হাটহাজারীতে স্বাধীনতা বিরোধীর নামে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফজলুল কাদের চৌধুরী আইডিয়্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাম পরিবর্তন করে অবশেষে এলাকার নামেই হচ্ছে। সর্বশেষ ‘রহিমপুর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ নামে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে শিক্ষাবোর্ডে। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ কাজী আব্বাছ আলীর স্বাক্ষরে গত ১৮ এপ্রিল নতুন নামকরণের প্রস্তাবনা সংক্রান্ত এ আবেদন শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়। এর আগে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে এলাকার নামে নামকরণের নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। হাটহাজারীর রহিমপুর এলাকার রুহুল্লাপুঁর গ্রামে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। সে হিসেবে এলাকার নাম অনুসারে ‘রহিমপুর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ নামেই নামকরণের প্রস্তাবনা দিয়েছে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। এ সংক্রান্ত আবেদন পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতার দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির আবেদন আমরা পেয়েছি। তবে প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মতি প্রয়োজন হয়। এ বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে লিখেছি। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠদানের অনুমতি বহালের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতার।
প্রসঙ্গত, এক রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আদেশ মেনে প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠদানের অনুমতি বাতিল করে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড।
শিক্ষাবোর্ডের কলেজ শাখা কর্তৃক গতবছরের (২০২২ সালের) ৩১ অক্টোবর ইস্যুকৃত এক চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি বাতিলের এ তথ্য জানানো হয়। একই সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমও স্থগিত রাখে শিক্ষাবোর্ড।
মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনা অনুসারে সভায় সর্বসম্মতিতে এলাকার নামে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি ‘রহিমপুর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ নামে নামকরণের প্রস্তাবনা শিক্ষাবোর্ডে পাঠানো হয়। নতুন নামকরণের প্রস্তাবনা বিষয়ে শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক আজাদীকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রতিপালনে বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশক্রমে প্রতিষ্ঠানটিকে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। তাদের বিদ্যমান নাম পরিবর্তন করে এলাকার নামে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণে প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে পাঠাতে বলা হয়েছিল। তারা এলাকার নামে নতুন নামকরণের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মতির জন্য আমরা লিখেছি। মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পেলে প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যমান নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠদানের অনুমতি বহালের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও জানান বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক।
উল্লেখ্য, দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান, সড়ক ও স্থাপনা হতে যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধীদের নাম পরিবর্তনের নির্দেশনা চেয়ে অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন ২০১২ সালে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট (নং ৫৫৩১/২০১২) দায়ের করেন। শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর আদালত রায় দেন। রায়ে ৬০ দিনের মধ্যে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান/স্থাপনা হতে যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধীদের নাম মুছে ফেলার নির্দেশনা দেয়া হয়।
স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে পরিচিত ফজলুল কাদের চৌধুরীর নামে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উপজেলার রহিমপুরে ১৯৯০ সালে ‘ফজলুল কাদের চৌধুরী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়’ নামে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলেজে উন্নীত হয়।
পরে নাম রাখা হয় ‘ফজলুল কাদের চৌধুরী আইডিয়্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’। স্কুল শাখায় নার্সারি থেকে দশম শ্রেণি এবং কলেজ শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি ও পাঠদান চলে প্রতিষ্ঠানটিতে। তবে হাইকোর্টের আদেশ মেনে সম্প্রতি (২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর) প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখার (উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে) পাঠদানের অনুমতি বাতিল করে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। একই সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমও স্থগিত রাখা হয়।
মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ মেনে নাম পরিবর্তনে দফায় দফায় নির্দেশনা দেয়ার পরও সেটি বাস্তবায়ন না করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এ ব্যবস্থা নেয় শিক্ষাবোর্ডের কলেজ শাখা। তবে কলেজ শাখার পাঠদানের অনুমতি বাতিল করা হলেও প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখার পাঠদানের অনুমতি বহাল ছিল।