সূচি এলোমেলো : ২৪ ঘণ্টায় লোডশেডিং চার-পাঁচবার

| শনিবার , ৮ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

টানা ছুটির মধ্যে ঢাকায় সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও বড় ধরনের লোড শেডিংয়ের মুখে পড়তে হয়েছে ঢাকাবাসীকে; কোথায় কখন বিদ্যুৎ থাকবে না সেই সূচি অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে ঘনঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায়। গতকাল শুক্রবার দিনে ও রাতে সমানতালে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে বিশেষ করে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর বেশি সময় বিদ্যুতের যাওয়া আসা দেখেছে রাজধানীবাসী; বিতরণকারী কর্তৃপক্ষও অবস্থা নাজুক বলে মেনে নিচ্ছেন। তারা বলছে, লোড শেডিংয়ের সূচি দিয়েও ইদানীং তা রক্ষা করা যাচ্ছে না। বিদ্যুতের জাতীয় সঞ্চালন লাইনে গত মঙ্গলবার বড় ধরনের বিভ্রাটের পর গত তিন দিনে লোড শেডিং বেশি বেড়েছে বলে অনেকেই জানিয়েছেন। বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানিগুলোও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ার কথা জানিয়েছে। ‘শুক্রবারও লোড শেডিংয়ের খুব খারাপ অবস্থা’ মন্তব্য করে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান জানান, তার এলাকায় ছুটির দিনে ১৪৫০ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও পেয়েছেন ৯৫০ থেকে ১০০০ মেগাওয়াট। ঢাকার অপর অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ডেসকোর এমডি কাউসার আমির আলী জানান, সম্প্রতি দৈনিক গড়ে ১০০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট লোড শেডিং করা হচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।
বিদ্যুতের চাহিদা না বাড়লেও উৎপাদন কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, যে কারণে রাতেও শোড শেডিং দিতে হচ্ছে। আমাদের জন্য সমস্যা হচ্ছে- দিনেও হচ্ছে, রাতেও হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের স্বল্পতার জন্য এটা হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমার প্রায় ৬৭ মেগাওয়াট লোড শেড আছে। আমাদের জন্য খুব অসুবিধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সিডিউল দিয়েও সিডিউল রাখতে পারছি না, বিষয়টি হচ্ছে- এ রকম। মঙ্গলবার দুপুরে সঞ্চালন লাইন অকার্যকর হয়ে পড়লে জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ) অন্তত সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্‌ন্ধ ছিল। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ঢাকায় এলাকাভেদে কয়েকদিন ধরে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না বলে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে। শুক্রবার ছুটির দিনেও লোড শেডিং তীব্রতর হয়েছে। অথচ সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে লোড শেডিং থাকবে না বলে মাস দেড়েক আগে আশার কথা শুনিয়েছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গত ১৪ অগাস্ট এক সেমিনারে তিনি বলেছিলেন, আমি আশাবাদী আগামী মাসের শেষ থেকে আমরা পুরোপুরি এই লোড শেডিং থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। বিশ্ব পরিস্থিতি এর থেকে খারাপ না হলে আমরা ভালোর দিকে যাব বলে আশাবাদী। এদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর বিদ্যুৎ বিতরণকারী দুই কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) লোড শেডিং সূচি পর্যালোচনা করেও এমন চিত্র দেখা গেছে। ডিপিডিসির নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কমপ্লেইন সুপারভাইজার টিংকু রঞ্জন দাস জানান, কোনো কোনো এলাকায় দুই ঘণ্টা পরপর শোড শেডিং হচ্ছে। এরপর যদি কোনো কাজ থাকে, তখন সময়টা আরও ১০ থেকে ১৫ মিনিট দীর্ঘায়িত হয়। এটা সারাদেশেই হচ্ছে, বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পৌনে তিন বছরের সন্তান নিয়ে তিন জনের সংসার একাই সামলান রামপুরার পূর্ব হাজীপাড়ার বাসিন্দা তানজিনা আফরিন। সকাল থেকে রাত অবধি রুটিন ধরে সাংসারিক কাজ চালিয়ে আসলেও তাতে বারবার ছেদ পড়েছে লোড শেডিং বেড়ে যাওয়ায়, পাল্লা ভারি হয়েছে দুর্ভোগেরও। কয়েক দিনের ভোগান্তির কথা তুলে ধরে তিনি বললেন, এখন দিনে যেমন কয়েক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকে না, গভীর রাতেও বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আবার খুব সকালেও লোড শেডিং হচ্ছে। বুধবার দিনে দুই বেলা দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না, রাত ৯টায় আবার চলে যায়, আসে ১০ টায়। এরপর নিজেরা বাসার কাজকর্ম শেষ করে বাচ্চাকে নিয়ে ঘুমাতে গেলাম, রাত ১টায় আবার চলে গেল। রাত ২টায় বিদ্যুৎ এল। এরপর সকাল ৬টায় আবার চলে যায়। বিপর্যয়ে ঢাকার মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ওয়ার্ড হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎহীন, রোগীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে ভোগান্তির পাশাপাশি বাসায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি। সম্প্রতি দিনে-রাতে ঘণ্টা খানেক করে চার-পাঁচবার বিদ্যুৎ যাওয়ায় ঢাকা মহানগরে এ পরিবারের মত অনেকের কাছে লোড শেডিং আর সহনীয় মাত্রায় নেই। পড়াশোনায় ব্যাঘাতের কথা বলছেন শিক্ষার্থীরা আর ক্রেতা সংকটের কথা জানাচ্ছেন দোকানিরা। অথচ জুলাইয়ে পরিকল্পিতভাবে লোড শেডিং শুরুর এক মাসের মাথায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে আর থাকবে না এ দুর্ভোগ। ডিপিডিসির আওতাধীন জুরাইন এলাকায় শুক্রবার ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা শোড শেডিং থাকছে বলে উল্লেখ করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি নেতা নিপুন রায়ের বিরুদ্ধে জিডি
পরবর্তী নিবন্ধওয়েটার থেকে শত কোটি টাকার মালিক