সৌদির টিকেট পেয়ে স্বস্তি বিমানও ফ্লাইট বাড়িয়েছে

| শুক্রবার , ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ

মহামারীকালে যারা সৌদি আরবে কর্মস্থলে ফিরতে পারছিলেন না, তাদের কয়েক দিনের অপেক্ষা আর বিক্ষোভের পর টিকেট বিক্রি শুরু করেছে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স; বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও আরও দুটি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার পর থেকে কারওয়ানবাজারের হোটেল সোনারগাঁওয়ের অফিস থেকে টিকেট ছাড়া শুরু করে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স। বহু প্রত্যাশিত টিকেট হাতে পাওয়ার পর রেজাউল করিম নামে একজন বলেন, সৌদি আরব থেকে তিনি দেশে এসেছিলেন মার্চের ১২ তারিখ। দুই মাস দেশে থাকার পর চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভাইরাস সঙ্কটে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আটকা পড়েন। তিনি বলেন, ২২০০ রিয়াল খরচ করে আপডাউন টিকেট কিনে এসেছিলাম। আমার টিকেটের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এখন কোনো খরচ ছাড়াই তারা টিকেটের মেয়াদ বাড়িয়েছে। আগামী ২৬ তারিখ রাতে আমি যাত্রা করব। খবর বিডিনিউজের।
রেজাউল নামে এক প্রবাসী আক্ষেপ করে বলেন, তিনদিন অপেক্ষার পর টিকেট পেলাম। এখন আর বাড়ি যাওয়ার সুযোগ নেই। করোনা টেস্ট করে রিপোর্ট নিয়ে ঢাকার একটি হোটেলে থাকার পর সেখান থেকেই রওনা হতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবে ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় কাজ করেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে যে এক হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে, তার মধ্যে ৪০১ কোটি ৫১ লাখ ডলারই সৌদি প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন।
করোনাভাইরাস মহামারীকালে সৌদি আরব প্রবাসী যারা দেশে এসেছিলেন, দেশটির সরকার বিমান চলাচল পুনরায় শুরু করলেও বাংলাদেশ থেকে যাওয়ায় দেখা দেয় বিপত্তি। সৌদি আরবের অনুমতি না মেলায় সেদেশে নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট পুনরায় চালু করতে পারেনি বিমান। ফলে সৌদিতে কর্মরত অনেক বাংলাদেশি বিমানের টিকেট কেটে রেখেও যেতে পারছিলেন না। অন্যদিকে ফ্লাইট কম থাকায় সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সও এত যাত্রীর চাপ নিতে পারছিল না। এই পরিস্থিতিতে সৌদি প্রবাসী কর্মীরা নামেন বিক্ষোভে। তারা বিমান ও সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স অফিসের সামনে দুদিন বিক্ষোভের পর গত বুধবার প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনেও বিক্ষোভ করেন। পরে রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এ আব্দুল মোমেন জানান, সৌদি আরব সরকার ভিসা ও ইকামার (ওয়ার্ক পারমিট) মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে নিয়মিত ফ্লাইট চালুর অনুমতি দিয়েছে।
এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও দুটি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার কথা জানায় বুধবার রাতে। ১৬ ও ১৭ মার্চ জেদ্দা ও রিয়াদের বিমানের রিটার্ন টিকেটধারীদের জন্য ওই বিশেষ ফ্লাইট চালানো হবে জানিয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর তাদের বুকিংয়ের জন্য বিমানের সেলস অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়। ওই দুটি ফ্লাইটের পর আরও দুটি বিশেষ ফ্লাইটে প্রাবাসীদের সৌদি পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন বলেন, ১৮-২০ মার্চের জেদ্দা এবং ১৮ ও ১৯ মার্চের রিয়াদের ফ্লাইটের রিটার্ন টিকেটধারী যাত্রীদের জন্য এ দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর রিয়াদে এবং ৩০ সেপ্টেম্বর জেদ্দায় এ দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান। বুকিংয়ের জন্য রিটার্ন টিকেটধারীদের ২৫-২৬ সেপ্টেম্বর বিমানের সেলস অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
মোকাব্বির বলেন, বুকিং হবে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে। নতুন ফ্লাইট অনুমোদন সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে অন্য যাত্রীদেরও বুকিং এর জন্য অবহিত করা হবে। তাই অন্য তারিখের যাত্রীদের এখনই অযথা কাউন্টারে ভিড় না করতে অনুরোধ করছি।
এদিকে বুধবার রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুখবর দেওয়ার পর গতকাল সকালেই কারওয়ানবাজারে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন সৌদি ফিরতে আগ্রহীরা। দুপুরে থেকে দীর্ঘ প্রতিক্ষীত টিকেট তারা হাতে পেতে শুরু করেন। টিকেট পাওয়া ‘সৌভাগ্যবানদের’ একজন খোরশেদ আলম বলেন, এই টিকেটের জন্য তাকে চার দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমি যাওয়ার জন্য বিজনেস ক্লাসের টিকেট কেটে রেখেছিলাম। সৌদি এয়ারলাইন্স সেটি পরিবর্তন করে এখন ২৮ তারিখের ইকনোমি টিকেট দিয়েছে।
তিনি বলেন, আটমাস আগে দেশে এসে মহামারীর মধ্যে আটকা পড়ায় ‘খুব কষ্টে’ দিন পার করতে হয়েছে। এতদিনের জন্য তো প্রস্তুতি ছিল না। আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে চলতে হয়েছে। এখন সেখানে গিয়ে এই ধারের টাকা শোধ করব। মিজানুর রহমান নামের আরেক প্রবাসী বলেন, অনেক সাধনার পর সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ পেলাম ২৯ তারিখ সকালে। এই কয়দিন দেশে থেকে অনেক অনিশ্চয়তা আর যন্ত্রণায় কাটাতে হয়েছে।
সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের সিটিও রিজার্ভেশন শাখার ম্যানেজার জাহিদুল আবেদিন বলেন, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। যাত্রীরা সৌদিতে যেতে পারছেন। তবে এখন আমরা নতুন কোনো টিকিট দেব না। যেসব টিকিট আগে কাটা ছিল, কেবল সেগুলো রিইস্যু করব। বিমানের রিটার্ন টিকেট কেটে দেশে এসে যারা আটকা পড়েছেন, তারাও সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলেন মতিঝিলের বলাকা কার্যালয়ের সামনে। বিমানের একজন কর্মকর্তা বলেন, ১৬ ও ১৭ মার্চের জেদ্দা ও রিয়াদের টিকেট কাটা ছিল এদের। এর মধ্যে ২৬০ জন ২৬ সেপ্টেম্বর বিশেষ ফ্লাইটে জেদ্দা এবং এবং ৪১৯ জন ২৭ সেপ্টেম্বর রিয়াদ যাবেন। তারা এখন বুকিং দিতে এসেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২০৮ কেজি ওজন আর অনেক অসুখ নিয়েও করোনা জয়
পরবর্তী নিবন্ধআবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার দৈনিক আজাদী এবং গণতন্ত্র শীর্ষক সেমিনার আজ