ভারতের পুনে’তে ‘দ্যা ড্রয়িং বোর্ড’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক স্থাপত্য প্রতিযোগিতার ৫ম আসরে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগের একটি দল প্রথম রানার্স-আপ হয়েছে। এই দলের সদস্য ছিলেন ফয়সাল হোসেন, সুমাইয়া সুলতানা ও সাদমান আলী। এর মধ্যে সুমাইয়া সুলতানার কাছ থেকে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তাদের সফলতার গল্প শুনে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছেন চুয়েটের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম।
*ভারতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতাটা মূলত কী বিষয়ে?
-রোহান বিল্ডার্স ও মাইন্ডস্পেস আর্কিটেক্টসের যৌথ পরিচালনায় ২০১৬ সাল থেকে ভারতের পুনে শহরে প্রতি বছর ‘দ্য ড্রয়িং বোর্ড’ শীর্ষক স্থাপত্য নকশাভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। যেখানে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের নকশাগুলো উপস্থাপন করেন। সেখান থেকে বাছাইকৃত ১০টি নকশা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর ৩টি নকশাকে তারা বিজয়ী ঘোষণা করেন।
* প্রতিযোগিতায় অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী কারা?
-এবছর ১৪টি দেশ থেকে মোট ১ হাজার ৩শ জনের অধিক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। এরমধ্যে রয়েছে পোল্যান্ড, জর্জিয়া, জার্মানি, ম্যানচেস্টার, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, তুর্কি, সৌদি আরব, কেনিয়া, মিশর, ইতালি, স্যান্টিয়াগো, শ্রীলংকা প্রভৃতি।
* আপনাদের প্রজেক্টটি সম্পর্কে একটু বলুন :
-এবারের প্রতিযোগিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল ‘ভারতের ক্ষণস্থায়ী নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য অস্থায়ী গৃহ নির্মাণ’। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল কীভাবে স্বল্প খরচ ও উপাদানে গৃহগুলো নির্মাণ করা যায় এবং সেটি প্রতিযোগিতার আয়োজকদের দেওয়া সকল প্রয়োজনীয়তাগুলো পরিপূর্ণ করে।
* আপনাদের বিজয়ী টিম সম্পর্কে কিছু বলুন :
-আমাদের দলের প্রতিনিধি ফয়সাল হোসেন। এছাড়া আমি ও সাদমান আলী। আমরা সকলেই চুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
* ভারতীয় দূতাবাসে আপনাদের দল নিয়ে উচ্ছ্বাস কেমন ছিল?
-ভারতে সর্বমোট ৬টি পত্রিকায় বিজয়ী ও তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হয়। ভারতীয় দূতাবাস থেকে আমাদেরকে অভিনন্দন জানানোসহ আমাদের অভিজ্ঞতা জানার জন্য যোগাযোগ করেছিল। এছাড়া রোহান বিল্ডার্সের পক্ষ থেকে একটি সাক্ষাৎকারও নেয়া হয়, যেটি বর্তমানে ইউটিউবে দেখা যাচ্ছে।
* করোনাকালীন সময়ে এরকম প্রতিযোগিতা কতটা আপনাদের পড়াশোনার সাথে সংযোগ রাখতে সহায়তা করেছে?
-বিষয়গুলো মূলত নিজেদেরকে চর্চার মধ্যে রাখা। করোনাকালীন সময়ে দীর্ঘ ৯ মাস আমরা আমাদের পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। সেদিক থেকে আমি মনে করি এসময়ে সকল শিক্ষার্থীর উচিৎ এধরনের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা।
* করোনাকালে এরকম আরো কী কী সৃজনশীল কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন?
-করোনাকালীন সময়ে ফ্রিল্যান্সিং একটি উপযুক্ত মাধ্যম। বর্তমান সময়ে সবার বাসায় কমবেশি ইন্টারনেটের ব্যবহার আছে। ঘরে বসে দক্ষতা চর্চার পাশাপাশি ছোটখাটো একটি আয়ের উৎস হিসেবেও সহায়তা করে এটি। এছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কাজও মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকতে সহায়তা করে।
* বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভাগ থেকে কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন?
-বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থাপত্য বিভাগ থেকে আমরা সবসময় এরকম প্রতিযোগিতা ও অন্যান্য সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্রে উৎসাহ এবং সহায়তা পেয়েছি। এছাড়া আমাদের বিভাগীয় প্রধান যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সবসময় পাশে থাকেন।
* স্থাপত্য শিল্প নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?
-সময়ের সাথে স্থাপত্য সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অনুধাবন করছি, বুঝতে পারছি যে এই ক্যারিয়ারটি চোখকে আনন্দিত করার পরিবর্তে অনেক পরিবারের উন্নত ভবিষ্যত তৈরি করে। এমন একটি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান তৈরি করা যা উন্নত দেশগুলোর মত আমাদের উন্নয়নশীল দেশেও টেকসই, উদ্ভাবনী এবং স্বল্প ব্যয়ের স্থাপত্য নির্মাণ শৈলী সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়।
* চট্টগ্রামে স্থাপত্য শিল্পের সম্ভাবনা কেমন? চট্টগ্রামকে ঘিরে আপনার কোনো পরিকল্পনা কিংবা স্বপ্ন আছে কিনা?
-নির্মাণ ও ডিজাইনিংয়ের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের স্থপতিদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে। প্রার্থীরা বেসরকারির পাশাপাশি সরকারি খাতের সংস্থাগুলোর জন্যও আবেদন করতে পারছে। নগর উন্নয়ন, ইন্টরিওর ডিজাইনিং, নির্মাণ ইত্যাদির মতো প্রক্রিয়াগুলিতে ভালো স্থপতিদের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে।
স্থপতি হিসেবে চট্টগ্রাম শহরকে কেবল স্মার্টই নয়; টেকসই করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই স্মার্ট বিকাশের জন্য কার্যকরী পরিকল্পনার সাথে প্রযুক্তির সংযোগ ঘটাতে হবে।
* আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
-আমরা মনে করি শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রের জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত নয়। এধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলো বাস্তব জীবনের স্থাপত্য সম্পর্কে সম্মানিত জুরিদের কাছ থেকে শেখার অভিজ্ঞতা বাড়ায়। তাই পরবর্তিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশের স্থাপত্য চর্চায় নিজেদেরকে নিযুক্ত করার পরিকল্পনা আছে।
* আপনার বেড়ে ওঠা কোথায়? ছোটবেলা সম্পর্কে বলুন?
-আমাদের সকলেরই জন্ম চট্টগ্রাম শহরে এবং বেড়ে ওঠা এখানেই। আমার বেড়ে ওঠা যেহেতু চট্টগ্রাম শহরেই তাই স্কুল কলেজসহ ছোটবেলাও কেটেছে এখানে। আমি ইস্পাহানি পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা করেছি।