সুরকার আলম খানের চিরবিদায়

| শনিবার , ৯ জুলাই, ২০২২ at ৮:০০ পূর্বাহ্ণ

‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই’ এর মত জনপ্রিয় গানের সুরকার, সংগীত পরিচালক আলম খান আর নেই। ঢাকার শ্যামলীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয় বলে তার বড় ছেলে, সংগীতশিল্পী আরমান খান জানান। আলম খানের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক এবং দুঃখ প্রকাশ করেছেন। খবর বিডিনিউজের।
জানা যায়, ৭৭ বছর বয়সী আলম খান কয়েক বছর ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাতি গ্রামে ১৯৪৪ সালের ২২ অক্টোবর জন্ম নেন এই গুণী সুরকার। তিনি পপ সম্রাট খ্যাত আজম খানের বড় ভাই। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে আলম খানের শৈশব কেটেছে কলকাতায়। ১৯৪৭ এ দেশভাগের পর ঢাকায় ফিরে থিতু হন তারা। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (এসএসসি) পাস করেন। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই সুর আর গানের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে আলম খানের। প্রথম দিকে বাবার আপত্তি থাকলেও মায়ের উৎসাহে চলে গানের চর্চা। পরে ছেলের গানের প্রতি তীব্র ঝোঁক দেখে বাবাই তাকে সংগীতে তালিমের জন্য নিয়ে যান ওস্তাদ ননী চট্টোপাধ্যায়ের কাছে।
ষাটের দশকের শুরুর দিকে সুরকার ও সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষের সহকারী হিসেবে ‘তালাশ’ সিনেমার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন আলম খান। তবে সংগীত পরিচালক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশে সময় লেগে যায় আরও এক দশক। ১৯৭০ সালে ‘কাচ কাটা হীরে’ সিনেমায় সংগীত পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন আলম খান; তবে শুরুতে সাফল্য ধরা দেয়নি এই সুরকারের জীবনে।
এরও আটবছর পর নাট্যকার, নির্দেশক আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘সারেং বৌ’ সিনেমায় ‘ও রে নীল দরিয়া’ গানের সুরে বাজিমাত করেন আলম খান, বনে যান কীংবদন্তী। তার সুরে আব্দুল জব্বারের গাওয়া গানটি এখনও জনপ্রিয়। ১৯৮২ সালে ‘রজনীগন্ধা’ সিনেমায় আলম খানের সুরে সাবিনা ইয়াসমীনের কণ্ঠে ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মত’ এবং এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’ এবং রক ধাঁচের ‘তুমি যেখানে, আমি সেখানে’ আজও মনে রেখেছে শ্রোতারা।
এ সুরস্রষ্টা শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘কি জাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা’, ‘সবাই তো ভালবাসা চায়’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘তেল গেলে ফুরাইয়া’, ‘আমি তোমার বধূ তুমি আমার স্বামী’, ‘মনে বড় আশা ছিল’, ‘সাথীরে যেও না কখনো দূরে’, ‘ বেলি ফুলের মালা পরে’, ‘কাল তো ছিলাম ভালো’, ‘চুমকি চলেছে একা পথে’, ‘ভালবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া’, ‘তুমি কি এখন আমারই কথা ভাবছো’, ‘আকাশেতে লক্ষ তারা চাঁদ কিন্তু একটারে’র মতো তুমুল সব জনপ্রিয় গান।
মোট ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন আলম খান। এর মধ্যে পাঁচবার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে ও একবার শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে পুরস্কার পান।
১৯৭৬ সালে গীতিকার হাবিবুননেসা গুলবানুর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন আলম খান। তাদের দুই ছেলে আরমান খান ও আদনান খান এবং মেয়ে আনিকা খান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্রেতার ভিড় দেখে বাড়তি দাম
পরবর্তী নিবন্ধঘরমুখো মানুষের ঢল