চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ এলাকার সরকারি কার্য ভবনের তৃতীয় তলায় রয়েছে চট্টগ্রাম আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর। গত বছর চারেক আগেও সেবাগ্রহীতাদের পদচারণায় মুখরিত থাকতো এই দপ্তর। কিন্তু এখন আর সে দৃশ্যের দেখা মেলে না। আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তরটির অবস্থা যেন ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দারের মতো। গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সব ধরনের বাণিজ্যিক আমদানি অনুমতি (আইপি) ঢাকা থেকে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ফলে এখন চট্টগ্রাম দপ্তর থেকে আমদানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি), রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (ইআরসি) এই দুটি নিবন্ধন সনদ নবায়ন ছাড়া আর কিছু করার ক্ষমতা রাখে না দপ্তরটি। অথচ এক সময় আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের ৫৫টি সেবার মধ্যে অধিকাংশই চট্টগ্রাম দপ্তর থেকে নিতে পারতেন ব্যবসায়ীরা। জনবল নিয়োগ দিয়ে চট্টগ্রাম আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি লেখা হয়। তারপরেও বাণিজ্যিক আইপি নিতে এখনো ঢাকায় দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে হচ্ছে। তবে গত বছরের মার্চে শুধুমাত্র দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি ২৯টি মেগাপ্রকল্পের কাঁচামাল আমদানির অনুমতি দেয়ার ক্ষমতা চট্টগ্রাম দপ্তরকে দেয়া হয়।
আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সব ধরনের আমদানি ও রপ্তানির অনুমতি ঢাকায় থেকে নিতে হয়। এ ছাড়া বহুজাতিক কোম্পানি, যৌথ বিনিয়োগ এবং শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও শিল্প আইআরসি ও শিল্প ইআরসি নিতে ঢাকার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ঢাকা থেকে অনুমোদনের পরে চট্টগ্রাম থেকে শুধুমাত্র এ সব সনদ ইস্যু করা হয়। অথচ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) চট্টগ্রাম কার্যালয় এবং বস্ত্র অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয় শিল্প আইআরসি অনুমোদনের জন্য আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর ঢাকাকে সুপারিশ করে। অনুমোদন যদি চট্টগ্রাম অফিস থেকে নেয়ার সুযোগ থাকতো তাহলে ব্যবসায়ীদের আর ঢাকায় অযথা সময় নষ্ট করতে হতো না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা ঋণপত্র না খুলে বিদেশ থেকে উপহার সামগ্রী কিংবা পণ্যের সেম্পল আনলে, সেক্ষেত্রে আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে অনুমতি নিতে হয়। গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের আগে সেই অনুমতি চট্টগ্রামের মিললেও এখন তা নিতে হচ্ছে ঢাকা থেকে। এ ছাড়া শতভাগ বিদেশী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কারখানার যন্ত্রপাতি আনতে ঋণপত্র (এলসি) লাগে না। সেক্ষেত্রে আমদানি অনুমতি (আইপি) নিলেই হয়ে যায়। বর্তমানে সেই অনুমতি নিতেও ঢাকায় দৌঁড়াতে হচ্ছে। আবার প্রবাসী পেশাজীবীরা আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের অনুমতি নিয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি আমদানি করতে পারেন। তবে বর্তমানে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিস থেকে সেই ক্ষমতা ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কারণে এ সব পণ্য আনার ক্ষেত্রেও জটিলতা পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া আমদানি অনুমতি এবং বিশেষ ক্ষেত্রে ক্লিয়ারেন্স পারমিট নিয়ে এলসি ছাড়া পণ্য আমদানি করার অনুমতি এখন ঢাকা থেকে নিতে হচ্ছে। অন্ট্রাপো বা সামায়িক আমদানি বাণিজ্যের নিমিত্তে পণ্য আমদানির অনুমতিও ঢাকা থেকে নিতে হয়। পুণঃরপ্তানির লক্ষ্যে আমদানির অনুমতিও এক সময় চট্টগ্রাম থেকে হতো। তবে তা এখন নিতে হচ্ছে ঢাকা থেকে। তৈরি পোশাক রপ্তানির পর ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় তা ফেরত আসলে বন্দর থেকে খালাস ও পুনঃরপ্তানির অনুমতি কিংবা ত্রুটিযুক্ত কাপড় ফেরত প্রদানের অনুমতিও নিতে হয় ঢাকা থেকে। শুল্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আটক পণ্যের চালান খালাসে আবেদনও করতে হয় ঢাকা অফিসে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর চট্টগ্রামের কাজের পরিধি বাড়ানোর জন্য আমরা বেশ কয়েকবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি। চট্টগ্রামের কয়েকটি অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আমাদের দাবি হলো-সব ধরনের বাণিজ্যিক আমদানি-রপ্তানির অনুমতি আগের মতো চট্টগ্রাম থেকে ইস্যু করা হোক। আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের চট্টগ্রাম দপ্তরকে জনবল নিয়োগের মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ করারও দাবি জানাচ্ছি। চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হচ্ছে, অথচ আইপি অনুমতি নিতে ঢাকার ওপর নির্ভরশীলতা মেনে নেয়া যায় না।
জানতে চাইলে আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রক আবদুর রহিম বলেন, আমাদের দপ্তরে এর মধ্যে সেবার পরিমাণ বাড়ানো হয়নি। গত বছরের মার্চ থেকে সরকারি ২৯ মেগাপ্রকল্পের কাঁচামাল আমদানির অনুমতি এখান থেকে দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আমদানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি) এবং রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (ইআরসি) আগে থেকেই দেয়া হচ্ছে।