সোমালি জলদস্যুদের পুনরুত্থান নৌ বাণিজ্য সংকটে নতুন মাত্রা

| শুক্রবার , ২২ মার্চ, ২০২৪ at ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

পশ্চিম ভারত মহাসাগরে স্পিড বোটে করে এক ডজনেরও বেশি সোমালি জলদস্যু যখন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে ধাওয়া করেছিল, নাবিকরা তখন সতর্ক সংকেত পাঠিয়েছিলেন। জরুরি হটলাইনে কলও করেছিলেন। কিন্তু সময়মতো তাদের কাছে কেউ পৌঁছায়নি। ফলে জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লায় উঠে পড়ে ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং জাহাজের ক্যাপ্টেন ও সেকেন্ড অফিসারকে জিম্মি করে। জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান জাহাজ মালিকদের কাছে একটি অডিও বার্তায় এমনটিই জানিয়েছিলেন। জলদস্যুরা নাবিকদের ফোন জব্দ করার আগে একটি বার্তা রেকর্ড করেছিলেন আতিকুল্লাহ। তাতে তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত কারও কোনও ক্ষতি হয়নি।’ খবর বিডিনিউজের।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নৌবাহিনী মনে করেছিল তারা সোমালি জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে এনেছে। কিন্তু আদতে জলদস্যুতার পুনরুত্থানের সর্বশেষ শিকার হয়েছে বাংলাদেশি জাহাজ আবদুল্লাহ। লোহিত সাগরসহ আশেপাশের জলপথগুলোতে যখন ইয়েমেনের ইরানসমর্থিত হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠী বাণিজ্যিক জাহাজে বারবার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে, তখন সোমালি জলদস্যুদের এমন উপদ্রব শিপিং কোম্পানিগুলোর ঝুঁকি ও খরচ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাঁচটি শিপিং কোম্পানির প্রতিনিধিদের তথ্যমতে, গতবছর নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত সোমালি জলদস্যুরা ২০টির বেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালানোর কারণে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ এবং বীমার খরচ বেড়েছে। একইসঙ্গে মুক্তিপণ দেওয়ার আশঙ্কাও বেড়েছে।সোমালি জলদস্যুচক্রের দুই সদস্য বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, তারা প্রায় এক দশক ধরে নিষ্ক্রিয় থাকার পর এখন জলদস্যুতায় ফেরার জন্য কয়েকশ নটিক্যাল মাইল উত্তরে হুতি হামলার ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন। সোমালি জলদস্যুদের অর্থায়ন করেন আলিয়াস ইসমাইল ইসা। তার সঙ্গে কথা হয়েছে রয়টার্সের। ইসা জানান, গত ডিসেম্বরে একটি পণ্যবাহী জাহাজ ছিনতাইয়ের জন্য জলদস্যুদের অর্থায়ন করেছিলেন তিনি।

রয়টার্সকে ইসা বলেন, হুতিদের হামলা সামাল দিতে গিয়ে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীগুলো সোমালিয়া উপকূলে টহল কমিয়ে দিয়েছে। আর সেই সুযোগই নিচ্ছে তারা (সোমালি জলদস্যু)

ইসা সোমালিয়ার আধাস্বায়ত্তশাসিত উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় পুন্টল্যান্ডের উপকূলীয় অঞ্চল হুল আনোদ থেকে মোবাইলে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেন। ওই এলাকাতেই ছিনতাই হওয়া জাহাজ এমভি রুয়েনকে কয়েক সপ্তাহ ধরে নোঙর করে রাখা হয়েছিল।

এবারে জলদ্যসুদের উত্থান ২০০৮২০১৪ সালের মতো গুরুতর না হলেও আঞ্চলিক কর্মকর্তারা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সোর্সরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের ধারণা, সমস্যা আরও সংকটময় পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে।

২০০৮ থেকে ২০১৪ সালে সোমালি জলদস্যুদের দাপট বেড়েছিল। পরে বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীর সম্মিলিত অভিযানে তারা নিষ্‌ক্িরয় হয়। এখন সেই জলদস্যুরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যদিও তাদের দাপট এখনও আগের পর্যায়ে পৌঁছায়নি।

সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহাম্মদ গত মাসে রয়টার্সকে বলেছিলেন, আমরা একে (জলদস্যুদের পুনরুত্থান) অঙ্কুরেই বিনষ্ট না করলে জলদস্যুতা সেই আগের পর্যায়ে চলে যেতে পারে।

গত সপ্তাহে ভারতীয় নৌবাহিনী মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি রুয়েনকে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলদস্যু বিরোধী মিশন ‘ইইউএনএভিএফওআর’ আটলান্টা বলেছে, জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লায় আক্রমণের জন্য সম্ভবত এমভি রুয়েনকে লঞ্চপ্যাড হিসেবে ব্যবহার করেছিল। ভারতীয় নৌবাহিনী জানিয়েছে, এমভি রুয়েনে থাকা ৩৫ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে এবং ১৭ জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে জাহাজটি আবার সাগরে ফিরেছে।

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের অপরাধ বিরোধী শাখার উপপরিচালক সাইরাস মোডি বলেছেন, লোহিত সাগরের পূর্বাঞ্চলে ভারতীয় নৌবাহিনী অন্তত এক ডজন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে। তাদের এই হস্তক্ষেপ জলদস্যুদের তৎপরতায় ছেদ টানতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই হস্তক্ষেপের কারণে লাভ/ঝুঁকির খতিয়ানের নিরীখে জলদস্যুরা আর কোনও ছিনতাই চেষ্টার আগে কয়েকবার চিন্তা করতে বাধ্য হবে বলে আশা করা যায়। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে কোনও ধরনের সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে নয় ঢাকা। সোমালি উপকূলে থাকার সময় জলদস্যুরা যে সুবিধা পায় সেকথা রয়টার্সকে জানিয়েছেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেট্রোরেল ৭৫৮০ বর্গফুটের ক্যান্টিন ভাড়া ১০০০ টাকা, তদন্তের নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধবালু নিতে গিয়ে ডাম্পার উল্টে চালকের মৃত্যু