দু’বছর আগেও যে ভুটানকে পাত্তা দেয়নি বাংলাদেশ। এবার কিন্তু তাদেরকে সমীহ করতে হচ্ছে। যে ভুটানের বিপক্ষে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে কখনও হারেনি বাংলাদেশ, দুই বছর আগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে সেমি–ফাইনালেই যাদের ৮–০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল, এবার তাদেরকে নিয়েই সতর্ক মেয়েরা। তবে সেমিফাইনালের আগে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে লক্ষ্য জানাতে এসে মারিয়া মান্দা বললেন, ভুটানকে তারা ভয় পাচ্ছেন না মোটেই। নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে আজ রোববার প্রথম সেমি–ফাইনালে বাংলাদেশ সময় পৌনে ২টায় মুখোমুখি হবে দুই দল। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি গতকাল শনিবার মারিয়া–মনিকারা সেরে নিয়েছেন দশরথের লাগোয়া আর্মি হেডকোয়ার্টার্স স্টেডিয়ামে। সাফের আঙিনায় এবারই প্রথম অপরাজিত থেকে গ্রুপ পর্ব পেরিয়েছে ভুটান। স্বাগতিক নেপালকে গোলশূন্য ড্রয়ে আটকে দেওয়ার পর থেকে তাদের নিয়ে বাংলাদেশের ভাবনা কিছুটা বদলেছে। মারিয়ার কণ্ঠেও সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। ‘আগে যে ভুটানের সঙ্গে খেলেছি এবং এখনকার ভুটানের সাথে তার কিন্তু তফাত আছে, আলাদা একটা দল। কেননা, তারা অনেক উন্নতি করেছে। আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। যেহেতু কাল(আজ) সেমি–ফাইনাল, আমরা চেষ্টা করব সেরাটা খেলার। এ বছর ভুটান শক্তিশালী দল নিয়ে এসেছে। নেপালের সঙ্গে ড্র করেছে। আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। তাদেরকে দুর্বল ভাবা যাবে না। আগে ৮ গোল দিয়েছি বলে এখন দিতে পারব, সেটা ভাবনায় নিয়ে মাঠে নামা উচিত না। চেষ্টা করব যে, আমরা গোল দেইনি–এমনটা ভেবে মাঠে নামার।’ মালদ্বীপকে ১৩–০ গোলে উড়িয়ে দেওয়া ভুটানকে নিয়ে মারিয়ার কণ্ঠে সমীহের সুর থাকলেও কোনো ভীতি নেই। সাফ জয়ী এই মিডফিল্ডার বললেন, সেরাটাই নিংড়ে দিয়ে ফাইনালে ওঠার লক্ষ্য তাদের। ‘(ভুটানকে) ভয় পাওয়ার কিছু নাই। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী থাকে, সেটা জানি। ওরা শক্তিশালী দল, সেটা ভেবেই খেলব। তাদের গোলরক্ষক অনেক ভালো। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছে। আমরা সেরা প্রস্তুতি নিয়েই নামব।’ ভুটান বাধা পার হতে শুধু মাঝমাঠ নয়, সব বিভাগেই সেরা পারফরম্যান্স সতীর্থদের কাছে চান মারিয়া। ‘সব পজিশনই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু মিডফিল্ডার বা ডিফেন্স নিয়ে ভাবব না। ভুটান প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে এ টুর্নামেন্টে খেলতে আসার আগে। আমরা খেলিনি। আমরা জানি যে উন্নতি করছে তারা। তাদের বিপক্ষে সেরাটা দিতে হবে আমাদের।’ বাংলাদেশ দলের ইংলিশ কোচ বাটলার বলেন, ‘দেখুন আপনি যখন কোনো টুর্নামেন্টে খেলতে নামবেন, তখন সবকিছুই ট্যাকটিক্যাল ও টেকনিক্যাল বিষয় নয়, আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে, খুব বেশি খেলোয়াড়ও যেন চোটের শিকার না হয়। দুজন খেলোয়াড়ের ইনজুরি আছে। কয়েকজন খেলোয়াড় জ্বরের কবলে পড়েছিল। আবারও বলছি, আমি আশা করি না, এই মেয়েদের কেউ প্ররোচিত করুক। যেভাবে মেয়েরা খেলছে, আমি তাদের নিয়ে ভীষণ খুশি। আশা করি, আমরা এভাবে চালিয়ে যেতে পারব। লক্ষ্য হচ্ছে ফাইনাল খেলা। আমি অনেক দূর এসেছি এবং আসলেই চাই, বাংলাদেশ এই ট্রফি জিতুক।’
সাবিনাকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি যা বললেন, তাতে দলের মধ্যে চলা অস্থিরতার প্রমাণ মিলেছে। ‘সাবিনার জ্বর হয়েছে, সে অসুস্থ। তার সাথে আমার (আজ) কথা হয়নি। গতকাল আমি তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছি। এরপর তার সাথে আমার দেখা হয়নি। দেখুন, আমি ইংল্যান্ড থেকে এসেছি, বাংলাদেশের (দলের) সর্বোচ্চ ভালোর জন্য চেষ্টা করছি। আশা করি, সাফল্য নিয়ে এখান থেকে ফিরতে পারব।’ ভুটানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেই জাতীয় দলে অভিষেক রাঙিয়েছিলেন সাগরিকা। সাবিনার বিকল্প হিসেবে তাকে ভেবে রেখেছেন বলেও জানালেন বাটলার। ‘আমি আসলেই জানি না (সাবিনা খেলতে পারবে কিনা)। আগামীকাল এটা দেখব, ম্যাচগুলো খুব দ্রুত চলে আসছে। দলে মনিকা, সাগরিকা–আমার হাতে আক্রমণভাগেও বিকল্প খেলোয়াড় আছে। আমি মনে করি না, সাবিনা না খেলতে পারলে সমস্যা আছে। তাকে আমরা মিস করব। অনেককেই মিস করব। তবে আমি মনে করি, আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে।’