সেপ্টেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগ ও অপারেটর আসতে পারে

চট্টগ্রামে প্রেস সচিব করিডোর হতে হবে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টতায়

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৩ মে, ২০২৫ at ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগ ও অপারেটর আসতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, আমরা সেই কোম্পানিগুলোর সাথে কথা বলছি, যাদের পুরো পৃথিবীতে স্ট্যাবলিশড রেকর্ড আছে। কোনো ফালতু কোম্পানি না। যারা ৭০৮০টা পোর্ট হ্যান্ডেল করছেন, বিভিন্ন মহাদেশে কাজ করছেন, তাদের সাথেই আমরা কথা বলছি। আমরা চাইছি এটা সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে।

গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পরে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ্‌ নওয়াজ।

প্রেস সচিব বলেন, আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি পুরো প্রসেসটা স্বচ্ছভাবে হবে। পৃথিবীর যেসব নামকরা কোম্পানি তাদের সাথে আমরা কথা বলব। যারা পুরো পৃথিবীজুড়ে ৬০১০০ টা পোর্ট হ্যান্ডেল করছে তাদের সাথে আমরা কথা বলছি। বাংলাদেশকে যে জায়গায় আমরা নিয়ে যেতে চাই সে জায়গায় যেতে হলে নাম্বার ওয়ান কোম্পানিগুলোকে আমার আনতে হবে। খারাপ রেপুটেশন নেই এমন সব কোম্পানির সাথে আমরা কথা বলব এবং সেই অনুযায়ী কাজ হবে। ওপেন টেন্ডার না হয়ে গভর্মেন্ট টু গভর্মেন্ট হতে পারে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বে যারা টপ কোম্পানি তাদেরকে এখানো নিয়োজিত করা। ছোটখাট কোম্পানি আনলে আমাদের পোর্টএর এফিসিয়েন্সি বাড়বে না, এতে হয়তো দুয়েকটা লোকের স্বার্থ উদ্ধার হতে পারে।

তিনি বলেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মূল ম্যান্ডেট হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে পরিণত করা। বাংলাদেশ এখন যে জায়গায় আছে, দেশের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিতে হলে এবং তরুণদের জন্য বিপুল কর্মসংস্থান তৈরি করতে হলে এই হাবকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব করতে হবে। এই ম্যানুফ্যাকচারিং হাব শুধু বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য নয়। এটি পুরো অঞ্চলের ৩০৪০ কোটি মানুষের জন্য হবে। চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করেই এই হাব গড়ে উঠবে। এখানে উৎপাদিত পণ্য শুধু দেশে বা আশপাশের অঞ্চলে নয়, বিদেশেও রপ্তানি হবে। এজন্য চট্টগ্রামের (বন্দরের) যতগুলো টার্মিনাল আছে সবগুলোকে সক্ষম করতে হবে।

তিনি বলেন, একজন বিদেশি রপ্তানিকারক বাংলাদেশে পণ্য তৈরি করতে আসবেন কম উৎপাদন খরচের জন্য। কিন্তু তিনি চাইবেন যত দ্রুত সম্ভব পণ্য রপ্তানি করতে। এজন্য আমাদের পোর্টের এফিশিয়েন্সি দরকার। দুবাইয়ে যেখানে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে ১ মিনিট লাগে, বাংলাদেশে সেখানে ৫ মিনিট লাগছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে রিজিওনাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে (আঞ্চলিক উৎপাদন কেন্দ্রে) পরিণত করার লক্ষ্য বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধিকে ‘প্রথম শর্ত’ হিসেবে দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা প্রায় ছয় গুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

প্রেস সচিব বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রামের সব টার্মিনাল (লালদিয়া, বে টার্মিনাল, পতেঙ্গা টার্মিনাল, মাতারবাড়ীসহ) মিলিয়ে মোট কন্টেনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা প্রায় ১২ লাখ ৭০ হাজার টিইইউ’স। ২০৩০ সালের মধ্যে তা ছয় গুণ বাড়িয়ে ৭৮ লাখ ৬০ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এসময় চট্টগ্রাম ঘিরে পুরো অঞ্চলটাই পোর্টের জন্য উপযুক্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বন্দরের দক্ষতার সাথে সংযুক্ত সড়কসহ সবকিছুরই সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মানবিক করিডোর প্রসঙ্গ : মিয়ানমার সীমান্তে সম্ভাব্য মানবিক করিডোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। করিডোর হতে হবে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টতায়। আমরা বলেছি যে, মানবিক করিডোরে আমরা ইচ্ছুক, যদি জাতিসংঘ কোনো উদ্যোগ নেয়। তাছাড়া এ ধরনের বিষয়ে দুটি দেশের সাথে কথা বলতে হয়। জাতিসংঘ যদি উদ্যোগ নেয় আর মিয়ানমার যদি রাজি থাকে, তখন বাংলাদেশ থেকে সিদ্ধান্তটা আসবে। এ বিষয় চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলা হবে।

তিনি বলেন, হিউম্যানিটারিয়ান প্যাসেজ বা মানবিক করিডোর দেওয়া নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে সরকারের কোনো আলোচনা হয়নি। রাখাইনে ‘মানবিক করিডোরের’ কথা আসছে কারণ সেখানে গৃহযুদ্ধের মত একটি সহিংসতা চলছে। সেখানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যারা আছে, রাখাইনে যারা আছে, সেখানে মানবিক একটা সংকট হয়েছে।

করিডোর নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব কথা বলছে সেটাকে ‘প্রিম্যাচিউর’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, এটা সর্বসম্মতিক্রমে হবে। আর আমরা মনে করি যে এখনো এটা অনেক অনেক দূরের বিষয়। আমরা তো বলেছি, এটা যখন চূড়ান্ত বিষয়ে আসবে তখন সবার সাথে কথা বলে, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আওয়ামী লীগের কথা বলার কোনো অধিকারই নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা রোহিঙ্গা নাম নিতেও ভয় পেত। মিয়ানমারের লোকেরা বলত রোহিঙ্গারা বাঙালি, তারাও সেই কথা বলত। রোহিঙ্গা নাম নিতে ভয় পেয়ে তারা নাম দিয়েছিল এফডিএমএন (বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক)। রোহিঙ্গা নাম না নেওয়া মানে আপনি রোহিঙ্গাদের অধিকারে বিশ্বাস করেন না।

নির্বাচন প্রসঙ্গ : নির্বাচন বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচন তো অবশ্যই, সব কাজ শেষে নির্বাচন দিয়ে একটা গণতান্ত্রিক রূপান্তর করে একটা নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা রেখে আমরা চলে যাবো। এটাই হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ।

এসময় রাষ্ট্র সংস্কারকে অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কাজ মন্তব্য করে বলেন, শেখ হাসিনা যে ভঙ্গুর অর্থনীতি রেখে গেছেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যে অতল গহ্বরে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছেন সে জায়গা থেকে তুলে আনাটা আমাদের মানে এ সরকারের একটা বড় কাজ। এই যে পুরো দেয়ালে দেয়ালে এটা কি লেখা? এই যে আমাদের ছেলেরা যারা শহীদ হয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, তারা কি লিখেছেন? তারা লিখেছেন রাষ্ট্র সংস্কার। রাষ্ট্র সংস্কারটা হল আমাদের মূল বার্তা। রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্যে অর্থনীতি সংস্কারটা মূল।

আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাইলে বলেন, অপরাধ করলে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। কে আওয়ামী লীগের দোসর, সেটা দেখে সরকার ব্যবস্থা নেয় না। সরকার যখন দেখবে আইন লঙ্ঘন হচ্ছে, তখন অ্যাকশনে যাবে, সে যেই হোক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযারা সংস্কারের কথা বলে তারা সংস্কার অর্থ বুঝে না : খসরু
পরবর্তী নিবন্ধরামুতে ১০ দিনের ব্যবধানে পুরো পাহাড় কেটে শেষ