একপাশে সাগরের উত্তাল ঢেউ, অপর পাশে সারি সারি ঝাউবন। এরই মাঝে চলছে মেঘ বৃষ্টির খেলা। এমনই এক আকাঙ্ক্ষিত পরিবেশে জমে ওঠেছে রাখাইনদের বর্ষা উৎসব। এ যেন রাখাইন সম্প্রদায়ের অন্যরকম এক মিলন মেলা। গতকাল শুক্রবার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের শৈবাল পয়েন্টের ঝাউবাগানে চলে রাখাইনদের মনরাঙানো বর্ষা উৎসব। গত ২৪ মে শুরু হওয়া এ উৎসব শেষ হবে আগামী ১ জুলাই।
জানা গেছে, প্রতি বছর বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান তিন মাসব্যাপী আষাঢ়ী পূর্ণিমার আগে (আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত) আড়াই থেকে তিনমাস সৈকতে এ উৎসব পালন করে থাকে রাখাইন সম্প্রদায়। তবে এটি তাদের কোনো সামাজিক বা ধর্মীয় উৎসব নয়। কেবল কিছু উৎসাহী পরিবারের সদস্য ও তাদের বন্ধুবান্ধব মিলে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার সৈকতে পিকনিকে মিলিত হয়। এসময় কেউ সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে জলকেলিতে মাতে, কেউ গান শুনে, কেউ জমিয়ে মারে আড্ডা। গতকাল শুক্রবার চতুর্থ দিনের উৎসবে কক্সবাজার ছাড়াও বান্দরবান, রাঙামাটি থেকে শত শত রাখাইন তরুণ-তরুণী অংশ নেয়।
সেই দলেরই একজন সদস্য একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা ড. আছিং আজাদীকে বলেন, সারা বছরই কর্ম ব্যস্ততায় ডুবে থাকতে হয়। তাই এ ধরনের উৎসবে মেতে ওঠার সুযোগ পেলেই হাতছাড়া করতে চাই না। বান্দরবানের উক্য চিং বলেন, সংঘাত হানাহানির সময় এড়িয়ে আমরা সবাই একসঙ্গে নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাসে মাতি। দিনটা ভালই কাটে। মম চিং বলেন, উৎসবে এসে সাগর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ ঝাউবাগানে বসে নিজের মতো করে একান্ত কিছু সময় কাটানো যায়। অনেক পুরনো বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গেও দেখা হয়। মজাই লাগে।
রাখাইন তরুণী নীলা বলেন, সবাই মিলে-মিশে বৃষ্টি এবং সাগরের জলে সিক্ত হয়ে আনন্দে মেতে ওঠার জন্যই মূলত এখানে আসা। অনেকেই এটিকে বর্ষাকালীন পিকনিকও বলছে। আমি বলব, এ উৎসবের মধ্য দিয়ে আমরা বর্ষাকে বরণ করে থাকি। রাখাইন নেত্রী মাটিন টিন জানান, ধর্মীয় রীতিনীতির সঙ্গে এ উৎসবের কোনো সম্পর্ক নেই। শুধুমাত্র মজা করার জন্য শতাব্দীকাল ধরে রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসব পালন করে আসছে।
কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যথিং অং জানান, প্রথম দিকে হিমছড়ির জঙ্গলে উৎসব পালন করা হত। তবে গত প্রায় তিন দশক ধরে শহর সংলগ্ন শৈবাল পয়েন্ট সৈকতেই এই বর্ষা উৎসব পালন করা হচ্ছে।












