সৌদি রিয়াল দেওয়ার নামে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে উধাও, লোহাগাড়ায় গ্রেফতার ৪

সাতকানিয়া-লোহাগাড়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২ জানুয়ারি, ২০২৫ at ২:৪৭ অপরাহ্ণ

প্রতারণার অভিনব কৌশলে দেশে বেড়ে চলেছে নানা ধরনের প্রতারণা ও ছিনতাই। প্রতারণার নিত্যনতুন পন্থা অবলম্বন করে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে একটি ভয়ংকর অপরাধী চক্র।

বর্তমানে শয়তানের নিঃশ্বাস নামে রাসায়নিকভাবে স্কোপোলামিন নামে পরিচিত একটি হেলুসিনেটিক ড্রাগ স্কোপোলামিন একটি প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত ট্রোপেন অ্যালকালয়েড এবং অ্যান্টিকোলিনার্জিক ড্রাগের মাধ্যমে মানুষের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়ার একটি পন্থা দেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এ পন্থায় একজন প্রতারক কিংবা ছিনতাইকারী ভুক্তভোগীকে চাইলেই কাবু করে নিজের ইশারায় নাচাতে পারেন। প্রতারক যে নির্দেশনাই দেবেন, তা-ই অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন সেই নিরীহ ভুক্তভোগী। বিষয়টি জাদুটোনার মতোই কাজ করে।

তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায়, সৌদি রিয়াল বিক্রির কথা বলে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর সংঘবদ্ধ চক্রের চার প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে লোহাগাড়া থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার সদরদী এলাকার মো. সরোয়ার ফকির (৫৪), সোহেল বেগ (৩০), কামাল শেখ (৩৪) ও শওকত খান (৬০)।

বুধবার (১ জানুয়ারি) বিকেল আনুমানিক ৪ টার দিকে উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের পুরাতন বিওসি গোলাম আলী সিকদার পাড়া এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর এলাকার তৌহিদুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, গ্রেফতারকৃত সরওয়ার ফকির আমার বাবার সঙ্গে দেখা করেন কিছু জায়গা ক্রয়ের কথা বলে।

কথায় কথায় আমার বাবা আসামিকে জানান কিছুদিনের মধ্যে পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব যাবেন। সেটা শুনে সরওয়ার ফকির আমার বাবাকে বলে তার কাছে পাঁচ লাখ টাকার সৌদি রিয়াল আছে, যা সে বিক্রি করবে, তখন আমার বাবা আমার সঙ্গে আসামিকে কথা বলতে বলেন। কারণ তিনি সৌদি রিয়াল চেনেন না।

আমার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে টাকা নিয়ে লোহাগাড়ার বটতলী স্টেশনের মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে আসতে বলেন। আমি একটি লাল শপিং ব্যাগে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে গত ৩০শে ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে দাঁড়ালে মো. সরওয়ার ফকির ও সোহেল বেগ আমার সঙ্গে দেখা করে।

আমার সাথে কৌশল বিনিময় করলে তাদের দেওয়া কোনো হেলুসিনেটিক ড্রাগের প্রভাবে আমি তাদের কথামতো চলতে থাকি। তারা আমার হাত থেকে টাকার ব্যাগটা নিয়ে আমাকে জানায়, আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমরা সৌদি রিয়াল নিয়ে আসি। এরপর তারা লাপাত্তা হয়ে যায়। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে বারবার কল করার চেষ্টা করলে মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাই। তখন বুঝতে পারি প্রতারক চক্রটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে।

লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান দৈনিক আজাদীক বলেন, ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী তৌহিদুর রহমান থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তারপর সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে প্রতারকদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়।

ভিডিও দেখে এলাকাবাসী জানান, প্রতারক চক্রের সদস্যরা লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ইউনিয়নের পুরান বিওসি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকে। স্থানীয়দের সহায়তায় প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাঁদের কাছ থেকে ৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে তৌহিদুর বাদী হয়ে গ্রেপ্তার চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করে লোহাগাড়া থানায় একটি প্রতারণার মামলা করেন। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙামাটিতে যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করল পুলিশ
পরবর্তী নিবন্ধনগরীতে মোটরসাইকেলসহ চোর চক্রের ১ জন গ্রেফতার