সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১৯১৯–২০০৩)। কবি ও গদ্যকার। কবিতা তার প্রধান সাহিত্যক্ষেত্র হলেও ছড়া, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য সকল প্রকার রচনাতেই তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি–বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক/ আজ বসন্ত’ তাঁর কবিতার এ অমর পংক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি জন্ম পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম ক্ষিতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মাতার নাম যামিনী দেবী। সুভাষ মুখোপাধ্যায় ভবানীপুর মিত্র স্কুল থেকে প্রবেশিকা (১৯৩৭), স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে আইএ (১৯৩৯) পাস করেন। এ সময় তিনি কবি সমর সেনের সান্নিধ্যে মার্কসীয় রাজনীতি ও লেবার পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পদাতিক (১৯৪০) কাব্যগন্থ প্রকাশিত হলে তিনি শ্রমজীবী জনসাধারণের মুক্তিপ্রয়াসী কবি হিসেবে বাংলা কবিতাঙ্গনে পরিচিত হন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে তিনি একটি প্রকাশনা সংস্থায় সাবএডিটার হিসেবে তাঁর কর্মজীবন কুরু করেন। এ বছরই তাঁর চিরকুট (১৯৫০) কাব্য প্রকাশিত হলে তিনি মার্কসীয় বস্তুবাদী ধারার কবিরূপে খ্যাতি লাভ করেন। পরের বছর (১৯৫১) তিনি পরিচয় পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জীবনের প্রতিটি পর্বে লক্ষ করা যায় মানবীয় বোধের উদ্বোধন। সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সবকিছুর কেন্দ্রে তিনি মানুষকে স্থাপন করে জীবনের সদর্থক দিকের উন্মোচনা করেন। এ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর কবিতাকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে তোলে। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে কাব্যগ্রন্থ : ফুল ফুটুক (১৯৫৭), যত দূরেই যাই (১৯৬২), কাল মধুমাস (১৯৬৬), এই ভাই (১৯৭১), ছেলে গেছে বনে (১৯৭২) ও ধর্মের কল (১৯৯১) প্রধান। গদ্যগন্থ: ক্ষমা নেই (১৯৭২), খোলা হাতে খোলা মনে (১৯৮৭) প্রভৃতি। আত্মজীবনী : আমাদের সবার আপন ঢোলগোবিন্দের আত্মদর্শন (১৯৮৭), ঢোলগোবিন্দের মনে ছিল এই (১৯৯৪)। উপন্যাস : হাংরাস (১৯৭২), কে কোথায় যায় (১৯৭৬), কাঁচা–পাকা (১৯৮৯)। উল্লেখ্য যে, কমরেড, কথা কও (১৯৯০) গন্থ প্রকাশের আগে (১৯৮১) কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ থেকে তিনি অব্যাহতি নেন। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দের ৮ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।