আচ্ছা, মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা! কেমন কেটেছিল? কেমন বন্দীজীবন ছিল? ইচ্ছে করলেই কী বাসা হতে বের হতে পারতাম?
নাতো। আমাদের কোন দৌড়ঝাঁপ ছিল না। ব্যস্ততা ছিল না। অফিস যাওয়ার মত তাড়াহুড়ো নেই। চুপচাপ। ঠিক এমনই পরিবেশে আমরা করোনাকাল কাটিয়েছি। নিশ্চয়ই মনে পড়ে।
এত বছর পর গীতিকবি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী সেই সময়কে তুলে ধরেছেন।
“সেই এক সময় ছিল
ঘরে বসে চুপচাপ
আশেপাশে কেউ নেই
নেই, নেই কোন দৌড়ঝাঁপ
দিন চলে যেত
তুমি আর আসতে না
বিরহী সময় কিছুতেই কাটতো না
সোনালী অতীত উঁকি দিতো
দিতো ধরণা
কানের কাছে গুনগুন
পাহাড়ি ঝর্ণা।। ”
ঠিক এভাবেই লিখেছেন গানের কথা গীতিকবি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। আর সুর করেছেন পিলু খান। গেয়েছেন কণ্ঠশিল্পী পান্থ কানাই। আজব রেকর্ডস থেকে রিলিজ হওয়া “সেই এক সময় ছিল” গানটি শুনলেই করোনাকালীন সময়কে মনে করিয়ে দেয়। কেমন দিন পার করে এলাম। কত মানুষ হারিয়ে গেল। প্রিয় মানুষকে শেষ বিদায় দিতেও পারেনি অনেকে। আসলেই–সেই এক সময় ছিল।
গীতিকবি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী এমন বাস্তব রূপকে কবিতায় এনেছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই গানে আমি করোনাকালীন আমাদের জীবনের ছবি আঁকার চেষ্টা করেছি। ঐ সময়কালে আমাদের আবেগের জায়গাও সীমিত হয়ে যায়। শারীরিক ও মানসিকভাবে আমরা একটি বৃত্তের মাঝখানে বসবাস করেছি। অস্থিরতায় কাটতো–প্রিয় মানুষের সাথে দেখা না আকুলতা, হঠাৎ চারদিকের এমন পরিবর্তন–এসবকেই ঘিরে এই গান”।
“এই মন তখন চাইতো ভীষণ
তোমার কাছে যেতে হাওয়ায় ভেসে
নীলিমায় মিশে
তোমার কথায় নাইতে
ইচ্ছে হতো উড়তে
এক চক্কর, দুই চক্কর, তিন চক্কর, চার চক্কর
উড়তে উড়তে হালকা পায়ে
তোমাদের ছাদে নামতে
সংশয় ছিল, তবু মন মানতো না।”
এই গানের সুরকার পিলু খান। তিনি সবসময়ই ব্যতিক্রমী একজন সুরকার। এই গানেও তিনি তাঁর আভিজাত্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। যাঁরা শুনেছেন গানটি, অবশ্যই মানবেন, এমন বিষয়ের কথামালাকে সুর করা কতেটা চ্যালেঞ্জিং। এমন কাজ পিলু খানের ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়।
“সেই এক সময় ছিল” গান নিয়ে আলাপকালে পিলু ভাই বললেন, “গানের সুর কথার উপর বসিয়ে করা হয়। এই গানের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এই গানের কথা যেহেতু করোনাকালীন সময়ের, তাই স্বাভাবিকভাবেই ঐ সময়ের বাস্তবতার কথা চিন্তায় ছিল। যাক, এরপর গানটির সুরের কাজ শেষ হওয়ার পর মনে করেছি এই গানের জন্য একটা Powerful Voice দরকার। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশে এমন Powerful Voice এর সংখ্যা খুব বেশি নেই। জুয়েল (পান্থ কানাই) আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ। ও আমার Favourite Drummers. জুয়েল যখন গান করা শুরু করে, তখন দেখি ওর Voice Powerful ও Unique… এই গান সুর করার প্রায় দুই বছর অপেক্ষার পর জঙ্গী ভাই ও আমি ঠিক করি, এই গান জুয়েলের গলায় ভালো লাগবে। আমি তখন জুয়েলকে জানাই। সে–ও উৎসাহ নিয়ে গানটি করার জন্য রাজী হয়। গানটা পান্থ কানাই ভালো গেয়েছে। আমার মনে হয় অন্য কারোর গলায় গানটি এতো ভালো শুনাতো না। ”
আসলেই গানটি অন্যরকম। যেমন কথায়, সুরে ও গায়কীতে। এবার আসা যাক এই গানের কণ্ঠশিল্পী পান্থ কানাইয়ের অনুভূতি প্রসঙ্গে। পান্থ কানাই বললেন: “ সচরাচর যেমন গান করি, তার থেকে একদমই অন্যরকম। ব্যতিক্রমী কথা ও সুর। শ্রদ্ধেয় জঙ্গী ভাই এবং শ্রদ্ধেয় পিলু ভাই–দুজনেই আমার নমস্য মানুষ। সংগীতের ভুবনে দুইজনই আমার Idol… তাঁদের সাথে কাজ করতে পারা আমার জন্য পরম পাওয়া। বিশেষ করে পিলু ভাইয়ের সুরে গাইতে পারা। আমার সংগীত জীবনে এটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
আজব রেকর্ডস থেকে রিলিজকৃত গান বরাবরই একটু ব্যতিক্রমী। “সেই এক সময় ছিল” গানটির ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। এনিমেশান ভিডিওতে রিলিজ হয়েছে। দৃষ্টি নন্দন। যার ফলে নতুনত্ব এনেছে গানের বিষয়, সুর ও কণ্ঠের সাথে। এনিমেশানের কাজটি করেন মীর হিশাম। আর শব্দ সংযোজনের কাজটি করেছেন আমজাদ হোসেন বাপ্পি।
আজব রেকর্ডস কর্ণধার জয় শাহরিয়ার বলেন: “আজব রেকর্ডস সবসময়ই দর্শক–শ্রোতাদের হৃদয়গ্রাহী কাজ উপস্থাপন করতে চেষ্টা করে। যেহেতু, গানটি করোনাকালীন সময়ের। তাই ঐ সময়ের বাস্তবতাকে সেইভাবেই উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।”
বিশেষ সময়ের গান। করোনাকালীন সময়কে উপস্থাপন করা হয়েছে গানটিতে। আর এই গানই বাংলাদেশে করোনাকালীন ও করোনা পরবর্তী সময়ের প্রথম গান। যা আজব রেকর্ডস থেকে রিলিজ হয়েছে। ইউটিউবে শুনতে পাবেন-“সেই এক সময় ছিল”….
“এসে যেতো ভাবনা
তুমি কি কাছে আসবে
নাকি আসবে না
সোনালী অতীত উঁকি দিতো
দিতো ধরণা
গানের কাছে গুনগুন
পাহাড়ি ঝর্ণা।।”