অনেক কিছু অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করতে আসা আর্জেন্টিনা শুরুতেই হলো অঘটনের শিকার। টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত থেকে আকাশে উড়ছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু মাটিতে নামতে বেশিক্ষণ লাগল না। যেন একই মুদ্রার অপর পিঠ দেখল স্কালোনির দল। গতকাল মঙ্গলবার কাতার বিশ্বকাপের ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচে লুসাইল স্টেডিয়ামে র্যাংকিংয়ের তিনে থাকা আর্জেন্টিনাকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে ৫১তম স্থানে থাকা সৌদি আরব। আলবেসিলেস্তেদের বিপক্ষে এটিই প্রথম জয় দলটির। একইসঙ্গে আর্জেন্টিনার টানা ৩৬ ম্যাচের অপরাজিত দৌড় থামিয়ে দেয় তারা। এর আগে চারবারের দেখায় ২ ম্যাচ হার ও ২ ম্যাচে ড্র করে সৌদি আরব।
এ নিয়ে ৬বার প্রথম ম্যাচে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করতে হলো দুইবারের চ্যাম্পিয়নদের। শুধু তাই নয় ১৯৭৪ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দুই গোল হজম করল। তারকায় ঠাসা এবং ফেভারিটের তকমা নিয়ে আসা আর্জেন্টিনা প্রথম বাধাটা সহজে উৎরে যাবে তেমনটাই ধারণা ছিল সবার। কিন্তু ফুটবল যে বিস্ময়ে ভরা। শক্তি, সামর্থ্য আর পরিসংখ্যান সব বিচারে পিছিয়ে থাকা সৌদি আরবে আটকে গেল আর্জেন্টিনার জয়রথ। মাত্র পাঁচ মিনিটে বাজিমাতে বিশ্বকে অবাক করে দিল এশিয়ার দল সৌদি আরব।
ম্যাচ শুরুর পর দ্বিতীয় মিনিটেই গোলের জন্য প্রথম শট নিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু মেসির সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন সৌদি গোল রক্ষক মোহামেদ আল-ওয়াইস। দশম মিনিটে স্পট কিকে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন মেসি। কর্নারের সময় ডি-বঙে সৌদি আরবের একজন ডিফেন্ডার ফাউল করে আর্জেন্টিনার এক স্ট্রাইকারকে। ভিএআর দেখে পেনাল্টি দিয়েছিলেন রেফারি। গড়ানো শটে পোস্ট ঘেঁষে বল জালে পাঠান আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। বিশ্বকাপে এটি তার সপ্তম গোল। এই নিয়ে সবশেষ ৫ ম্যাচে মেসির গোল হলো ১১টি। জাতীয় দলের হয়ে সব মিলিয়ে ৯২টি।
শুরুতেই পিছিয়ে পড়া সৌদি আরবকে একের পর এক আক্রমণে কোণঠাসা করে রাখে মেসি-মার্টিনেসরা। ২২ মিনিটে আবার জালে বল পাঠান মেসি। তবে তিনি নিজেই অফসাইডে থাকায় গোল বাতিল হয়ে যায়। পাঁচ মিনিট পর আবার জালে বল পাঠান মার্তিনেস। এবার ভিএআরের সহায়তা নিয়ে অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি। অফসাইডের ফাঁদ কেটে বের হতেই পারল না আর্জেন্টিনা। ৩৫ মিনিটে আবার জালে বল পাঠান মার্তিনেস। এবার অবশ্য আগেভাগেই পতাকা তোলেন লাইন্সম্যান। এরপর প্রথমার্ধে আর জালের দেখা পায়নি আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকাররা।
প্রথমার্ধে বল দখল, গোলে শট সবদিক থেকে অনেক এগিয়ে ছিল আজেন্টিনা। শুধু তাই নয় প্রথমার্ধে একটি শটও নিতে পারেনি সৌদি আরব। তবে দ্বিতীয়ার্ধে গতিময় ফুটবলে বাজিমাত করে সৌদি আরব। খেলার ৪৮ মিনিটে সমতা ফেরায় সৌদি। ডি-বঙে বল পেয়ে আড়াআড়ি শট নেন সালেহ আল শেহরি। স্লেডিং করেও রক্ষা করতে পারেননি রোমেরো। তার পায়ে লেগে বল জড়ায় জালে। খেলায় ফিরে ১-১ সমতা।
সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই খেলার ৫৩ মিনিটে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় সৌদি আরব। পিছিয়ে পড়া আর্জেন্টিনা এরপর গোল পরিশোধে মরিয়া হয়ে উঠে। একের পর এক আক্রমণ করে সৌদি আরবের রক্ষণভাগে বেশ চাপ সৃষ্টি করলেও গোলের দেখা পচ্ছিল না আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকাররা। দুই প্রান্ত দিয়ে ডি মারিয়া এবং মার্টিনেসকে দিয়ে আক্রমন শানানোর চেষ্টা করে আর্জেন্টিনা কোচ। ৬৩ মিনিটে সমতা ফেরানোর দারুণ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি মার্তিনেস। খেলার শেষ বাঁশি বাজার সময় যতই ঘনিয়ে আসছিল ততই যেন আক্রমণের ধার বাড়াচ্ছিল আর্জেন্টিনা।
কিন্তু কোনো না কোনোভাবে সেগুলো ঠেকিয়ে দেয় সৌদি গোল রক্ষক এবং তাদের রক্ষণভাগ। অতিরিক্ত সময়ের দশম মিনিটে আরো একটি সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা সমতা ফেরানোর। কিন্তু হুলিয়ান আলভারেসের সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয় সৌদি গোলরক্ষকের হাতে। অবিশ্বাস্য এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে এশিয়ার দল সৌদি আরব। ৩৬ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসানের অভিযানে এসে প্রথম ম্যাচেই ধাক্কা খেল আর্জেন্টিনা।