সৃজনে-মননে অনুকরণীয় ছিলেন অরুণ দাশগুপ্ত

স্মৃতিসভায় অভিমত

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৬ আগস্ট, ২০২২ at ৪:২৩ পূর্বাহ্ণ

অরুণ দাশগুপ্ত ছিলেন জীবন ও জগতের ধীমান পর্যবেক্ষক, জ্ঞান ও মননের প্রবীণতম প্রদীপ, সৃজনশীল ও মননশীল কর্মের একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি- সংগীত- রাজনীতি- দর্শন- ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ছিল অসাধারণ। মানুষের সৃজনী প্রতিভায় অরুণ দাশগুপ্তের ছিল অখণ্ড বিশ্বাস। এই বিশ্বাস প্রসারিত ছিল তাঁর আপন অস্তিত্বের অনিবার্যতায়ও। তাঁর বৌদ্ধ মন্দির সড়ক সংলগ্ন ‘কল্যাণী’ বাড়িটি ছিল কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীদের পরিচিত ঠিকানা। কবি শামসুর রাহমান থেকে শিল্পী মর্তুজা বশীর, প্রফেসর ড. অনুপম সেন, আবুল মোমেন, আলাউদ্দিন আল আজাদ, রশিদ আল ফারুকী থেকে শুরু করে মুক্তবুদ্ধি চর্চার নবীন পর্যন্ত সবাই তাঁর ঘরে যেতেন। শুধু তাই নয় দেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদদের অনেকেই তাঁর বাড়ি যেতেন। যে কোনো বিষয়ে কথা উঠলে তিনি অনর্গল বলে যেতে পারতেন। তাঁর সে বলা ভাসা ভাসা নয়, গভীর জ্ঞান ও পান্ডিত্য থেকেই তিনি বলতেন। অরুণ দাশগুপ্ত ছিলেন স্বাপ্নিক-ব্যক্তিত্ব। তিনি স্বপ্ন যেমন দেখতেন তেমনি স্বপ্ন দেখাতেও পারঙ্গম ছিলেন। গতকাল ২৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে ৭টায় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অরুণ দাশগুপ্ত স্মৃতি পর্ষদের উদ্যোগে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় সাংবাদিক ও কবি অরুণ দাশগুপ্তের স্মৃতিসভায় আলোচকবৃন্দ এ সব কথা বলেন।
তাঁরা বলেন, জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেও বিত্ত-বৈভবের মোহ তাঁকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। আজীবন তিনি দেশ-সমাজ-জাতির আধুনিক বিনির্মাণে সম্মুখযোদ্ধার ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিলেন। ছিলেন নির্মোহ, প্রগতিশীল ও বাস্তববাদী, সাহিত্যাঙ্গনের অকুতোভয় কলম সৈনিক ও সাদা মনের মানুষ।
‘আড্ডারু’ অরুণ দাশগুপ্ত সম্পর্কে আলোচকবৃন্দ বলেন, সাহিত্য কিংবা চিন্তাচর্চার মাধ্যম হচ্ছে আড্ডাচর্চা, প্রচুর দরকার আড্ডার। চট্টগ্রামের ‘কল্যানী’ বাড়িতে এই আড্ডার পার-আড্ডারু ছিলেন অরুণ দাশগুপ্ত। তিনি আড্ডার মধ্যমণি, আমাদের ‘দামণি’। সাহিত্যের আখড়ায় তিনি আয়োজক, আন্দোলক, তিনিই উচ্চারক। তারা আরো বলেন, যুগপৎ সাহিত্যের ধারায় ধ্যানের সাহিত্য, মগ্ন হয়ে যাওয়া উৎকর্ষতার ভাবনাই মুখ্য। সেখানে অরুণ দাশগুপ্ত অনেক বেশি ক্ষিপ্র গতির সাহিত্যমগ্ন মানুষ ছিলেন। তার লেখা প্রবন্ধ-নিবন্ধ পড়লেই সাহিত্য-সংস্কৃতির বিস্তর-ভাবনায় অগাধ পাণ্ডিত্যের পরিচয় পাওয়া যায়। প্রাজ্ঞ এ সাহিত্যিকের প্রাণিত উদ্দীপনা-ই এই অঞ্চলের সাহিত্যকে দিয়েছে প্রাণ।
স্মৃতি আয়োজনে কথামালা ও কবিতা পাঠে অংশ নেন ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মফিজুর রহমান, অধ্যাপক মোহীত উল আলম, কবি ও সাংবাদিক রাশেদ রউফ, কবি রিজোয়ান মাহমুদ, ড. ইলু ইলিয়াস, কবি কামরুল হাসান বাদল, গল্পকার রবিন ঘোষ, কবি আশীষ সেন, প্রকাশক ও ইতিহাস গবেষক জামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু, কবি সাথী দাশ, কবি সেলিনা শেলী, কবি বিজন মজুমদার, কবি আকতার হোসাইন, কবি নাজিমুদ্দীন শ্যামল, নাট্যজন, কবি ও লালন গবেষক স্বপন মজুমদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুল হালিম দোভাষ, সংস্কৃতিজন সজল চৌধুরী, কবি বিদ্যুৎ কুমার দাশ ও কবি আলী প্রয়াস।
শুরুতে সংগীত পরিবেশন করেন সংগীত ভবন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীবৃন্দ।
আবৃত্তি শিল্পী মুজাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন কবি মনিরুল মনির। কবি অরুণ দাশগুপ্তের কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তি শিল্পী অঞ্চল চৌধুরী, মিলি চৌধুরী, রাশেদ হাসান, কংকন দাশ, ফারুক তাহের ও প্রণব চৌধুরী। এ সময় সাহিত্য ও সংস্কৃতিকর্মীগণ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকোনো একটা দল না এলেও নির্বাচন যথাসময়ে হবে
পরবর্তী নিবন্ধসরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ : ফখরুল