সেন্টমার্টিনে কচ্ছপের বাচ্চা প্রজননে সুফল মিলেছে। মৌসুমের প্রথম দফায় গত ১০ দিনে কৃত্রিম হ্যাচারিতে জন্ম নেয়া প্রায় ৭০০ কচ্ছপের বাচ্চা সাগরে সফলভাবে অবমুক্ত করা হয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিনে এসব কচ্ছপের বাচ্চা সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। সেন্টমার্টিনে কচ্ছপের বাচ্চা প্রজননের এ প্রক্রিয়াকে ইতিবাচক ও কচ্ছপ রক্ষার সুখবর হিসেবে দেখছেন পরিবেশবাদীরা।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি প্রজনন মৌসুমে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় আট শতাধিক কচ্ছপের ডিম সংগ্রহ করেন ‘আমার সেন্টমার্টিন’ নামক সংগঠনের সদস্যরা। এসব ডিম পরিবেশ অধিদপ্তরের হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করা হয়। সেন্টমার্টিনের গলাচিপায় অবস্থিত মেরিন পার্কে সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম সংরক্ষণ ও প্রজনন প্রক্রিয়ার তদারকি করা হয়। প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে সংরক্ষণ ও প্রজনন হ্যাচারি থেকে এসব কচ্ছপের বাচ্চা অবমুক্তকরণ প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়। এর অংশ হিসেব গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ১১১টি, ১ মার্চ ১৬৭টি, ২ মার্চ ৩৭টি, ৪ মার্চ ১৭১টি এবং সর্বশেষ ৬ মার্চ ১৮৩টি কচ্ছপ ছানা সাগরে অবমুক্ত করা হয়। এছাড়া তার আগের সপ্তাহে আরো ১৭০টি কচ্ছপের বাচ্চা সাগরে অবমুক্ত করা হয়। সর্বমোট ৬৮৮টি বাচ্চা অবমুক্ত করা হয়েছে।
‘আমার সেন্টমার্টিন’র সমন্বয়ক আলী হায়দার জানান, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত প্রায় আট শতাধিক ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিমগুলো থেকে ক্রমান্বয়ে বাচ্চা ফুটছে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে গড়ে ৬০ দিন লাগে। এখন পর্যন্ত ৭০০’র কাছাকাছি বাচ্চা সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। অবশিষ্ট ডিমগুলোও ফুটে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাচ্চা ফুটবে। তখন সেগুলোও অবমুক্ত করা হবে।
‘আমার সেন্টমার্টিন’ সংগঠনের সমন্বয়ক আয়াত উল্লাহ বলেন, সেন্টমার্টিন বেশ পরিবেশ ঝুঁকিতে রয়েছে। নানাভাবে এই দ্বীপের পরিবেশ দিনকে দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই দ্বীপ ঘিরে সামুদ্রিক প্রাণীদের আবাস্থলও এখন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা নিজেরা সচেতন হয়ে কচ্ছপের ডিমগুলো সংগ্রহ করেছি। এতে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা বেশ সহযোগিতা করেছে। তাদের আন্তরিক সহযোগিতায় ৮০০’র বেশি ডিম সংগ্রহ করতে সক্ষম হই। ডিমগুলো বাচ্চা ফুটে এখন সাগরে যাচ্ছে–এটা আমাদের জন্য খুবই সুখের।
সেন্টমার্টিনস্থ পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মী আবদুল আজিজ বলেন, সেন্টমার্টিনকে কচ্ছপসহ সকল সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য নিরাপদ প্রজনন ও আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। পৃথিবীকে মানুষের বসবাস উপযোগী রাখতে হলে প্রাণীকূলের উপস্থিতি জরুরি। তারই অংশ হিসেবে কচ্ছপের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে সাগরে অবমুক্ত করা হচ্ছে। এতে ‘আমরা সেন্টমার্টিন’ সংগঠনের সদস্যরা অসাধারণ সহযোগিতা করেছে। তাদের এই সহযোগিতা প্রসংশনীয়।