সেলফিতেই শেষ হাসি

মীরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনা ওপর থেকে পাথর পড়ে প্রাণ গেল ব্যাংক কর্মকর্তার, আরেকজন আইসিইউতে

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

গায়ে নীল গেঞ্জি। মাথার চুল ভেজা; এলোমেলো। মুখে হাসি। দুই চোখে আনন্দের ঝিলিক। পেছনে ঝরনার জল। সেই জলের রং যেন সাদা। আর আছে রোদের ঝিলিক, সহকর্মীদের নানা ভঙ্গি। নীল গেঞ্জি যার গায়ে তার নাম মাহবুব হাসান। তার হাতেই মোবাইল। সেলফি তুললেন। সেলফিতে ধরা দিল হাসিমুখ। তবে এটাই যে তার শেষ ছবি হবে, শেষ হাসি হবে, তা কে জানত? জানা গেল দুর্ঘটনার পর। একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্নাএই স্লোগানটির মতোই হাসির ছবিটা যেন ‘কান্না’ হয়ে রয়ে গেল। জীবন থেকে হারিয়ে গেলেন তরতাজা ব্যাংক কর্মকর্তা মাহবুব।

মীরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ঝরনায় গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে বেড়াতে আসেন ওয়ান ব্যাংকের কাওরান বাজার প্রধান কার্যালয়ের সাপোর্ট অফিসার মাহবুব হাসান, গাজী আহমেদ বিন শামস, ফাহিম কবির তুষার, শাহীন ও মেহেদী হাসান নুর। সকলেই ২৭২৮ বছরের যুবক অফিসার। মাহবুবের সহকর্মী বন্ধু তুষার জানান, আমরা সবাই সকালে খৈয়াছড়া ঝরনায় পৌঁছে গোসল করাসহ আনন্দ করছিলাম। দুপুর ১২টার দিকে ঝরনার যে স্থানে পানি গড়িয়ে পড়ে সেখানে অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ ঝরনার উপর থেকে ২০২৫ কেজি ওজনের বড় বড় কয়েকটি পাথর এসে আমাদের পাশে বিকট শব্দে আছড়ে পড়ল। আর তাৎক্ষণিক কয়েকজন গুরুতর আহত হলো। দেখলাম আমাদের বন্ধু মাহবুব হাসান (২৭) নেই। পানির ভেতর রক্ত। তাড়াতাড়ি তাকে খুঁজতে শুরু করলাম। একটা পাথর সরিয়ে তাকে বের করলাম। মাথা রক্তাক্ত। নিথর হয়ে আছে সে। আরেক বন্ধু আরেকটি পাথরের আঘাতে আহত হয়েছে। তাদের আমরা ও অন্যরা মিলে মীরসরাই সদরের সেবা আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার মাহবুবকে মৃত ঘোষণা করলেন। গুরুতর আহত সহকর্মী আহমেদ বিন শামসকে চিকিৎসকরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করেন। রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে বিশেষ কেয়ারে আছেন। ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সালেহ উদ্দিন বলেন, সন্ধ্যা ৬টার দিকে নিহত মাহবুবের পরিবারসহ স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

নিহত মাহবুবের চাচা রাশেদুল হাসান জুয়েল বলেন, মাহবুবের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা। থাকে ঢাকার শরিন আখড়ায়। বাবা ব্যাংকার জাহাঙ্গীর হাসান আগে মারা গেছেন। মা রাজীয়া আক্তার ও ছোট বোন ডলিকে নিয়ে তাদের সংসার। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে হারানোর পর মাকে কিভাবে সান্ত্বনা দেব জানি না।

মীরসরাই থানার ওসি আব্দুল কাদের বলেন, খৈয়াছড়া ঝরনা ইতিমধ্যে অনেক দর্শনার্থীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এখানকার ঝরনাগুলোয় পর্যটন কর্পোরেশনেরর তদারকির মাধ্যমে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত অবাধ প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা প্রয়োজন।

মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, এবারের দুর্ঘটনাটি অনেক উদ্বেগজনক। জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে ঝরনাগুলোতে দর্শনার্থীদের নিরাপদ যাত্রার বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা করব।

উল্লেখ্য, মীরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ঝরনাসহ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ ঝরনায় গত ১০ বছরে অন্তত অর্ধশত দর্শনার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে অতি উৎসাহী হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপরের পিচ্ছিল স্তরগুলোতে উঠতে গিয়ে পিছলে পড়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউ আবার সাঁতার না জেনে কূপের পানিতে ডুবে মারা যান। তবে এবারের দুর্ঘটনাটি ছিল ব্যতিক্রম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্লাস শুরুর ঘোষণায় খুশি চবির শিক্ষার্থীরা
পরবর্তী নিবন্ধহার্ট ভালো রাখতে হাঁটার বিকল্প নেই