সেপ্টেম্বরের প্রথম ২০ দিনেই ১৬ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২,৪৮৯

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ

দিন যত যাচ্ছে ডেঙ্গুর বিস্তার যেন আরো বাড়ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা, মৃতের সংখ্যা। মশক নিধনের দৃশ্যমান এবং কার্যকরী পদক্ষেপের অভাবে ডেঙ্গুর বিস্তার ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।

চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল একজনসহ মারা গেছেন ৬৯ জন মানুষ। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম বিশ দিনে চট্টগ্রামে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৪৮৯ জন রোগী। সেপ্টেম্বরেই মারা গেছেন ১৬ জন রোগী।

হাসপাতালে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ। কোথাও বেড খালি নেই, নেই কেবিনও। ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্যালাইনেরও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। টাকা দিয়েও মিলছে না স্যালাইন। সবকিছু মিলে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ। তবে নগরবাসীকে শংকিত না হয়ে সতর্কতা এবং সচেতনতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহবান জানানো হয়েছে। প্রতিদিনই নগরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন ডেঙ্গুতে। এদের মধ্যে অনেকেই হাসপাতালে আসছেন না। অনেকের হাসপাতাল পর্যন্ত আসার সামর্থ্যও নেই। যারা হাসপাতালে আসছেন শুধু তাদের নিয়েই তথ্য উপাত্ত তৈরি করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে প্রতিদিনই দেড়শ’ জনের মতো মানুষ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন।

সূত্র বলেছে, মশক নিধনে দায়িত্বশীল সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন চলতি অর্থবছর ৫ কোটি টাকা মশক নিধনে বরাদ্দ করেছে। কিন্তু কার্যত মশক নিধনের কার্যকর তেমন কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। গত অর্থবছরে সিটি কর্পোরেশন ৯০ লাখ টাকা মশক নিধনে ব্যয় করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মশক নিধন কার্যক্রমে যে ওষুধ ব্যবহার করা হয় তা অত্যন্ত নিম্নমানের। আবার ওষুধের সাথে পানির মিশ্রণ এমনভাবে করা হয় যে তাতে মশা মরে না। ফগার মেশিনের শব্দে মশা বেহুশ হলেও অল্পক্ষণের মধ্যে চাঙা হয়ে ওঠে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে ১৭১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। মারা গেছে একজন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল ১৩৪ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ২৯ জন, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে ২৮ জন,

সিএমএইচ এ ৩৩ জন, বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে ২৪ জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে ১৭ জন এবং বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ১২৩ জন মিলে মোট ৩৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের জেনারেল সেক্রেটারি রেজাউল করিম আজাদ গতরাতে জানান, মা ও শিশু হাসপাতালের কেবিন এবং জেনারেল বেড মিলে ৮০০ শয্যা রয়েছে। এখানে একটিও বেড খালি নেই। গতকাল হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল ৭৭জন। আরো ৭০ জনের মতো ডেঙ্গু রোগীকে আউটডোরে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। রেজাউল করিম আজাদ বলেন, শুধু জেনারেল বেড বা কেবিনই নয়, হাসপাতালের আইসিইউ এবং এইচডিইউতেও কোনো সিট খালি নেই। অনেক রোগী নাম জমা দিয়ে ওয়েটিং এ আছেন। তারা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেড খালি হলেই হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেবেন।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে চট্টগ্রামের একাধিক চিকিৎসক দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এবং ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড চালু হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতালেই রয়েছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, জ্বর হলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। রক্ত পরীক্ষা করে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে তারা বলেন, কয়েকদিনের জ্বরেই শারিরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। নানা ধরণের জটিলতা নিয়ে অনেকেই হাসপাতালে আসেন। তখন তাদের চিকিৎসায় যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত বেড রয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, শংকিত হওয়ার কিছু নেই। আতংকিত না হয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি। সিভিল সার্জন বলেন, চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার প্রত্যেকটি স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে ৫টি করে ডেডিকেটেড ডেঙ্গু রোগীর বেড রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চমেক হাসপাতাল ও ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালেও পর্যাপ্ত বেড রয়েছে। এসব বেডের বাইরেও যদি বেড লাগে তা দেয়ার সক্ষমতা আমাদের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর এলো চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণে
পরবর্তী নিবন্ধচলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ৫ দফা