‘দরদীয়ারে বন্ধু…’ এবং ‘লোকসংগীতে আধ্যাত্মিকতা ও বিবিধ অনুষঙ্গ’। বই দুইটির লেখক ইকবাল হায়দার। প্রথমটি গানের। দ্বিতীয়টি গবেষণামূলক। নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে বইমেলায় গতকাল ইকবাল হায়দারের সঙ্গে দৈনিক আজাদীর কথা হয়। তিনি বলেন, মূলত আমি শিল্পী। কিন্তু লোকসংগীতের প্রতি প্রচুর আগ্রহ। সে কারণে গবেষণার জন্য লোকসংগীতকে বেছে নিয়েছি। লোকসংগীতে আধ্যাত্মিকতা ও বিবিধ অনুষঙ্গ গ্রন্থে লোকসংগীতের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছি।
তিনি বলেন, তোমার নাক সুন্দর, চোখ সুন্দর, হাঁটাচলা সুন্দর তাতে আমার কিছু আসে যাবে না। আমার উপলব্ধি হতে হবে, কোথা থেকে আসলাম এবং কোথায় যাব। বিশ্বের সৃষ্টির রহস্য কী? এ রহস্য চিন্তা করতে গিয়ে অধরাকে ধরতে পারলাম না। সেই বিষয়টা আমাকে প্রচুর তাড়িত করেছে।
তিনি বলেন, আধ্যত্মিকতা, মরমীবাদ, সুফিবাদ, মাইজভান্ডারী ভূমিকা, বাউল তত্ত্ব, মুর্শিদী, মারফতী, দেহতত্ত্ব, তত্ত্বগান, ভক্তিমূলক, গুরুগান, বিচ্ছেদি, ধামাইল, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, অহীরা গান, ঘেটু গান, বারো মাইস্যা, কৃষাণ গান এবং ভাসান গান নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে লোকসংগীতে আধ্যাত্মিকতা ও বিবিধ অনুষঙ্গ’ গ্রন্থে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানে মৃত্যুচিন্তা’র বিষয়টি তুলে এনেছি। যেটা এর আগে কেউ করেনি। যেমন ‘সূর্য উডেলে ভাই লাল মারি’। সূর্য উঠছে-ডুবছে, চন্দ্র উঠছে, বাতাস বইছে, পাখি উড়ছে, সব কিছু ঠিক আছে। কিন্তু আমার মধ্যে যে থাকতো, আমার দেহে যে বাস করতো সে প্রাণপাখি বেরিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার যখন সাযুজ্য ঘটে, তখন ঈশ্বরই প্রেম, প্রেমই ঈশ্বর এবং আমিই ঈশ্বর এই উপলব্ধি হয়। আবার, আধ্যাত্মিক গান যা আত্মা থেকে জাত, সেটাই আত্মা সম্বন্ধীয়। গবেষণা প্রবন্ধে লালন সাঁইজির গান, হাসন রাজার গান, শাহ আব্দুল করিমের গান, রাধা-রমন দত্তের গান, দেহতত্ত্বের গান, ধর্মতত্ত্বের গান, শীতালং শাহ’র গান, দূরবীন শাহ’র গান, রমেশ চন্দ্র শীলের গান, মাওলানা বজলুল করিম মন্দাকিনী’র গান, বাহারুল উলুম মাওলানা আব্দুল হাদী কাঞ্চনপুরী’র গান, মাওলানা আবুল খায়েরের গান, মাওলানা আজিজুল হকের গান, মোহাম্মদ নাছিরের গান ও বিজয় সরকারের গানের ভাববাব উঠে এসেছে।
এ গীতিকবি বলেন, হাজারের উপর গান লিখে ফেলেছি। এর মধ্যে ৫০০ গান নিয়ে একটা বইও বের হয়েছে। এবার ‘দরদীয়ারে বন্ধু… বের করলাম। গানগুলোতে আধ্যাত্মিকতা ও দেহতত্ত্বকে উঠে এসেছে। তিনি বলেন, আমাদের মনের ভিতর যে মানুষের বাস তার নাম কেউ জানে না। সে মানুষ না আরো শক্তিধর কোন কিছু সে কথাও কেউ বলতে পারে না। কিন্তু মানুষের হৃদয়ে যে সুর তার প্রকাশের ভিন্নতা তাকে নানাভাবে চিহ্নিত করতে পারে। সুরের প্রকাশের ভেতর তার পরিচয়। সুতরাং সুর আর মানুষ এক অভিন্ন সূত্রে গাঁথা। এই সুর যিনি ধরে আছেন তিনি কিন্তু অধরা। আর এই অধরাকে লাভ করার জন্যই মানুষ উপাসনা করে, আরাধনা করে, ধ্যান করে। মানুষের জীবনে আধ্যাত্ম সাধনা এই অধরাকে লাভেরই প্রয়াস। এসব বিষয়কে উপজীব্য করেছি ‘দরদীয়ারে বন্ধু’র গানগুলোতে।
প্রসঙ্গত, বেতার, টেলিভিশ ও মঞ্চের একজন খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পরিচিতি থাকলেও সাবেক ব্যাংকার ইকবাল হায়দার মূলত একজন কবি, ছড়াকার, গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক ও লোকসঙ্গীত গবেষক।












