সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা দূর করতে হবে : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

আজাদী প্রতিবেদন

চট্টগ্রামে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের পরামর্শ সভা | বৃহস্পতিবার , ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, আমার কাছে এমন কোনো জরিপ নেই যা বলে নির্বাচন হবে না। বরং নির্বাচন এখন অবধারিত। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো এই শঙ্কা দূর করে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা। গতকাল বুধবার নগরীর একটি হোটেলে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত আঞ্চলিক পরামর্শ সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবেএ বিষয়টি সবাই মেনে নিলেও নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে তা নিয়ে এখনো শঙ্কা কাটেনি। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কি না, সেই উদ্বেগ এখনো দূর হয়নি।

প্রধান উপদেষ্টা ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচন করে দেখানোর কথা বলেছেন, যার অপেক্ষায় রয়েছে সবাই। নাগরিক প্ল্যাটফর্ম দুটি উদ্যোগ নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটি ডিজিটাল ‘রিফর্ম ওয়াচ’ প্ল্যাটফর্ম, যা ১৪ তারিখ উদ্বোধন হবে এবং ২০ তারিখ রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে নাগরিক প্রত্যাশা ভিত্তিক নির্বাচনী ইশতেহার প্রদান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন এক ধরনের দোলাচলে আছেএকদিকে অসীম পরিবর্তনের সম্ভাবনা, অন্যদিকে অর্জিত অগ্রগতির স্থায়িত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন কিংবা রাজনৈতিক দলকেউই এসব সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়ে তুলে ধরেনি জানিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত এক বছরের অভিজ্ঞতা রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝিয়েছেকিছু না করে আর পার পাওয়া যাবে না। বড় ধরনের অন্যায় বা দুঃশাসন করলে দেশে অবস্থান করাই কঠিন হয়ে পড়বেএই উপলব্ধি তৈরি হয়েছে। এটি টেকসই হবে কি নাসেটা এখনো নিশ্চিত নয়।

বক্তব্যে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আজকের পরামর্শ সভায় সুশাসন, জবাবদিহিতা, আইনের শাসন ও নিরাপত্তার দাবি জোরালোভাবে এসেছে। রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিমুক্ত থাকা এবং জবাবদিহিতার দাবিই আজকে সবচেয়ে বড় আকারে উঠে এসেছে। একই সঙ্গে, সব বিষয়ে সরকারের মুখাপেক্ষী না হয়ে নাগরিকদের শক্তিশালী ভূমিকা নিতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন অঞ্চলে নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে তারা দেখেছেনসবাই দক্ষ প্রশাসন, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এবং নিরপেক্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চান। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহারে এসব বিষয়ে কীভাবে গুরুত্ব দেবেতা এখন দেখার বিষয়। তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো ঘোষিত প্রতিশ্রুতিগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পদের হিসাব প্রতি তিন বা ছয় মাস অন্তর প্রকাশের দাবি উঠেছে। আগের সরকার যেমন তা পূরণ করতে পারেনি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও করেনি। ফলে ভবিষ্যৎ সরকারও একই পথ অনুসরণ করতে পারেএ আশঙ্কা অনেকের মধ্যে রয়েছে। দেড় বছর ধরে সংস্কার নিয়ে আলোচনা চললেও রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যন্তরীণ সংস্কারের ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি বলেও বক্তব্যে উল্লেখ্য করেন।

জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে শুরু হওয়া পরামর্শ সভায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, চিকিৎসক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিকর্মী ও সামাজিক কর্মীরা অংশ নেন। সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান, সুজনের সাবেক আহ্বায়ক প্রফেসর সিকান্দার খান, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদসহ সভায় নাগরিক সমাজের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরীতে গ্যাসের আরো দেড় লাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ
পরবর্তী নিবন্ধআকবরশাহে শীর্ষ সন্ত্রাসী আলী আকবর গ্রেপ্তার