সুভাষচন্দ্র বসু(১৮৯৭–১৯৪৫)। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা। তিনি নেতাজি নামে সমধিক পরিচিত। সুভাষচন্দ্র পরপর দুইবার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি উড়িষ্যার কটকে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কটকের প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপীয় স্কুলে ভর্তি হন। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত সুভাষচন্দ্র বসু বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়া করেন। ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে ১২ বছর বয়সে কটকের রাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি করা হয়। এখানে, বাংলা ও সংস্কৃতের পাশাপাশি বাড়িতে বেদ ও উপনিষদ সম্পর্কে পাঠ গ্রহণ করেন। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ভারতীয় জাতীয়তাবাদের নেতা সি আর দাশ বসুকে অনুসরণ করে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেসের সভাপতি এবং একইসাথে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি চিত্তরঞ্জন দাস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘ফরওয়ার্ড’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে সুভাষচন্দ্র বসুকে গ্রেফতার করে মান্দালয়ের কারাগারে পাঠানো হয়। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হন এবং জওহরলাল নেহেরু সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতার মেয়র নির্বাচিত হন। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে কংগ্রেস দলের সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন গ্রহণ করতে সম্মত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল, লর্ড লিনলিথগো কংগ্রেস নেতৃত্বের সাথে আলোচনা না করেই ভারতের পক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। সুভাষচন্দ্র বসু এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করার জন্য গণ আইন অমান্য আন্দোলন আয়োজনের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন। কিন্তু গান্ধীকে এর অপরিহার্যতা বোঝাতে ব্যর্থ হলে, তিনি কলকাতার অন্ধকূপ হত্যা ঘটনার স্মরণে, ডালহৌসি স্কোয়ারের এক কোণে নির্মিত ‘হলওয়েল মনুমেন্ট‘ অপসারণের দাবিতে গণ বিক্ষোভের আয়োাজন করেন। এসময় তাকে গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করা হলেও সাত দিনের অনশন ধর্মঘটের পর ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ঐতিহাসিকদের মতে, ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ আগস্ট, সুভাষচন্দ্র বসুকে বহনকারী জাপানি বিমান, জাপান শাসিত ফোরমোসায় (বর্তমান তাইওয়ান) বিধ্বস্ত হওয়ার পর, আগুনে দগ্ধ হয়ে বসুর মৃত্যু ঘটে।