কক্সবাজার সৈকতে ফের ভেসে এলো শত শত মৃত জেলিফিশ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শহরের কলাতলী পয়েন্ট সৈকতে সামুদ্রিক জোয়ারের সঙ্গে এসব মরা জেলিফিশ ভেসে আসে। এর আগে গত বছরের বিভিন্ন সময়েও এভাবে শত শত মরা জেলিফিশ ভেসে আসতে দেখা যায়। তবে এবার ভেসে আসা জেলিফিশের জাতটি ভিন্ন বলে জানান বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর।
তিনি বলেন, বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শহরের কলাতলী পয়েন্ট সৈকতে ফের জেলিফিশ ভেসে আসার খবর পেয়ে বোরির কুইক রেসপন্স টিম ঘটনাস্থলে যায় এবং প্রজাতি শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে। কঙবাজার সৈকতে এবারই প্রথম এই জাতের জেলিফিশ ভেসে আসতে দেখা যায়। এর আগে পটুয়াখালীতেও এই জাতের জেলিফিশ ভেসে আসার খবর পাওয়া যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও জেলা প্রশাসনের বিচকর্মী মাহবুব আলম বলেন, বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সামুদ্রিক জোয়ারের হঠাৎ শত শত মরা জেলিফিশ ভেসে আসতে দেখা যায়। এর আগে গতবছর ৩ ও ৪ আগস্ট, ১১ ও ১৩ নভেম্বর এবং ৩ ডিসেম্বরও এভাবে শত শত মরা জেলিফিশ ভেসে আসে। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কুইক রেসপন্স টিমের বিজ্ঞানী তরিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল থেকে জানান, গতবছর ভেসে আসা জেলিফিশটি ছিল ‘লবণেমইড্স রোবাস্টাস’ প্রজাতির এবং এগুলোর একেকটির ওজন ছিল ১০ কেজি থেকে ৬০ কেজি পর্যন্ত। তবে এবার ভেসে আসা জেলিফিশটির ওজন ২শ থেকে ৩শ গ্রামের মধ্যে।
জেলিফিশ স্থানীয়ভাবে ‘নুইন্না’ নামে পরিচিত। শত শত বছর ধরেই কঙবাজার সৈকতে ভেসে আসছে জেলিফিশ; আর অযত্ন–অবহেলায় পঁচে–গলে সৈকতের মাটিতেই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে এই সামুদ্রিক প্রাণিটি। অথচ খাদ্য হিসেবে এবং ওষুধ ও প্রসাধন তৈরিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জেলিফিশের বহুল ব্যবহার রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এক কেজি জেলিফিশের দাম ১০ ডলার বা প্রায় ১১শ টাকা।
সম্প্রতি কঙবাজার সৈকতে শত শত মৃত জেলিফিশ ভেসে আসার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এমন চমকপ্রদ তথ্য জানতে পারেন। এখন এ জেলিফিশকে নিয়েই দেশের সুনীল অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচনেরও স্বপ্ন দেখছেন তারা। সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, বিশ্বে অন্তত দুই হাজার প্রজাতির জেলিফিশ রয়েছে, যারমধ্যে ১২–১৩টি প্রজাতি খাওয়ার উপযোগী। আর এসব প্রজাতির মধ্যে একটি হলো ‘ধলা নুইন্না’ বা হুয়াইট টাইপ জেলিফিশ। যেটি কঙবাজারসহ দেশের অন্যান্য উপকূলজুড়ে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। তবে বুধবার পাওয়া জেলিফিশটি কোন প্রজাতির এবং এর খাদ্য ও ওষুধী গুণ কী; এ বিষয়ে গবেষণা করবেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা জানান, ডাইনোসর যুগেরও আগের প্রাণি জেলিফিশ। পৃথিবীতে এদের আবির্ভাব প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে। তবে ইংরেজি নামে মাছ হিসেবে অভিহিত করা হলেও জেলিফিশ আসলে কোনো মাছ নয়। এটি একটি অমেরুদন্ডী প্রাণি। যার কোনো হৃদপিন্ড নেই। প্রাণিটি অ্যাকুরিয়ামে পর্যটকদের বিনোদনেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।