সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (ক.) এর ১১৮ তম ওরশ কাল

মাইজভাণ্ডারে ১০ মাঘ প্রধান দিবস

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২৩ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৩২ পূর্বাহ্ণ

গাউছুল আজম হযরত মাওলানা শাহ ছুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (.) ১১৮তম বার্ষিক ওরশ শরীফ আগামীকাল বুধবার মহাসমারোহে ফটিকছড়ির মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ অনুষ্ঠিত হবে। ওরশ উপলক্ষে বিভিন্ন মঞ্জিলে ইতিমধ্যে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

ওরশের প্রধান দিবস উপলক্ষ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও ভারত, মিয়ানমার, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২৩দিন আগে থেকেই ভক্তরা মাইজভাণ্ডার দরবারে আসতে শুরু করেছেন। ভক্ত আশেকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে মাইজভাণ্ডার দরবার। ভক্তআশেকদের ভিড়ে মাইজভাণ্ডার দরবার ও আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। জিকির, কাওয়ালী ও মিলাদ মাহফিলের ধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে পুরো এলাকা। প্রশাসনের হিসাব মতে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হতে পারে এবার ওরশে। তবে আশেক ভক্ত ও বিভিন্ন মঞ্জিলের হিসাব মতে, ১০ মাঘ ওরশ শরীফ উপলক্ষে এক সপ্তাহ ধরে আশেক ভক্ত আসা যাওয়া করে। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হতে পারে। রওজা শরিফ গোসল ও গিলাফ চড়ানোর মাধ্যমে ওরশ শরিফের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আগামীকাল বুধবার প্রধান দিবসের দিন স্ব স্ব মঞ্জিলে কেন্দ্রিয় মিলাদ মাহ্‌ফিল ও আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন স্ব স্ব মঞ্জিলের প্রধানগণ। প্রধান দিবস ছাড়াও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাউসিয়া আহমদিয়া মঞ্জিল নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। ওরশ উদযাপন উপলক্ষে ইতোমধ্যে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসনের সাথে গাউসিয়া আহমদিয়া মঞ্জিল ও গাউছিয়া হক মঞ্জিলের প্রশাসনিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ওরশ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা, দেশবিদেশ থেকে আগত আশেকভক্ত ও জায়েরীনদের সুবিধার্থে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, বিভিন্ন হোটেল খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণ ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেট, পর্যাপ্ত পুলিশ, আনসার মোতায়েনসহ মন্‌িজলের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ওরশ শরীফ উপলক্ষে মাইজভাণ্ডার গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের উদ্যোগে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ওরশ উপলক্ষে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ফোর্স, ১০৫ সদস্য বিশিষ্ট পুরুষ মহিলা আনসার টিম আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবে। এছাড়াও মঞ্জিল ভিত্তিক একাধিক কমিটি, উপ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন মঞ্জিলের সমন্বয়ে আগত আশেক ভক্তের সুবিধার্থে ব্যপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

মাইজভান্ডার গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন হযরত মওলানা শাহছুফী সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভাণ্ডারী বলেন, মাইজভাণ্ডার দরবারের প্রাণ পুরুষ গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী হযরত মওলানা শাহছুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (.) মানুষের মনে খোদাপ্রেম জাগ্রত করার শিক্ষা দিয়ে গেছেন। তার আল্লাহ প্রদত্ত আধ্যাত্মিক শক্তির পরশে মানুষ আজ আলোর পথের পথিক।

এদিকে, ডা. সৈয়দ দিদারচল হক মাইজভাণ্ডারীর ব্যবস্থাপনায় ওরশ শরীফ আয়োজনের সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে। আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভাণ্ডারীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভাপতি ডা. সৈয়দ দিদারুল হক মাইজভাণ্ডারী ওরশ শরীফে সার্বক্ষণিক শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা, আশেক ভক্তগণের যাতায়াত, ইবাদতবন্দেগী, হাদিয়া চলাচল নির্বিঘ্ন রাখা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকল স্বেচ্ছাসেবী খাদেমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

শাহানশাহ্‌ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (.) ট্রাস্ট :

হযরত মাওলানা শাহ্‌সূফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্‌ মাইজভাণ্ডারী (কঃ)-এর ১১৮তম ওরস্‌ শরিফ আগামীকাল বুধবার মাইজভাণ্ডার শরিফ দরবারগাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর গাউসিয়া হক মন্‌জিলে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে। আগামীকাল বা’দ ফজর রওজা শরিফ গোসল ও গিলাফ চড়ানোর মাধ্যমে ওরশের শরিফের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। সকাল ৮টায় রওজা শরিফে খত্‌মে কোরআন, খত্‌মে গাউসিয়া, খত্‌মে খাজেগান, তাওয়াল্লোদে গাউসিয়া পাঠ ও মিলাদ অনুষ্ঠিত হবে। রাত ১০টায় মিলাদ মাহ্‌ফিল ও আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর প্রপ্রপৌত্র, গাউসিয়া হক মন্‌জিলের সাজ্জাদানশীন, শাহ্‌সুফি সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভাণ্ডারী (.)

এছাড়াও গাউসিয়া হক মন্‌জিল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় আশেকভক্তদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে আজ থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা নাজিরহাট ঝংকার মোড় হতে মাইজভাণ্ডার দরবারের পুরো এলাকাজুড়ে দায়িত্ব পালন করবেন। এস জেড এইচ এম ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ২৩ আজ থেকে নগরীর মুরাদপুর থেকে মাইজভাণ্ডার শরিফ শাহী গেইট পর্যন্ত বিআরটিসির বিশেষ বাস সার্ভিস চালু থাকবে।

এদিকে রওজায় রওজায় চলছে ইবাদত বন্দেগী, জিকির আজকার, মিলাদ মাহফিল ও জিয়ারত। ক্যাম্পে ক্যাম্পে চলছে বাদ্য বাজনা ও মাইজভাণ্ডারী কালাম পরিবেশন। এক কথায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ। এছাড়া ওরশ শরীফ কেন্দ্র করে বসেছে গ্রামীণ লোকজ মেলা। মেলায় পোশাক, রকমারী খাবার গৃহস্থালি প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। দা, ছুরি, বটি, বেত সামগ্রী, বেড়া, চাটাই, মাছধরার ফাঁদ, হাতপাখা, মোড়া, ফুলদানি, হাঁড়ি পাতিলসহ ঘরে ব্যবহারের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যায়। এ মেলার অন্যতম আকর্ষণ বড় বড় সাইজের জাপানি মুলা বিক্রি যা ভাণ্ডারী মূলা নামে খ্যাত। মেলার বিভিন্নস্থানে জমজমাট মূলা বিক্রির দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৯ আসামির ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে সাক্ষ্য দিলেন বাদী
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়ার এমপি মোতাহের ও দুই যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে ইসির মামলা