সেলিম আল দীন – নাট্য রচয়িতা, গবেষক ও নাট্য সংগঠক হিসেবে খ্যাতিমান। শিল্পমানের দিক থেকে বিশ্বজয়ী ও কালজয়ী রচনার পাশাপাশি দীর্ঘ তিন যুগব্যাপী নাটক নিয়ে গবেষণা, চর্চা ও সাংগঠনিক কর্ম তৎপরতায় সেলিম আল দীন অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে অর্জন করেছেন আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা।
সেলিম আল দীনের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৮ নভেম্বর ফেনীর সেনেরখিল গ্রামে। ফেনীতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স সহ এম. এ করেন। পরবর্তী সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেন পিএইচ.ডি ডিগ্রি। ১৯৭৪ সাল থেকে অধ্যাপনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁরই আগ্রহ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৮৬ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নাটক ও নাট্যতত্ত্ব’ বিভাগ। প্রায় একক প্রচেষ্টায় তিনি বাংলা নাটকে একটি স্বতন্ত্র ধারা সৃষ্টি করেন। তাঁর হাত ধরেই বাংলা নাটক নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখে বিশ্ব সংস্কৃতির অঙ্গনে প্রবেশ করে। মধ্যযুগের বাংলা নাট্যরীতিকে আধুনিক স্তরে অবতীর্ণ করে তোলার প্রথম কৃতিত্ব তাঁর। ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম ছিলেন সেলিম আল দীন। নাট্য নির্দেশক নাসির উদ্দীন ইউসুফকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন গ্রাম থিয়েটার। নাটক রচনার ক্ষেত্রে কল্পনার চেয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও তথ্য-উপাত্তের ওপর নির্ভর করতেন তিনি। এক্ষেত্রে সেলিম আল দীন ছিলেন প্রচণ্ড পরিশ্রমী ও অধ্যাবসায়ী। ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’, ‘বাসন’, কিত্তনখোলা’, ‘বনপাংশুল’, ‘প্রাচ্য’, ‘আততায়ী’, ‘কেরামত মঙ্গল’, ‘যৈবতী কইন্যার মন’, ‘হাত হদাই’, ‘নিমজ্জন’, ‘স্বর্ণবোয়াল’ – এইসব নাটক তারই স্বাক্ষরবাহী। বিষয় নির্বাচন ও নতুন আঙ্গিক নির্মাণে সেলিম আল দীনের নাটক অতুলনীয়। সেই সাথে চরিত্র চিত্রণ, বাক্য বিন্যাস, চিত্রকল্প, শিল্পসৌকর্য, বর্ণনা রীতি – সব কিছুতেই সেলিম সুনিপুণ আর দক্ষ এক শিল্পী। গবেষণাধর্মী বহু নাটকের নির্দেশক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। বাংলা একাডেমী পুরস্কার ও একুশে পদক সহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব। ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি প্রয়াত হন।