চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সহকারী প্রক্টর অরুপ বড়ুয়ার স্ত্রী অভি বড়ুয়াকে নিয়োগ দিতে নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পরিষদ সিন্ডিকেট। গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪৪তম সিন্ডিকেটে তার নিয়োগের সুপারিশ বাতিল করা হয়। অপরদিকে নানা বিতর্কের মধ্যেও বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই গত ১৩ জুলাই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তিন বিভাগে সাত শিক্ষক চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে স্থায়ী প্রভাষক পদে একজন। আইন বিভাগে স্থায়ী প্রভাষক পদে দুই জন। ফাইন্যান্স বিভাগে স্থায়ী প্রভাষক পদে দুই জন, সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে অস্থায়ী প্রভাষক পদে একজন এবং সহকারী অধ্যাপক পদের বিপরীতে অস্থায়ী প্রভাষক পদে একজন। যা জানেন না সংশ্লিষ্ট বিভাগের সভাপতিও।
সহকারী প্রক্টর অরুপ বড়ুয়ার স্ত্রীর নিয়োগ বাতিলের বিষয়ে সিন্ডিকেটের একজন সদস্য বলেন, আবেদনপত্রে ত্রুটিপূর্ণ তথ্য দেওয়া, বিজ্ঞাপনের শর্ত পূরণ না করা ও পালি বিভাগের সভাপতির আপত্তির কারণে অভি বড়ুয়ার নিয়োগের সুপারিশের অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
জানা যায়, পালি বিভাগের শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য একজন স্থায়ী ও একজন অস্থায়ী পদে মোট দুজন প্রভাষক নিয়োগের কথা ছিল। তবে বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে অতিরিক্ত আরও দুজনকে সুপারিশ করেছে বোর্ড, যা ইউজিসির নির্দেশনা ও বিশ্ববিদ্যালয় আইনের পরিপন্থি। এ কারণে গত ৮ এপ্রিল অন্যায়ভাবে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ তুলে চবি উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে শিক্ষক প্রার্থী সজীব সিংহ ও বোধি মিত্র শ্রামনের পক্ষে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট ও চট্টগ্রাম জজকোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ রাসেল। এছাড়া এই নিয়োগ বোর্ডে (১৩ মার্চ) অভি বড়ুয়া নামে এক প্রার্থীকে পালি বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য ভাইভা বোর্ডে সর্বোচ্চ সুপারিশ করেছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। এসময় বিভাগীয় সভাপতির নোট অব ডিসেন্ট (দ্বিমত পোষণ) ও পরিকল্পনা কমিটির মতামত আমলে নেওয়া হয়নি। অভি বড়ুয়া নামের এই প্রার্থী ২০০৩ সালে শিক্ষাজীবন শেষ করলেও গত ২০ বছরে তার কোনো চাকরির অভিজ্ঞতা, উচ্চতর ডিগ্রি কিংবা প্রকাশনা নেই।
বিভাগীয় পরিকল্পনা ছাড়া হুটহাট শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপাচার্যের চার বছর মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। যেকোনো সময় পদ পরিবর্তন হতে পারে। তাই ব্যক্তিগত স্বার্থে ও জনবল বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে মরিয়া হয়ে উঠেছেন প্রশাসনপন্থিরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪৩তম সিন্ডিকেট সভায় ফাইন্যান্স বিভাগে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাছাড়া আইন বিভাগ এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ব্যাপারে কিছুই জানেন না ফাইন্যান্স বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. জান্নাত আরা পারভীন। তিনি বলেন, কোথায় কী বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে আমি দেখিনি। এ বিষয়ে আমরা তেমন কিছু জানিও না।
খবর নিয়ে জানা গেছে, ফাইন্যান্স বিভাগে বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৯ জন শিক্ষক। এর মধ্যে ১৮ জন অধ্যাপক এবং বাকি একজন সহযোগী অধ্যাপক রয়েছেন। বিভাগে নতুন কোনো শিক্ষক লাগবে কিনা প্রশ্নের জবাবে ড. জান্নাত আরা বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের বিভাগে নতুন কোনো শিক্ষকের প্রয়োজন নাই। যথেষ্ট শিক্ষক আছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শিক্ষক চেয়ে কোনো চিঠিও দিইনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য ও ফাইন্যান্স বিভাগের প্রফেসর ড. মো. শামীম উদ্দিন বলেন, ফাইন্যান্স বিভাগে কোনো পরিকল্পনা কমিটিই হয়নি। পরিকল্পনা কমিটির সভা ছাড়াই সরাসরি শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে প্রশাসন। এটা আইনের পরিপন্থি।
জানা যায়, বর্তমানে আইন বিভাগে ২৩ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। এর মধ্যে সহকারী অধ্যাপক পদে ৯ জন, সহযোগী অধ্যাপক পদে ২ জন এবং অধ্যাপক পদে ১৩ জন। আইন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর সিফাত শারমিন বলেন, প্রশাসন আইন বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ হাছান মিয়া বলেন, সিন্ডিকেট ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বিভাগগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।