বাংলা সংগীত জগতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এক সাড়া জাগানো নাম। অসাধারণ সুর আর স্নিগ্ধ, সাবলীল ও মোহনীয় কণ্ঠের ছোঁয়ায় তিনি বাংলা সংগীতের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন, হয়ে উঠেছেন সংগীতের বরপুত্র, সুরের জাদুকর।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯২০ সালের ১৬ জুন ভারতের কাশীতে। পনেরো বছর বয়সে তিনি চির বন্ধু, চির নির্ভর কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের উৎসাহে প্রথম বেতারে গান করেন। ১৯৩৮ সালে প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়। এ সময় তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিদ্যায় অধ্যয়নরত। কিন্তু সুরের নিবিড় টানে সব কিছু হারিয়ে যেতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া ছেড়ে দেন হেমন্ত, আর গানই হয়ে ওঠে পরম আরাধনা। এরপর একে একে প্রকাশিত হতে থাকে তাঁর মৌলিক গানের রেকর্ড। প্রতিটি রেকর্ডই দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় চলচ্চিত্রেও প্লেব্যাক করেছেন, করেছেন সুরযোজনা। ১৯৪৭ সালে ‘অভিযাত্রী’ ছবিতে সংগীত পরিচালনা করে সংগীত পরিচালক হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ। সাড়া জাগানো ছবি শাপমোচন, নীল আকাশের নিচে, হারানো সুর সহ অনেক বিখ্যাত ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তাঁর গাওয়া অসংখ্য বিখ্যাত গানের মধ্যে রানার, কোনো এক গাঁয়ের বঁধূর কথা, ঝড় উঠেছে, মুছে যাওয়া দিনগুলি, আমার গানের স্বরলিপি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
আধুনিক গান ছাড়াও হেমন্ত মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্র সংগীত ও রজনীকান্তের গান গেয়েছেন। বেশ কিছু চলচ্চিত্রে রবীন্দ্র সংগীতের সার্থক প্রয়োগ ঘটিয়েছেন তিনি। স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন পুরস্কারের পাশাপাশি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন সম্মানসূচক ডি. লিট। ১৯৮৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এই মহান শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু আজও তিনি সুর হয়েই বেঁচে রয়েছেন বাঙালির জীবনে।