নাহ! শত কোটি ভারতীয়র প্রার্থনা কোন কাজে আসল না। আবুধাবীর শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে মাঠে লড়াই করছিল আফগানিস্তান এবং নিউজিল্যান্ড। কিন্তু মাঠের বাইরে টেনশনে চুল ছিড়ছিল ভারতীয় দল। কারণ, এই ম্যাচের উপরই যে অনেকখানি নির্ভর করছিল ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাওয়া এবং না যাওয়া। আর সে কারনেই গতকাল রবিবার অন্তত তিন ঘণ্টার জন্য ভারতীয় সমর্থকরা আফগানিস্তানকে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু সে সমর্থন কোন কাজে আসেনি। সেমিফাইনালে যাওয়া হলো না ভারতের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হলো বিরাট কোহলির দলকে। গতকাল আফগানিস্তান জিতলে ভারতের একটা সুযোগ ছিল সেমিফাইনালে যাওয়ার। কিন্তু সে সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিল নিউজিল্যান্ড। আফগানিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে পাকিস্তানের সাথে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিল নিউজিল্যান্ড। ফলে বিদায় নিতে হলো ভারতকে। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা শক্তি ভারত এবারের বিশ্বকাপ শুরু করেছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে হেরে। প্রথম ম্যাচটা হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দাঁড়াতে পারল না বিরাট কোহলিরা। টানা দুই হারে কঠিন সুতোয় বাধা পড়েছিল ভারতের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে যাওয়া। তারপরও একটা ক্ষীণ আশা ছিল। যদি আফগানরা হারিয়ে দিতে পারে নিউজিল্যান্ডকে। কিন্তু সে সুযোগ আর দেয়নি কিউরা। আফগানদের হারিয়ে পুরো ৮ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড। আর সে সাথে বিদায় ঘণ্টা বাজে ভারতের। এখন আজকের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি ভারতের জন্য কেবলই আনুষ্ঠানিকতার এক ম্যাচে পরিণত হলো।
টসে জিতে ব্যাট করতে নেমেছিল আফগানিস্তান। কিন্তু শুরুটা বিবর্ণ। কিউই পেসার বোল্ট, সাউদি এবং মিলনের তোপের মুখে পড়ে ১৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে আফগানিস্তান। চতুর্থ উইকেটে গুলবাদিন নাইব এবং নাজিবুল্লাহ জাদরান প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। এ দুজন ৩৭ রান যোগ করেছিলেন। ১৫ রান করা নাইবকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙ্গেন ইশ শোধি। এরপর বলতে গেলে কিউই বোলারদের সামনে একাই লড়াই করে গেছেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। ১৪ রান করা আফগান দলপতি মোহাম্মদ নবি কিছুটা সঙ্গ দিলেও বাকিরা দাঁড়াতে পারেনি কিউই বোলারদের সামনে। তারপরও লড়াই অব্যাহত ছিল জাদরানের। তিনিও এক পর্যায়ে রণে ভঙ্গ দিলেন। কিউই বোলারদের কচুকাটা করে ৪৮ বলে ৭৩ রান করে ফিরেন জাদরান। তার ইনিংসে ৬টি চার এবং তিনটি ছক্কার মার ছিল। শেষ পর্যন্ত ১২৪ রানের বেশি তুলতে পারেনি আফগানিস্তান। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সফল বোলার ট্রেন্ট বোল্ট। ১৭ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ২৪ রানে ২টি উইকেট নিয়েছেন টিম সাউদি।
১২৫ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুই কিউই ওপেনার ২৪ রানের বেশি তুলতে পারেনি। ইনজুরির জন্য ভারতের বিপক্ষে খেলতে না পারা মুজিব উর রহমান প্রথম আঘাত হানেন কিউই শিবিরে। ফেরান ১৭ রান করা মিচেলকে। দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের সাথে ৩১ রান যোগ করেন মার্টিণ গাপটিল। এ জুটি ভাঙ্গেন রশিদ খান। ২৩ বলে ৪টি চারের সাহায্যে ২৮ রান করে ফিরেন গাপটিল। এরপর ডেভন কনওয়েকে নিয়ে আর কোন বিপদ হতে দেননি অধিনায়ক উইলিয়ামসন। রশিদ খান, মোহাম্মদ নবী, মুজিব উর রহমানদের স্পিনকে একেবারে নির্বিষ করে দিয়ে দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। সে সাথে সেমিফাইনালও নিশ্চিত করে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের রানার্স আপ নিউজিল্যান্ড। আর কপাল পুড়ে টপ ফেভারিট হিসেবে বিশ্বকাপে আসা ভারতের। ৪২ বলে ৩টি চারের সাহায্যে ৪০ রান করে অপরাজিত থাকেন উইলিয়ামসন। আর ৩২ বলে ৪টি চারের সাহায্যে ৩৬ রান করে অপরাজিত থাকেন কনওয়ে। বলতে গেলে কোন ধরনের তাড়াহুড়ো করেনি এই দুই ব্যাটসম্যান। একেবারে হেসে খেলে দলকে এনে দেন জয়। ম্যাচ সেরা হয়েছেন নিউজিল্যান্ড পেসার ট্রেন্ট বোল্ট।