সড়কের বাঁকগুলোকে দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও গবেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকরা দেখছেন, সোজা সড়কেই দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে, আর মূল কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো। মহাসড়কে বিভাজক বসানোয় গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ কমলেও পেছন থেকে ধাক্কার ঘটনা বেড়ে গেছে বলেও জানিয়েছেন বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক এক সংলাপে নিজেদের গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন তিনি। এদিন আরেক অনুষ্ঠানে যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক পরিসংখ্যানে জানায়, গত ছয় বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ হাজার ৮৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
হাদিউজ্জামান বলেন, অনেকের ধারণা সড়ক বাঁকে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু জরিপ করে দেখা গেছে বাঁকে দুর্ঘটনা ঘটে ৩০ শতাংশ, আর বাকি সব দুর্ঘটনা ঘটে সরল বা সোজা সড়কে। এজন্য গাড়িগুলোর অতিরিক্ত গতিতে চালানোকে দায়ী করার পাশাপাশি কেন চালকরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন, তার ব্যাখ্যাও দেন তিনি। সারাদেশের সড়কগুলোর উপর দুইশর বেশি হাট ও বাজার রয়েছে। এই হাটবাজারের যানজটে পরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় চালককে। ওই চালকরা যখন গাড়ি নিয়ে সরল পথে আসে, তখন যানজটে নষ্ট হওয়ার সময় পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। এই অতিরিক্ত গতি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন বলে জানান এই অধ্যাপক।
দেশের অধিকাংশ মহাসড়কে বিভাজক বসানোয় গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ কমানো গেলেও দুর্ঘটনার ধরন এখন পাল্টে গেছে বলে সমীক্ষায় দেখা গেছে। এখন পেছন থেকে ধাক্কার কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে, বলেন হাদিউজ্জামান। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে কুয়াশার কারণে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হয় বলেও জানান তিনি।
ছয় বছরে ঝরেছে ৪৩ হাজারের বেশি প্রাণ
এদিকে গত ছয় বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ হাজার ৮৫৬ জনের প্রাণহানির তথ্য তুলে ধরেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির মহাসচিব মো.মোজাম্মলে হক চৌধুরী বলছেন, এই ছয় বছরের হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, সড়ককে নিরাপদ করার কোনো প্রতিশ্রুতিই খুব একটা কাজ করছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি জানান, সারাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৬৪ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন, আর আহত হচ্ছেন ১৫০ জনের বেশি। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে দেশে দুর্ঘটনার তথ্য নিয়মিতভাবে
সংরক্ষণ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল।
তাদের হিসাবে গত ছয় বছরে ৩১ হাজার ৭৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৪৩ হাজার ৮৫৬ জনের প্রাণ গেছে, আহত হয়েছেন ৯১ হাজার ৩৫৮ জন। নিরাপদ সড়কের জন্য সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ধারাবাহিকভাবে তিনবারের ক্ষমতাসীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী নানা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলেও তৃতীয় মেয়াদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে নিরাপদ সড়কের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস
আজ ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ও ইলিয়াস কাঞ্চন পত্নী মরহুমা জাহানারা কাঞ্চনের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে সড়ককে নিরাপদ করার লক্ষ্যে আন্দোলন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর এই দিনটি জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- ‘গতিসীমা মেনে চলি, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করি’। দিবসটি সামনে রেখে আজ শুক্রবার নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে মতবিনিময় সভা। এতে কমিটির নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পেশা ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন।












