নগরীর দর্জিপাড়া খ্যাত খলিফাপট্টিতে শ্রমিকদের এখন দম ফেলার ফুসরত নেই। নগরীর সিরাজদৌল্লা রোডের সাব এরিয়া বাজার সংলগ্ন খলিফাপট্টিতে বর্তমানে দিন–রাত সেলাই মেশিনের খটখট শব্দে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সাধারণত রমজান শুরুর দুই সপ্তাহ আগে দর্জিদের ব্যস্ততা শুরু হয়। খলিফাপট্টির দর্জিরা শার্ট, প্যান্ট, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা ও স্কার্ট তৈরি করে নগরী এবং নগরীর বাইরের বিভিন্ন মার্কেটে পাইকারীতে বিক্রি করেন। তবে কিছু কিছু কারখানা অগ্রিম অর্ডার নিয়েও কাজ করে বলে জানান কারখানা মালিকেরা। সরেজমিনে খলিফাপট্টি ঘুরে দেখা গেছে, কেউ কাপড় কাটছেন, কেউ সেলাই করছেন, কেউ আবার সেলাই করার কাপড়ে নানা ধরনের পুঁতি ও লেইচ সংযুক্ত করছেন। সৈয়দ আলী নামের একজন দর্জি জানান, কারখানাতে এখন কাজের প্রচুর চাপ। দিন রাত কাজ করতে হচ্ছে। এদিকে কাজের চাপ থাকায় মালিকরা খুশি। দর্জি শ্রমিক আশরাফ হোসেন বলেন, সারা বছরই এখানে আমরা কাপড় তৈরি করে বিক্রি করি। কিন্তু ঈদের সময় ব্যস্ততা আলাদা। গত বছরের তুলনায় এ বছর আমাদের কাপড়ের চাহিদা বেশি।
খলিফাপট্টির কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, খলিফাপট্টির ব্যবসায়ীরা সারা বছর রমজানের ঈদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এখানে সারা বছর যত কাজ হয়, তার ৮০ শতাংশ কাজ হয় ঈদকেন্দ্রিক। খলিফাপট্টির কারখানাগুলোতে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকার জামাও তৈরি হয়। দেশি ছাড়াও বিদেশি বিভিন্ন বাহারি ডিজাইনের স্যুট, শার্ট, প্যান্ট, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা ও স্কার্ট তৈরি করে থাকেন খলিফাপট্টির ডিজাইন মাস্টাররা।
খলিফাপট্টি বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইমাম হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, খলিফাপট্টিতে এখন দিনরাত কাজ চলছে। আমাদের এখন ভারতীয় পোশাকের সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হচ্ছে। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, আমাদের পোশাকের মান ভারতীয় পোশাকের চেয়ে কোন অংশেই খারাপ না। তবে অনেক ব্যবসায়ী পুুঁজির জন্য দামি দামি পোশাক তৈরি করতে পারছেন না। কারণ এখন ফেব্রিক্স থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বাড়তি। আমরা মানের দিক থেকে কখনো আপস করি না। খলিফাপট্টি বণিক কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা মো. নুরুন্নবী বলেন, খলিফাপট্টিতে পোশাকের চাহিদা এখন চট্টগ্রাম শহর ও বিভিন্ন উপজেলা ছাড়িয়ে বিভিন্ন জেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। দূরদূরান্ত থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা পোশাক নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের দর্জিরা সারারা, গারারা, নায়রা ও লেহেঙ্গা তৈরিতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালের পর আইয়ুব আলী নামে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এক ফেরিওয়ালা নিজের গ্রামের কিছু লোকজন এনে খলিফাপট্টিতে কাপড় তৈরির কাজ শুরু করেন। সেই থেকেই শুরু। বর্তমানে খলিফাপট্টিতে প্রায় আড়াইশ’ কারখানা রয়েছে। পুরনো বেশ কয়েকটি ভবন জুড়ে রয়েছে কারখানাগুলো। প্রায় সবগুলো কারখানার শ্রমিক হচ্ছে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার।







