মেসিতে শুরু। এমবাপেতে শেষ। মাঝে জোড়া গোল রোনালদোর। পেনাল্টি ফস্কালেন নেইমার। আরও পাঁচটি গোল হল বটে, তবে যেখানে এই চার তারকা মাঠে সেখানে অন্য কার দিকেই বা চোখ যায়। ৯ গোলের দুরন্ত ম্যাচের সাক্ষী থাকল ফুটবল বিশ্ব। তবে খেলার হার–জিতকে সাইডলাইনের বাইরে সরিয়ে এই ম্যাচ দেখিয়ে দিল ফুটবলের জয়। সৌদি আরবের দুই ক্লাব আল নাসের ও আল হিলালের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া দল রিয়াদ অল স্টার্স একাদশের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে ৫–৪ গোলে জিতেছে পিএসজি। রিয়াদের কিং ফাহাদ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে গতকাল রাতে এ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। রিয়াদ সেশন কাপ নামের ম্যাচটি শুরুর আগে পিএসজির চেয়ারম্যান নাসের আল–খেলাইফির সঙ্গে মাঠে দেখা যায় বলিউড কিংবদন্তি অমিতাভ বচ্চনকে।
অতিথি হয়ে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। মাঠে দু’দলের ফুটবলারদের সঙ্গে হাত মেলালেন। মেসি ও রোনালদোর সঙ্গে হাত মেলানোর সময় তাকে একটু বেশিই উত্তেজিত বলে মনে হচ্ছিল। খেলার অনেক আগে থেকেই ছিল উন্মাদনা। মাঠ ছিল কানায় কানায় ভর্তি। খেলায় অবশ্য কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়লেন না। ফিফা বিশ্বকাপে যেখানে শেষ করেছিলেন, ঠিক সেখানেই শুরু করলেন মেসি। ৩ মিনিটের মাথায় গোল করে ফেললেন তিনি। বক্সের বাইরে থেকে নেইমারের ঠিকানা লেখা পাসে সৌদির জাতীয় দলের গোলরক্ষক আল–ওয়াইসকে আরও এক বার পরাস্ত করলেন মেসি।
খেলায় দাপট বেশি দেখাচ্ছিল পিএসজি। ১৭ মিনিটের মাথায় সহজ সুযোগ নষ্ট করেন নেইমার। দু’মিনিট পরেই দেখা গেল মেসি–এমবাপে যুগলবন্দি। মেসির পাস থেকে গোল করেন এমবাপে। কিন্তু অফসাইডের কারণে সেই গোল বাতিল হয়। ৩৪ মিনিটের মাথায় সমতা ফেরায় সৌদি। বক্সের মধ্যে পিএসজি গোলরক্ষক নাভাস ফাউল করেন রোনালদোকে। পেনাল্টি থেকে গোল করেন রোনালদো। পেনাল্টি নেওয়ার সময় সেই পুরনো দিনের ঝলক দেখা গেল।
চার মিনিট পরে ১০ জনে হয়ে যায় পিএসজি। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন জুয়ান বার্নেট। তাতে অবশ্য চাপে পড়েনি প্যারিসের ক্লাব। ৪৩ মিনিটের মাথায় এমবাপের ক্রস থেকে দ্বিতীয় গোল করেন মারকুইনোস। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে নেইমারকে বক্সে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় পিএসজি। কিন্তু নেইমারের দুর্বল শট বাঁচিয়ে দেন আল–ওয়াইসি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে নিজের দ্বিতীয় গোলে আবার সমতা টানেন রোনালদো। শুরুতে তার হেড পোস্টে লেগে ফেরে, বল ক্লিয়ার করার সুযোগ পেয়েও পারেনি পিএসজি, ছয় গজ বক্সের ভেতর থেকে বাঁ পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন আন্তর্জাতিক ফুটবলের রেকর্ড গোলদাতা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে এমবাপের ক্রস থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন র্যামোস। পেন্ডুলামের মতো খেলা দুলছিল। ৫৭ মিনিটের মাথায় আবার সমতা ফেরায় সৌদি অলস্টার। দক্ষিণ কোরিয়ার জাং এ বার গোল করেন। কিন্তু সৌদির ক্লাবের আনন্দ বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ২ মিনিট পরে বক্সের মধ্যে মেসির শটে হাত লাগিয়ে পেনাল্টি দেন সৌদির ডিফেন্ডার। এ বার পেনাল্টি নিতে যান এমবাপে।
বিশ্বকাপের ফাইনালে তিনটি পেনাল্টিতেই গোল করেছিলেন তিনি। এ বারও করেন। ৬০ মিনিটের পরে মেসি, এমবাপে, রোনালদো ও নেইমারকে তুলে নেওয়া হয়। বোঝাই যাচ্ছিল, দলের প্রধান ফুটবলারদের নিয়ে বেশি ঝুঁকি নিতে চাননি কোচেরা। ৭৭ মিনিটের মাথায় পিএসজির হয়ে আরও একটি গোল করেন হুগো একিটিকে। ১০ জনে প্রায় আধ ঘণ্টা খেলেও ম্যাচ জিতল পিএসজি। সেই সঙ্গে জিতল ফুটবল। ইতিহাসের সাক্ষী থাকলেন হাজার হাজার দর্শক।












