সৌরভের ছুরি দিয়েই আঘাত করা হয় ইভানকে

চেরাগীর খুনে আরেকজন গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১১ মে, ২০২২ at ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

নগরীর চেরাগী পাহাড় এলাকায় ছুরিকাঘাতে কিশোর আসকার বিন তারেক ওরফে ইভান খুনের ঘটনায় প্রধান দুই আসামির একজন সৌরভ দাশকে (১৭) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সৌরভের ছুরি দিয়েই কিশোর ইভানকে আঘাত করা হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। প্রথমবার ছুরিকাঘাত করেছিল সৌরভের সহযোগী মোহান।

গতকাল মঙ্গলবার ভোরে লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর আমিরাবাদ মজুমদার পাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। সৌরভের বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার বরমা গ্রামে। নগরীর রাজাপুকুর লেইনের শাহনেওয়াজের বিল্ডিংয়ের কৃষ্ণ দাসের ছেলে সে। নগরীর একটি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র বলে পুলিশ জানিয়েছে। সৌরভ লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদে তার এক বন্ধুর বাড়িতে লুকিয়েছিল জানিয়ে কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবির আজাদীকে জানান, এ নিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত এজাহারনামীয় শোভনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে ২৩ এপ্রিল রাতে মামলার ১ নম্বর আসামি শোভন দেবকে, ২৭ এপ্রিল রাতে আরেক আসামি প্রিয়ম বিশ্বাসকে সিআরবি সাত রাস্তার মাথা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওসি বলেন, সৌরভের নাম ইভানের বাবার করা মামলায় ছিল না। কিন্তু ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। অনুসন্ধানে ও পুলিশি তদন্তে জানা গেছে, যে দুটি গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়েছে তাদের মধ্যে সাব্বির গ্রুপের নিহত ইভান ছিল বদরাগী ও বেপরোয়া। অন্যদিকে শৈবাল গ্রুপের ধ্রুব, শচীন, মোহান ও সৌরভ নৃশংসতার জন্য কুখ্যাত। ইভানের কারণেই সংঘর্ষের সূত্রপাত বলে পুলিশের তদন্তে এসেছে। ২১ এপ্রিল কাজির দেউড়ি অবদান হোটেলে ধ্রুবকে মারধর করা এবং চেয়ার ছুড়ে মেরেছিল ইভান। পরদিন ২২ এপ্রিল সেন্টমেরিস স্কুলের সামনে ইভানের বন্ধু অমিতকে যখন শৈবাল গ্রুপের ছেলেরা মারধর করে এবং মাথা ফাটিয়ে দেয়, তখন ইভান এসে বলে, ‘তুই হাসপাতালে যা, এরপর থানায় যা, … পুতদের আমি দেখে নিচ্ছি’। এ কথা বলেই সে তার সঙ্গীদের নিয়ে আন্দরকিল্লা এবং পরে রাজাপুকুর লেইন দিয়ে চেরাগী এলাকায় এসে ধ্রুব, শোভনদের দেখতে পায়।

তাদের মধ্যে মারামারির এক পর্যায়ে ইভান ছুরিকাঘাত করে শোভনকে। এ সময় শোভন ইভানকে লাথি মেরে চিৎকার শুরু করলে তার পক্ষের লোকজন এগিয়ে আসে। এরপর সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে। উভয় গ্রুপ ছুরি হাতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তবে শৈবাল গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বেশি দেখে ইভানের সাথে থাকা ছেলেরা পালিয়ে যায়। ইভান একা হয়ে পড়ে। এ সময় গ্রেপ্তারকৃত প্রিয়ম ও রুবেল দত্ত ইভানকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। মোহান ও সৌরভ ছুরিকাঘাত করে।
পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সৌরভ প্রথম দিকে ভাবতে পারেনি পুলিশ তার পেছনে লেগেছে। ইভানের বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ তারেক বাদী হয়ে যে মামলা করেছে সেখানে তার নাম না দেখে সে আশ্বস্ত হয়। কিন্তু পরে বুঝতে পারে ঘটনাস্থলে সিসিটিভি আছে।

তখন সে পালিয়ে প্রথমে ফেনী সদর এলাকায় চলে যায়। ফুটেজ দেখে পুলিশ তাকে চিহ্নিত করে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে অনুসরণ করতে থাকে। ফেনী থেকে সৌরভ পরশুরামে এসে কিছুদিন অবস্থান করে। এরপর চলে যায় বান্দরবান। সেখান থেকে লোহাগাড়ায় এসে এক বন্ধুর বাড়িতে অবস্থান নেয়ার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাকিবের করোনা, ছিটকে গেলেন চট্টগ্রাম টেস্ট থেকে
পরবর্তী নিবন্ধকোকেন মামলায় আরো একজনের সাক্ষ্য