সৈকতে ফের ভেসে এলো মরা ডলফিন

অদূরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে একটি সামুদ্রিক কচ্ছপও

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৮:২৯ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের ইনানীর মোহাম্মদ শফির বিল সৈকতে ফের ভেসে এলো মরা ডলফিন। ইরাবতী জাতের ডলফিনটি ৬ দিন ধরে সৈকতে পড়ে রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার পারভেজ জানান, বুধবার বিকেলে বোরির বিজ্ঞানীরা হোটেল রয়েল টিউলিপ সংলগ্ন সৈকতে একটি মরা ইরাবতী ডলফিন পড়ে থাকতে দেখেন।

তবে ডলফিনটির লিঙ্গ শনাক্ত করা যায়নি। তিনি জানান, ডলফিনটির অদূরে একটি মরা জলপাই রঙা সামুদ্রিক কচ্ছপও দেখা গেছে। কচ্ছপটি প্রায় এক মাস আগে এবং ডলফিন পাঁচ দিন আগে এই সৈকতে ভেসে আসে বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।

এর আগে গতবছরের ২৩ আগস্ট ও ২০ মার্চ একই সৈকতে মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল। তবে ডলফিনগুলো ময়নাতদন্ত ও প্রজাতি শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ ছাড়াই সৈকতে পুঁতে ফেলে বনবিভাগ।

সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে কঙবাজার সৈকতে মাঝেমধ্যে ভেসে আসে নানা সামুদ্রিক প্রাণীর মৃতদেহ। আর তাদের মধ্যে রয়েছে আইনিভাবে সুরক্ষিত ডলফিন, কাছিম ও বঙ্গোপসাগরের জীবন্ত জীবাষ্ম নামে পরিচিত রাজকাঁকড়াও। আন্তর্জাতিক বাজারে এসব সামুদ্রিক প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মূল্য অত্যন্ত চড়া হলেও এই মূল্যবান সম্পদগুলো সরকারি পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয় না বলে জানান বাপা কঙবাজার জেলা সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী।

ডলফিন স্থানীয়দের কাছে হুছুম মাছ নামে পরিচিত। জেলেদের কাছে হুছুম মাছ দেখা পাওয়া সৌভাগ্যের প্রতীক। এই সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীকে নিয়ে রয়েছে অনেক উপাখ্যান। ডলফিনেরা ঝড়ের কবলে পড়ে বোটডুবির শিকার অনেক জেলের প্রাণ বাঁচিয়েছে বলে জানান কঙবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ। তিনি জানান, মহেশখালী চ্যানেল থেকে শুরু করে সেন্টমার্টিন উপকূল পর্যন্ত ডলফিনের ঝাঁক দেখা যায়।

ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (ডাব্লিউসিএস) কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাদের সংস্থার সর্বশেষ জরিপে বঙ্গোপসাগরে ৮ জাতের ১৬ হাজার ডলফিন শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৬ হাজার রয়েছে ইরাবতি ডলফিন। ইরাবতি ডলফিন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বাংলাদেশে।

ডলফিন মানুষের মতোই স্তন্যপায়ী প্রাণী, যারা বাচ্চা প্রসব করে এবং সন্তানকে বুকের দুধ পান করায়। তবে ডলফিন সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী, যারা সিটাসিয়ান নামে পরিচিত। আমাদের বঙ্গোপসাগরে মোট ১৩ জাতের স্তন্যপায়ী প্রাণী শনাক্ত হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর। তিনি বলেন, ডলফিন মানুষের সাথে খেলা করতে পছন্দ করে। আর এই ডলফিনকে ঘিরে দেশে ব্লুট্যুরিজমের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এদেরকে অবশ্যই আমাদের পরিবেশে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনুমতি না নিয়ে সড়ক কাটায় লাখ টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন