মীরসরাই উপজেলার খৈয়াছরা রেলগেটে সম্প্রতি মাইক্রো দুর্ঘটনায় নিহত মোট ১৩ শিক্ষার্থী প্রাণ হারানো সেই দুর্ঘটনাস্থলের রেলগেটে এখন দায়িত্ব পালন করছেন ৫ জন গেটম্যান। উক্ত ৫ জন গেটম্যান হলেন মেহরাব, সাগর, নকুল দাস, রিপন ও সুভাস। এই গেটের জন্য মোট পদ ৩টি। দুর্ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনে ছিল ২ জন।
১২ ঘণ্টা করে শিফটিং দায়িত্বের তখন দায়িত্বে ছিল সাদ্দাম। সে গেট দিয়ে বা খোলা রেখে জুমার নামাজে গিয়েছিলেন তিনি।
দুর্ঘটনার পর সেখানে ৩ জন গেটম্যানের স্থলে অতিরিক্ত আরও ২ জন দেয়া হলো। কিন্তু এমন আরো অনেক দুর্ঘটনাপ্রবণ রেল গেট রয়েছে যেখানে তিনটি পদের মধ্যে ২ জন করে দায়িত্ব পালন করছেন। যা অনেক বেশী ঝুঁকিপূর্ণ। সীতাকুণ্ড থেকে ফেনী পর্যন্ত ২৭টি বৈধ রেল ক্রসিংয়ের প্রতিটি ক্রসিংয়েই নেই পর্যাপ্ত লোকবল। প্রতি গেটে তিনজন করে গেটম্যানের পদ থাকলেও ৮টি গুরুত্বপূর্ণ ও এনালগ গেটে ২ জন করে দায়িত্ব পাল করছেন। অথচ এসব গেটে ন্যূন্যতম ৪ জন করেই প্রয়োজন বলে মনে করে সচেতন মহল।
মীরসরাই সদর রেলগেটের গেটম্যান উপ্যলাইন মারমা জানান, সেখানেও ৩টি পদ থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে ২ জন দায়িত্ব পালন করছেন। এতে অনেক সময় বেশ ঝুঁকিপূর্ণ সময় পার করতে হয়। জরুরি প্রয়োজনে বাথরুমেও যাবার সুযোগ থাকে না। কারণ একটার পর একটা সিডিউল ট্রেন থাকে কখনও। কোন কোন সময় একটু খাবার বা বাজার আনতে যেতে হয়। একজন দিনে ঘুমালে আরেকজন রাতে ঘুমায়। তাই এক পায়ে ঘন্টার পর ঘন্টা গেটেই অবস্থান করতে হয়।
দুজন করে চারজনের শিফটিং হলে অনেক সহজ হতো। পরস্পর সহযোগিতা করে শতভাগ দায়িত্ব পালন করা যেত। গেটম্যান উপ্যলাইন মারমা আরো বলেন, এই গেইটটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ, ফটিকছড়ি সংযোগ সড়ক বলে অনেক রকম গাড়ি এই সড়কের গেট দিয়ে পারাপার হয়। আমরা ঊর্ধ্বতনকে এ বিষয়ে কয়েকবার জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষ আরেকজনের ব্যবস্থা করে দিবেন বলেও এখনও করেননি। জানা গেছে, এমন দশা চট্টগ্রাম থেকে লাকসাম পর্যন্ত অনেক রেলগেইটেরই। আবার ইন্টারলক ও নন ইন্টার লক গেইটের বিষয়েও কিছু সমস্যা আছে। নন ইন্টার লক গেটগুলো দুপাশেই গিয়ে বন্ধ করতে হয়। নেই কোন সাইরেন। তাই অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।
মীরসরাই সদরের গেটটি নন ইন্টারলক হওয়ায় ঝুঁকিও অনেক বেশী।
এ বিষয়ে রেলের এই অঞ্চলের দায়িত্বরত ঊর্ধ্বতন উপ সহকারি প্রকৌশলী রিটন চাকমা বলেন, সীতাকুণ্ড থেকে ফেনী পর্যন্ত আমার এলাকা। এই এলাকাকে নিরাপদ রাখতে আমি শূন্য ৮টি পদের জন্য লোকবল চেয়েছি। আশা করছি শীঘ্রই এর সমাধান হবে। তবে প্রতি গেইটে ন্যূন্যতম ৪ জন করে গেটম্যানের বিষয়ে তিনি বলেন, এই প্রস্তাবনাও আমি ঊর্দ্ধতন পর্যায়ে জানাব। এ বিষয়ে মীরসরাইয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, এতও স্বল্পসংখ্যক গেটম্যান দিয়ে গেট চালানো অনেকটা অমানবিক। ন্যূনতম মানবিক নানা দিক বিবেচনা করে রেললাইনগুলোতে গেটম্যান পদে লোকবল বৃদ্ধি খুবই প্রয়োজন।