরপর থেকে বাসগুলো নগরীর বালুচড়া বিআরটিসির বাসডিপোতে অলস পড়ে রয়েছে। এতোদিন সাধারণ ছুটি উঠে গেলেও স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় বাসগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু গতকাল রোববার প্রায় দেড় বছর পর স্কুল খুললেও বাসগুলো ছাড়েনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসি চট্টগ্রাম বাস ডিপোর ম্যানেজার মো. আবদুল লতিফ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘স্কুল খুললেও গাড়িগুলো দীর্ঘদিন বসে থাকায় কিছু মেরামত করার সময় লেগেছে। এজন্য স্কুল খোলার প্রথম দিনে স্কুলবাসগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে চালক হেলপার নিয়ে কিছুটা সমস্যাও রয়েছে বলে জানান তিনি।’












