২০২২–এর মে মাসের ২০ তারিখে ভোর চারটার দিকে তুমুল বৃষ্টি শুরু হলো। এই বৃষ্টিটার বড় বেশি প্রয়োজন ছিলো আমাদের শহরে। গত কিছুদিন ধরে এতো গরম পড়েছে নিঃশ্বাস ফেলতেই যেনো কষ্ট হচ্ছিলো মানুষের। এই বৃষ্টি পৃথিবীতে স্বস্তি দিচ্ছে.. গরম কমেছে… শান্ত হলো সবকিছুই.. ফজরের নামাজের পর আবারো সকালে ওঠার জন্য এলার্ম দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম । আজ আমাদের তাজকে নিয়ে জাহাজে যাওয়ার কথা। যথাসময়ে উঠলাম। অনেক বৃষ্টি হচ্ছে… ছাদ বাগানের কিছু পুদিনা আনতে হবে, বৃষ্টির কারণে যেতে পারছিলাম না। মাদার ভ্যাসেলের রাশিয়ান ক্যাপ্টেন সাহেব অনেকবার পুদিনা নিয়েছিলেন এদেশ থেকে সাপ্লাইয়ারকে দিয়ে। এবার আমার বাগানে এতো বেশি পুদিনা হয়েছে; চিন্তা করলাম ওনাদের জাহাজে কিছু পুদিনা দিতেই পারি। অনেকেরই মাঝে বাগানের নেশা ধীরে ধীরে স্প্রেড আউট হচ্ছে। আমার বাগান করার নেশা আমার হাসব্যান্ডের মাঝে ছড়িয়েছে। জাহাজে সে অনেক গাছপালা লাগিয়েছে। বেশিরভাগই ফুল গাছ। ফুল ফুটে নিয়মিত। হয়তো ওগুলো দেখেই মাদার ভ্যাসেলের ক্যাপ্টেন অনুপ্রাণিত হয়েছেন। আমাদের ক্যাপ্টেন সাহেব অনেকগুলো ফুলের টব, জৈব সার, চারা উপহার দিয়েছিলেন মাদার ভ্যাসেলের ক্যাপ্টেন সাহেবকে। আজ সকালের বৃষ্টির কারণে ছাদ থেকে পুদিনা আনতে সমস্যা হচ্ছিলো আমার, তবুও আশা ছাড়ছিলাম না, যেভাবেই হোক আজ যাওয়ার সময় উনাদের জাহাজের জন্য কিছু উপহার নিয়ে যাবো। ফুলের টব, বেলি ফুলের চারা, নয়নতারা ফুলের গাছ, পুদিনা এগুলোর ব্যবস্থা করেছি। বৃষ্টি হলেও আবহাওয়া অনেকটাই ভালো। আশা করি জাহাজে পৌঁছুতেই ওয়েদার একেবারেই ভালো হয়ে যাবে। আর অনেক বৃষ্টি হলে সী কন্ডিশন ভালো থাকে, এ–আশা বুকে বেঁধে পুরোপুরি প্রস্তুতি নিলাম। কিছু মিষ্টান্ন দ্রব্য নিয়ে নিলাম। যতবারই আমি জাহাজে যাই সবার জন্যে মিষ্টি, সন্দেশ, চমচম এগুলো নিয়ে যাই। যথাসময়ে রওনা দিলাম। পাহাড়ের মাঝখানের যে–রাস্তাটা বায়োজিদ লিংক রোড নামে পরিচিত সেটা অসাধারণ সুন্দর একটা রাস্তা। যতোবারই এই রাস্তায় আসা–যাওয়া করি, আমরা অনেক বেশি উপভোগ করি এখানকার সৌন্দর্য। বিদেশি রাস্তাগুলোর মতোই আমাদের এই রাস্তা। পাহাড়ি ছড়া.. দুপাশে ঘন সবুজ পাহাড়… নীলাকাশের সাদা মেঘের আনাগোনা…… ডিভাইডার দেয়া রাস্তায় অনেক বেশি গতিতে গাড়ি চালানো যায়…. শুক্রবার বলেই সকালে রাস্তায় গাড়ি কম তাই খুব কম সময়ের মধ্যে আমরা মেরিন ড্রাইভে চলে এলাম। গত কয়েক বছরে চট্টগ্রামের অভাবনীয় উন্নয়ন হযেেছ। বিশেষ করে এই মেরিন ড্রাইভ চট্টগ্রামকে অন্যরকম একটা রূপ দিয়েছে। কর্ণফুলীতে তৈরি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল। কাজ প্রায় শেষের দিকে। টানেল চালু হলে চট্টগ্রামের সাথে আনোয়ারা হয়ে কক্সবাজারের দূরত্ব কমপক্ষে ০১ ঘন্টার জার্নি কমে যাবে । আর টানেল হলে বাড়ি থেকে শহরের দূরত্ব কমে যাবে। ইচ্ছে করলে প্রতিদিন বাড়িতে আসা যাওয়া করা যাবে। টানেলের মুখেই আমাদের বাড়ি। যাই হোক এই মেরিন ড্রাইভ আমাদের চট্টগ্রামকে অনেক বেশি সৌন্দর্য দিয়েছে, উন্নয়ন তো আছেই। খুব দ্রুত গতিতে গাড়ি এগিয়ে চললো। সমুদ্রে এ্যাংকর করা শত শত লাইটারেজ জাহাজ দেখতে দেখতেই সমুদ্রের পাড়ের এই মেরিন ড্রাইভে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে প্রজাপতি পার্কের পাশ ঘেঁষে এয়ারপোর্টের রাস্তা ধরে বোট ক্লাব পেরিয়ে সুন্দর ছোট্ট একটি ফ্লাইওভার পার হয়ে চট্টগ্রাম ড্রাই ডক–এর পাশে আমাদের ডলফিন অযলে জেটি–০৭ এ আমরা পৌঁছে গেলাম কেবলমাত্র ২০ মিনিট সময়ের মধ্যেই। উঠে এলাম জাহাজে আমাদের কেবিনে। তাজকে চা খাওয়ালাম এনার্জি বিস্কুট দিয়ে। জাহাজে এলে সে চা খেতে ভালোবাসে। বিশেষ করে জাহাজে বিস্কুট দিয়ে চা, সে স্বাচ্ছন্দে আনন্দ নিয়ে খায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মোরিং ম্যান এবং টাগ বোট কান্ডারী–১১ এসে হাজির। ক্যাপ্টেন সাহেব চলে গেলেন ব্রিজে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জাহাজ ছেড়ে দিয়েছে। নদীর দু‘পাড়ের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে চলেছি। রোদ উঠেছে। বৃষ্টিস্নাত এই সকালে একটা শান্তির মধ্য দিয়ে সময় পার হচ্ছে। নদীর পানি একেবারে শান্ত। নদী যেনো সুইমিংপুল। পরিষ্কার এবং স্থির। ড্রাই ডক জেটিতে কয়েকটা জাহাজ বাঁধা আছে। বিমানবন্দরে সময়মতো বিমানগুলো ল্যান্ড করছে। কী যে সুন্দর আমার এই দেশ! বৃষ্টিস্নাত সকালে নদীর দু‘পাশের সবুজ–শ্যামল গাছগুলো অপূর্ব রূপ ধারণ করেছে। সবুজে সবুজে ছেয়ে গেছে চারিপাশ। অনেকগুলো বোট সমুদ্র থেকে নদীপথে সদরঘাটের দিকে ছুটে চলেছে। অনেকবার দেখেছি নদী পথের এই চলাচল। তবু আমার প্রতিবারই দেখতে ভালো লাগে। আমার সঙ্গী এখন তাজ। আমার সাথে..আমার আশেপাশে আছে। গুন গুন করে গান করছে। আমি আর তাজ অনেক আনন্দ নিয়ে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করছি। সে সবদিকে উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। অনেক প্রশ্ন করে। আমিও যথাসম্ভব সঠিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। নদী এখানে অনেক প্রস্বস্থ। বিশেষ করে লাইটারেজ জাহাজগুলো এখন আর নদীতে নোঙ্গর করা থাকে না। মেরিন ড্রাইভের পাশে সমুদ্রে নতুন বে–টার্মিনাল হচ্ছে। ওখানেই সব লাইটারেজ জাহাজ নোঙ্গর করা থাকে। নদীর আরেকটা সৌন্দর্য হলো পাখির উড়াউড়ি। সাদা বক, গাংচিল, কাক, রঙিন মাছরাঙ্গা, কতো রকমের পাখি যে এই নদীর উপরে চড়ে বেডায়, উড়ে বেড়ায়, ঘুরে বেড়ায় তার হিসেব রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সারাক্ষণই পাখির উড়াউড়ি দেখি আমি। আমাদের দেশের কৃষি কাজের সাথে জড়িত যেমন লক্ষ কোটি মানুষ তেমনি লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়িত নদীতে মাছ ধরার কাজে। কত শত রকমের নৌকা যে নদীর দু‘পাড়ে বাঁধা থাকে তা ছবির মত মনে হয় আমার কাছে। জেলেদের জীবন অনেক কষ্টের অনেক সংগ্রামের। তবু আমাদের এই সমুদ্র, এই নদী আছে বলেই এই পেশাটাকে ধারণ করেই লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে। কৃষি কাজ আর মাছ ধরার কাজ সমানতালে চলছে বলেই আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। নদীর দু‘ধারে গড়ে উঠছে নতুন নতুন জেটি। আমাদের অর্থনীতিতে এই নদী পথের ভূমিকা অপরিসীম। নদী পথে কত শত মানুষের আনাগোনা লক্ষ লক্ষ মানুষের চলাচল বাসা থেকে তা উপলব্ধি করা যায় না। এখানে এলেই ব্যাপারগুলো খুব সহজে চোখে ধরা পড়ে। আমি তাজকে নিয়ে কেবিনে বসে থেকে নদীর দু’পাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করি। আমাদের কেবিন ফ্রন্ট সাইডে, ব্রিজের ঠিক নিচে। ব্রিজে বসে অফিসাররা যতটুকুন ফ্রন্টে দেখতে পায ঠিক ততটুকুই আমরাও দেখতে পাই কেবিন থেকে। আমার কাছে এই সৌন্দর্যগুলো উপভোগ করতে সহজ, আনন্দ এবং ভালোই লাগে। ডানে বিমানবন্দর ফ্লাইট ল্যান্ডিং, টেক অফ দেখা যাচ্ছে। বামে কর্ণফুলী ডকইয়ার্ড, মেরিন একাডেমি প্রত্যেকটা জেটিতে জাহাজ বাঁধা আছে। সিইউএফএল আর কাফকো জেটিতে বাঁধা আছে জাহাজ। ডানের নেভাল একাডেমি এরিয়াটা অনেক সুন্দর, খুবই গোছানো পরিপাটি। নদী এখানে মোহনা হয়ে মিশে যাচ্ছে সাগরে। আমার মনও সমুদ্রের বিশালতার মাঝে বিলীন হয়ে যাচ্ছে…. ।
সমুদ্রে পৌঁছার পর ব্রিজ থেকে এসে তাজকে ওর বাবা ব্রিজে নিয়ে গেলো। কিছুটা সময় আমি রেস্টের সুযোগ পেলাম। কিছু লেখার চেষ্টা করলাম, ঘুম এসে গেলো, লিখতে পারলাম না। আউটার এন্েকারেজ এরিয়া পার হয়ে গেলে ওরা দুইজন কেবিনে আসলো। জোহরের নামাজ শেষ করে আমরা লাঞ্চ করলাম। অন্য দিনের তুলনায় আজ তাজ সকালে ঘুম থেকে উঠেছে তাই ওকে কিছুক্ষণ ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু সে ঘুমাবেই না। আসরের নামাজের পর কিছুটা সময়ের জন্য ব্রিজের পেছনের এরিয়ায় বাগানে গেলাম। বৃষ্টিতে গাছগুলো এতো সবুজ, মোলায়মে, এতো সুন্দর হয়েছে চোখ সরানো যায় না। অনেক ধরনের ফুল ফুটেছে; নয়নতারা, গোলাপ, রজনীগন্ধা। অনেক ধরনের পাতাবাহারও আছে। লেবু গাছ, পেয়ারা গাছ, এলোভেরা গাছ, ডায়ান্থাস ফুলের গাছ গুলো এতো সুন্দর সজীব পাতায় ভরে গেছে দেখলেই মন ভরে যায়। দেখতে দেখতেই আমাদের জাহাজ কুতুবদিয়ায় অ্যাংকর করা মাদার ভ্যাসেলের খুব কাছে চলে এলো। সূর্যাস্তের সময় এলংসাইড হলো জাহাজ। এই প্রথম আমি ব্রিজের উইং–এ দাঁড়িয়ে মাদার ভ্যাসেলের সাথে ‘বাংলার সৌরভ’কে এলংসাইড হতে দেখলাম। অনেক সাহসিকতা আর বুদ্ধিমত্তা এবং অভিজ্ঞতার সাহায্যে ক্যাপ্টেন সাহেবকে এই গভীর সমুদ্রে কোনো ধরনের টাগ বোটের সাহায্য ছাড়াই মাদারভ্যাসেলের সাথে এলংসাইড করতে হয়। দেখার মতো দারুণ বিষয়। তবে আমার মনের মধ্যে কিছুটা ভয়ও কাজ করছিলো। আমি কন্টিনিউ দোয়া করতে থাকলাম। জাহাজ চালানো একটা দলীয় ব্যাপার। এলংসাইডের সময় এবং কাস্ট অফের সময দুই জাহাজের যোগাযোগ, সবার আন্তরিকতাপূর্ণ সহযোগিতা খুবই জরুরি। এতে কাজ সহজ হয়। খুব সুন্দরভাবে আমাদের জাহাজ মাদার ভ্যাসেলে এলংসাইড হলো। ক্যাপ্টেন সাহেব ব্রিজে জামাতে মাগরিবের নামাজ পড়লেন তারপর কেবিনে এসে আমিও নামাজ শেষ করে রেডি হলাম। আজ আমরা মাদার ভ্যাসেলে যাবো। ফেব্রুয়ারিতেও মাদার ভ্যাসেলে গিয়েছিলাম। তখন আমাদের মেয়েরাও সাথে ছিলো। আজ ওরা নেই কিন্তু তাজ বারবার মাদারভ্যাসেলে যেতে চাচ্ছিলো বলেই এবার এখানে আসা। মাদারভ্যাসেলের ক্যাপ্টেন অসাধারণ একজন ভালো মানুষ। উনি বারবার মেসেজ দিচ্ছিলেন, আমাদের জন্য ওয়েট করছেন। তাই আমরা প্রস্তুতি নিলাম। লোহার তৈরি একটা খাঁচা আছে, ক্রেনের সাহায্যে সে খাঁচায করে আমাদেরকে মাদার ভ্যাসেলে পার হতে হবে। খুব এক্সাইটিং একটা বিষয। ক্যাবল কারের মতো লাগে। তবে আমার মনে ভয় কাজ করে…। নিরাপদে আমরা মাদার ভ্যাসেলে পৌঁছুলাম। আমাদেরকে রিসিভ করার জন্য মাদার ভ্যাসেলের ক্যাপ্টেন সাহেব নিজেই দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর অভ্যর্থনা–আতিথেয়তায় আমরা বরাবরই মুগ্ধ। উনি আমাদেরকে খুব ভালো সময় দিলেন। এতো ফ্রেন্ডলি ক্যাপ্টেন খুব কম আছেন হয়তো। ব্রিজে গেলাম। তিনি অনেকগুলো গাছ লাগিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে এগুলো আমাদের ক্যাপ্টেন সাহেব উনাকে আগেই উপহার দিযেিছলেন। মাদার ভ্যাসেলের ক্যাপ্টেন সবুজ গাছের প্রেমে পড়েছেন। আরও গাছ লাগবে উনার। আমিও চাই এই সবুজ, সবুজায়ন ছড়িয়ে পডুক সব জায়গায়, সবাই সবুজের প্রেমে পডুক। বেশ কিছুটা সময় আমরা মাদার ভ্যাসেলে ছিলাম। পুরোটা সময় মাদার ভ্যাসেলের ক্যাপ্টেন আমাদের সাথে ছিলেন। যদিও অযলে ট্যাংকার তবুও খুবই সুন্দর পরিচ্ছন্ন পরিপাটি একটা জাহাজ। এখানে অনেক ধরনের সুবিধার পাশাপাশি একটা লিফটও আছে যেটা দেখে আমি আসলেই আশ্চর্য হযেিছ। অনেক আধুনিক জাহাজ বলেই এই ট্যাঙ্কারে লিফট আছে। আমাদের জন্য অনেক রকমের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। ডিনার শেষ করে আমরা পুরো মাদার ভ্যাসেল ঘুরে বেড়ালাম। নিরবে পধৎমড় ডিসচার্জিং হচ্ছে। এখান থেকে আমাদের জাহাজটাকে খুব ছোট্ট মনে হচ্ছে। গভীর সমুদ্রে সবদিকে অন্ধকার, কালো পানি ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। ধীরে ধীরে চাঁদটা রূপার থালার মতো পূর্ব দিক থেকে ঝকমক করে অনেক দূর উঠে এসেছে। চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত পুরো সমুদ্র। নীরবে ঢেউগুলোতে চাঁদের আলো খেলা করছে। মাঝে মাঝে অনেক দূর থেকে হুইসেলের শব্দ ভেসে আসে কানে, এক অভাবনীয় সুন্দর দৃশ্য যা শুধুমাত্র অনুভব করা যায়। জাহাজ সুইঙ্গিং হওয়ার আগেই আমরা ব্যাক করবো আমাদের জাহাজে। জোয়ার ভাটার পরিবর্তনের সময় জাহাজ ঘুরতে শুরু করলে এক জাহাজ থেকে অন্য জাহাজে ট্রান্সফার হওয়া কঠিন। তাছাড়া এখন যাওয়া না হলে আমাদেরকে আরো ৬ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। এদিকে ততক্ষণে আমাদের জাহাজের কার্গো লোডিং শেষ হয়ে যাবে। তাই আমরা দশটার দিকে আমাদের জাহাজে ব্যাক করলাম। আমরা আমাদের ক্যাবল কারে উঠার আগেই মাদার ভ্যাসেলের ক্যাপ্টেন সাহেব অনেকগুলো উপহার আমাদের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাজ এই উপহারগুলো তার বোনদের জন্য নিয়ে যাবে।…..জাহাজ ঘুরতে শুরু হওয়ার পর হঠাৎ করেই আবহাওয়া অনেকটাই খারাপ হলো। দুই জাহাজের দুইটা রশি ছিড়ে গেলো। জাহাজের দুলুনিতে আমার পক্ষে বসে থাকা সম্ভব না। ক্যাপ্টেন সাহেব ব্রিজে। কার্গো লোডিং শেষ হলে জাহাজ কাস্ট অফ করে জাহাজের গতিপথ সেট করে কেবিনে আসলেন রাত ১ টায়। ভরা জোয়ার। অনেক দ্রুত জাহাজ এ্যাংকরের দিকে ছুটে চললো। জাহাজ আউটার এ্যাংকরে পৌঁছাতে ভোর চারটা বেজে গেলো…। এভাবেই আমাদের ২৪ ঘন্টার একটা জার্নি শেষ হলো।