সেই ১৩ তলা ভবনে আবার উচ্ছেদ অভিযান

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৫ জুন, ২০২১ at ৭:১০ পূর্বাহ্ণ

উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর নগরীর মোগলটুলীর বহুল আলোচিত ভবনটিতে আবারো অভিযান শুরু হয়েছে। ১০ তলার অনুমোদন নিয়ে ১৩ তলা ভবন নির্মাণ এবং পার্কিং এরিয়াতে নির্মিত অফিস দোকান ও ডুপ্লেক্স বাড়ি গুড়িয়ে দেয়ার কার্যক্রম আবারো শুরু হয়েছে। নগরীর কমার্স কলেজ রোডের মোগলটুলী কাটা বটগাছ মোড় এলাকার ভবনটিতে গত ৭ জুন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলে ভবনটির ডেভলপার উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ আনেন। এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হওয়ার পর গতকাল আবারো তিনটি ফ্লোরসহ অননুমোদিত অংশ ভেঙে দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়।
সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সকালে সিডিএ’র স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে ভবনটিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এই সময় পঞ্চাশ জনেরও বেশি শ্রমিক নকশা বহির্ভূত ও অনুমোদনহীন অংশ ভেঙে ফেলার কার্যক্রম শুরু করেন। গত ৭ জুন ভবনটিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছিল সিডিএ। কিন্তু ভবন মালিক উচ্চ আদালত থেকে অভিযানের উপর স্থগিতাদেশ আনেন। গত বৃহস্পতিবার এই স্থগিতাদেশ স্থগিত করা হলে সিডিএ গতকাল নতুন করে ভবনটিতে অভিযান শুরু করে।
মোগলটুলী সড়কের কাটা বটগাছ এলাকায় রাস্তার পাশে সুউচ্চ ভবনটি অবস্থিত। সাতকানিয়ার রূপনগর গ্রামের হাজী আবদুল করিমের পুত্র মোহাম্মদ জানে আলম নিজের এবং প্রতিবেশী নুর আলী গং, মোহাম্মদ ফিরোজ গং এবং মোহাম্মদ নওশাদ গং-এর জায়গাসহ মোট সাড়ে আঠার গণ্ডা জায়গার উপর ১০ তলা ভবন নির্মাণের জন্য সিডিএ থেকে অনুমোদন নেন। কিন্তু তিনি ১৩ তলা ভবন নির্মাণ করে কয়েক কোটি টাকার ফ্ল্যাট বিক্রি করে দেন। অন্তত চল্লিশ জনের কাছে ফ্ল্যাট বিক্রি করা হলেও মাত্র কয়েকজনকে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিয়েছেন। বাকিরা কবে ফ্ল্যাট পাবে তাও অনিশ্চিত। ১০ তলার অনুমোদন নেয়া ভবনটি ১৩ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করায় সিডিএতে অভিযোগ করা হয়। সিডিএ পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে নকশা জালিয়াতির ব্যাপারটি নিশ্চিত হলে অনুমোদিত নকশার বাইরের অংশ ভেঙে ফেলতে নোটিশ জারি করে। এই নোটিশ প্রাপ্তির পর মোহাম্মদ জানে আলম হাইকোর্টে গিয়ে সিডিএর নোটিশের বিরুদ্ধে একটি রিট পিটিশর নম্বর ৯০৩১/২০১৯ দাখিল করেন। সিডিএর বিরুদ্ধে জারিকৃত পিটিশনে ফ্ল্যাট ক্রেতাদের পক্ষ থেকে আয়কর আইনজীবী মোহাম্মদ আবু তালেব, মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম এবং আবদুল গফুর পক্ষভুক্ত হন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে হাই কোর্ট সিডিএ থেকে নথি তলব করেন। নথি পরীক্ষা করে হাই কোর্ট জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে পিটিশনটি খারিজ করে দেন এবং মোহাম্মদ জানে আলমকে দশ লাখ টাকা জরিমানাও করেন। একই সাথে জানে আলমের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে একটি মামলা করতে হাই কোর্টের কোর্ট কিপারকে নির্দেশ প্রদান করেন। কোর্ট কিপার ৩২৮/২০ মূলে একটি মামলা দায়ের করলে মোহাম্মদ জানে আলম চলতি বছরের পহেলা ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হন এবং মাস দেড়েক কারাভোগ করে জামিনে বের হয়ে আসেন।
হাই কোর্ট থেকে ভবনটির অননুমোদিত অংশের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু লকডাউন, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে গত ৭ জুন সিডিএ অভিযান পরিচালনা করে। সিডিএ ভবনটির উপরের দিকের তিনটি ফ্লোরের ছাদ ফুটো করে দিয়ে ভাঙতে শুরু করে। নিচের পার্কিং এরিয়াতে নির্মিত অফিস, দোকান ও ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট ভাঙার কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু পরদিনই হাই কোর্ট থেকে অভিযান স্থগিত করার ব্যাপারে একটি নির্দেশ নিয়ে আসে মালিক পক্ষ। আদালতের নির্দেশে সিডিএ অভিযান স্থগিত করে। কিন্তু হাই কোর্ট বিষয়টির উপর শুনানি গ্রহণ এবং রায় প্রদানের জন্য চট্টগ্রামের দ্বিতীয় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে পাঠান। চট্টগ্রামের দ্বিতীয় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে গত ১৪ জুন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গত বৃহস্পতিবার স্থগিতাদেশ বাতিল করা হলে গতকাল সিডিএ পুনরায় অভিযান শুরু করে। সিডিএর স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে ইমারত নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান আবু ইসা আনছারী, অথরাইজড অফিসার মো. হাসান, সহকারী অথরাইজড অফিসার মো. ওসমান ও পেশকার ফয়েজ আহমদ অংশ নেন। অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অননুমোদিত অংশ ভেঙে ফেলা হবে বলে সিডিএর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআড়াই মাস পর খুলেছে কক্সবাজারের হোটেল
পরবর্তী নিবন্ধপিএমখালীতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ১, আহত ৭