আনোয়ারায় সুর্যমুখী ফুলের চাষে সফলতা এসেছে। সূর্যমুখী থেকে মধু আহরণের স্বপ্নও দেখছেন কৃষকেরা। পটিয়ায়ও পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা দেখে অনেক কৃষক এই ফুলের চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
আনোয়ারায় সূর্যমুখীতে স্বপ্ন : আনোয়ারা প্রতিনিধি জানান, কৃষিতে সাফল্যে আনোয়ারা অন্য উপজেলার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এক সময় যে জমিতে চাষাবাদ হতো না, সেসব জমি এখন শীতকালীন সবজিতে সবুজ। যেখানে ছিল ধানক্ষেত সেখানে এখন হাসছে সূর্যমুখী ফুল। মুজিববর্ষের অঙ্গীকার হিসাবে আনোয়ারায় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় দ্বিতীয়বারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন কৃষকেরা। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বেশ কয়েকজন কৃষক। তাদের স্বপ্ন, সূর্যমুখীতে মৌচাক বসিয়ে মধু আহরণ করবেন।
এ বছর আনোয়ারায় ২০ হেক্টর জমিতে ১৫ জন কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। আজ শনিবার সূর্যমুখীর মাঠ পরিদর্শনে আসছেন পরিচালকসহ বিশেষ প্রতিনিধিদল।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে সহজে উন্নত মানের তেল ও খৈল উৎপাদন হয়। পাশাপাশি পুষ্টিকর সবজি হিসেবেও সূর্যমুখী জনপ্রিয়। তাছাড়া এই ফুলের মাধ্যমে মৌচাক বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধু উৎপাদন করা সম্ভব। সেই সাথে জ্বালানির চাহিদা পূরণেও ভূমিকা আছে। সূর্যমুখী বীজ রোপণের ৯০-১০৫ দিনের মধ্যে কৃষকেরা ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারেন। প্রতি বিঘা জমিতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় মণ বীজ পাওয়া যায়। বিঘাপ্রতি কৃষক ১০-১১ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করতে পারেন। লাভজনক হওয়ায় এই ফুল চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। সূর্যমুখীর প্রতিকেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তেল উপাদন সম্ভব। প্রতি শতক জমিতে ৮ কেজি বীজ উৎপাদন হয়। এতে তেল উপাদন হবে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি শতক জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা। স্বাস্থ্য রক্ষা ও রোগ জীবাণু প্রতিরোধে এই ফুলের উৎপাদিত তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
ধান উৎপাদনে সেচ, নিড়ানি, বীজ, সার, কীটনাশকসহ উৎপাদন খরচ মিটিয়ে কৃষকেরা তেমন বাজার মূল্য পায় না। অনেক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সেচের অভাবে প্রত্যাশিত ফলনও হয় না। এই কারণে বোরো চাষের বিকল্প হিসেবে শীতকালীন সবজি চাষে অধিকাংশ কৃষকের আগ্রহ বেশি। এ বছর নতুন চমক হিসাবে প্রথমবারের মতো যোগ হলো সূর্যমুখী ফুলের চাষ। ধানের চেয়ে এই ফুল চাষের খরচ তিন গুণ কম এবং লাভজনক। লোনাপানি যুক্ত জমিতে ধান ও অন্যান্য সবজি চাষ করা সম্ভব না হলেও সূর্যমুখী চাষে তা সহায়ক।
কৃষক মো. মহিউদ্দীন জানান, গত বছর সূর্যমুখী চাষ করে ভালো ফলন হওয়ায় লাভবান হয়েছি। এবার ৩২ শতক জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। ইতিমধ্যে ফুলের পাপড়ি ছড়িয়েছে। তার গন্ধে মাঠে মৌমাছি আসছে। সূর্যমুখীর সাথে মৌমাছির চাষ করে মধু উৎপাদনও করতে চান তিনি।
আনোয়ারা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে আনোয়ারা কৃষি অফিসের অধীনে কৃষকদের আত্মর্নিভরশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সারা বছর উঁচু-নিচু জমিতে কীভাবে বিষমুক্ত সবজি, ফলমূল ও চাষাবাদ করবে সে বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার ও প্রণোদনা দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর সূর্যমুখী চাষে কৃষকের আগ্রহ আরো বেড়ে গেছে। এ বছর আনোয়ারার ১৫ জন কৃষক ২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তন করার চেষ্টা করছেন। এ বছর কৃষকদের বিনামূল্যে উন্নত মানের বারি-৩ জাতের বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। একটু খাট আকৃতির গাছ হলেও এ বীজ থেকে ভালো ফলন হয়। আশা করছি, এবার প্রতি কেজি বীজে ৯০ থেকে ১০০ টাকা বাজারমূল্য পাবেন কৃষকেরা। বীজ বিক্রিতে উপজেলা কৃষি অফিস সহায়তা করবে।
পটিয়ায় কৃষকের মুখে হাসি : পটিয়া প্রতিনিধি জানান, পটিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সর্বপ্রথম উপজেলার কেলিশহরের রতনপুর উত্তর ভূর্ষি গ্রামে ২০ শতক জায়গায় পরীক্ষামূলক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়। এতে সফলতার হাতছানি দেখছে কৃষি অফিস ও স্থানীয় কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষক অনিল দে’র ২০ শতক জায়গায় পটিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়। প্রদর্শনী প্লট হিসেবে পরীক্ষামূলক এই চাষে সফলতা পাওয়ায় স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষক অনিল দে জানান, কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার, কীটনাশকসহ যাবতীয় পরামর্শে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়। এখানে শুধুমাত্র আমার ২০ শতক জমি ব্যবহার করা হয়েছে। সফলভাবে সূর্যমুখী চাষ করতে পারায় আমি আনন্দিত। আগামী বছর কৃষি বিভাগের সহায়তায় বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক আকারে চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান জানান, পটিয়ায় কৃষকরা সূর্যমূখী ফুল চাষে আগ্রহী ছিলেন না। কৃষি অফিস থেকে সহায়তা দিয়ে কৃষক অনিল দে’র ২০ শতক জায়গায় চাষ করে সফলতা দেখে অনেক কৃষক বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এটা বাণিজ্যিকভাবে করতে পারলে লাভবান হবে। সূর্যমুখী ফুল থেকে তেল উৎপাদন, কবুতর ও অন্যান্য পশুপাখির খাবারসহ অনেক কাজে এ ফুলের বীজ ব্যবহার করা হয়। আগামীতে কোনো কৃষক বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে চাইলে কৃষি অফিস থেকে সহায়তা দেয়া হবে।