সেই ওসমান-নাসির সাময়িক বরখাস্ত

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ইফতার মাহফিলে চেয়ারে বসা নিয়ে ধস্তাধস্তি ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। ২৭ এপ্রিল শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আলীম স্বাক্ষরিত পৃথক দুই অফিস আদেশে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুজন হলেন- শিক্ষাবোর্ডের হিসাব শাখার সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ওসমান গণি ও কলেজ শাখার স্টেনোগ্রাফার মো. নাসির উদ্দিন। এর মাঝে হাইকোর্টের রিট জালিয়াতি ও চেক জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনায় এর আগেও দুইবার সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন ওসমান গণি। আর কর্মচারী সংগঠনের নেতা হিসেবে দাপট দেখিয়ে বেড়ানো মো. নাসিরের বিরুদ্ধেও রয়েছে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ। এবার শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে একইসাথে সে-ই ওসমান-নাসির দুজনই সাময়িক বরখাস্ত হলেন।

এদিকে, একই ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত দুজনের পাশাপাশি আরো তিন কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেয়া হয়েছে। শোকজ পাওয়া বাকি তিন কর্মচারী হলেন- শিক্ষাবোর্ডের কম্পিউটার শাখার সহকারী প্রোগ্রামার আবুল হাসনাত মো. রাজু আহমেদ, সংস্থাপন শাখার অফিস সহকারী মো. জাহেদ হোসেন ও হিসাব শাখার অফিস সহকারী আইউব আলী। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হককে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন বোর্ডের উপ-পরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) মো. তাওয়ারিক আলম ও উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) নারায়ণ নাথ।
গত মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) শিক্ষাবোর্ড মিলনায়তনে (৯ তলায়) ইফতার ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়। বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন শাখা প্রধানসহ বোর্ডের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। শিক্ষাবোর্ড ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ইফতারের আগ মুহূর্তে স্টেনোগ্রাফার মো. নাসিরের পাশে থাকা খালি চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে যাচ্ছিলেন কম্পিউটার শাখার সহকারী প্রোগ্রামার আবুল হাসনাত মো. রাজু আহমেদ। এ সময় তাকে সেখানে বসতে বাধা দেন নাসির। ওই মুহূর্তে পাশ থেকে চিৎকার করে নাসিরের দিকে তেড়ে আসেন সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ওসমান গণি। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ওসমান গণি ও নাসিরের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একে অপরকে ধান্ধাবাজ, চোর-জালিয়াত বলে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে।
কর্মচারী আবুল হাসনাত মো. রাজু, জাহেদ ও আইউব আলীও এতে যোগ দেন।
বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সকল শাখা প্রধান ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামনেই তারা এ বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। হট্টগোল করেন। পরে কয়েকজন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে তাদের নিবৃত্ত করা হয়। এ ঘটনার পরদিন বুধবার (২৭ এপ্রিল) বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল আলীমের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ, বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী, উপ-পরিচালক (হি: ও নি:) মো. তাওয়ারিক আলমসহ সকল শাখা প্রধান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সভায় সর্বসম্মতিতে মঙ্গলবার ইফতার মাহফিলে সংঘটিত ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।
শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ মনে করে, বোর্ডের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতিতে শিষ্টাচার বর্হিভূত ও চাকুরির শৃক্সখলা পরিপন্থী আচরণের মাধ্যমে বিশৃক্সখলা সৃষ্টি করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বোর্ডের সুনাম ও মর্যাদাহানি করেছেন। যা সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী অসদাচরণের শামিল। এহেন অসদাচরণের অভিযোগে ওসমান গণি ও নাসিরকে সাময়িক বরখাস্ত এবং অপর তিন কর্মচারীকে শোকজ করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল আলীম আজাদীকে বলেন, সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাদের এই শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
প্রসঙ্গত, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এই ওসমান-নাসিরে দীর্ঘ দিন ধরে অস্থির চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। এই দুজনের মধ্যে অনেক বছর ধরে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। কিন্তু সামপ্রতিক সময়ে দুজনের বিরোধ চরম আকারে রুপ নিয়েছে। যার ফলে শিক্ষাবোর্ড জুড়ে অস্থিরতা বেড়েছে বলে মনে করেন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সবমিলিয়ে বোর্ডের শৃক্সখলাও ভেঙে পড়ার কথা জানিয়েছেন কেউ কেউ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাইকোর্টের রিট জালিয়াতি ও চেক জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনায় এর আগেও দুইবার সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন ওসমান গণি (বর্তমানে সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা)। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে চাকরিতে যোগদানের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আগের দুই দফায় সাময়িক বরখাস্তের ঘটনায় দীর্ঘসময় কোণঠাসা হয়ে থাকলেও সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্তীর আমলে এই কর্মকর্তা (ওসমান গণি) ফের চাঙা হয়ে উঠেন বলে বোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানান। এখন শৃক্সখলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে তৃতীয়বারের মতো সাময়িক বরখাস্ত হলেন ওসমান গণি।
অন্যদিকে, কর্মচারী সংগঠনের নেতা হিসেবে দাপট দেখিয়ে বেড়ানো মো. নাসিরের বিরুদ্ধেও অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে কর্মচারী সংগঠনের নেতা পরিচয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার অভিযোগ এই নাসিরের বিরুদ্ধে। তাছাড়া বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে প্রায়ই সময় নাসির খারাপ আচরণ করেন বলে অভিযোগ বোর্ডের একাংশের।
শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ওসমান ও নাসির দুজনেই নামে-বেনামে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছেন দুদকে (দুর্নীতি দমন কমিশনে)। সে অভিযোগ আমলে নিয়ে তা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তও নিয়েছে দুদক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকলকাতায় আটকা জাহাজডুবির শিকার ১৫ বাংলাদেশি নাবিক
পরবর্তী নিবন্ধরাঙামাটিতে নির্মাণাধীন সেতু ভেঙে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২০