সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রত্যাশা

মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৬ মার্চ, ২০২১ at ৭:১৭ পূর্বাহ্ণ

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় একেবারে তরুণ বয়সে ছিলেন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য। মহান মুক্তিযুদ্ধে ১নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার হিসেবে রেখেছেন বীরত্বপূর্ণ অবদান।
১৯৭১ সালের এই বীর তরুণ মুক্তিযোদ্ধার চোখের সামনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন হচ্ছে। নিজের জীবন বাজি রেখে যে দেশকে স্বাধীন করেছেন সেই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নিজের অনুভূতি জানতে চাইলে একাত্তরের বীরমুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি আজাদীকে জানান, ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে সেদিন জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশের জন্য যুদ্ধে গিয়েছিলাম। বেঁচে ফিরে আসবো-সেটা ভাবিনি। তবে দেশ স্বাধীন হবে সেটা নিশ্চিত জানতাম। আজ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু বেঁচে নেই, কিন্তু তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা তাঁর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটাই পরম প্রাপ্তি।
একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আপনার প্রত্যাশা কি জানতে চাইলে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আজাদীকে জানান, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আজ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। আজকের দিনে আমার প্রত্যাশা ২০৪১ সালের আগেই এই স্বাধীন বাংলাদেশ যেন উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সেটা সম্ভব যদি বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ধারাবাহিকভাবে এই দেশের নেতৃত্ব দেন।
দেশের এই অগ্রযাত্রায় একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কতটুকু সন্তুষ্ট জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, একাত্তরের সদ্য স্বাধীন-যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলায় পরিণত কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু একাত্তরের ঘাতকরা সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে এ দেশের সকল উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে দিয়েছে। জাতির জনক যদি বেঁচে থাকতেন-তাহলে এ দেশ আরও অনেক আগেই উন্নত দেশে পরিণত হতো। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা সমাপ্ত করছেন। বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন-তাঁর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই কাজ সফলতার সাথে শেষ করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি এরকম দক্ষ হাতে নেতৃত্ব দেন তাহলে এ বাংলাদেশে একজন মানুষও গরীব থাকবে না।
আজকে জীবনের এ পর্যায়ে এসে ভালো লাগছে সকল দিক দিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটাই আজকের দিনের(স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে) পরম প্রাপ্তি।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নানা বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সাথে কথা হলে একাত্তরের তরুণ এই মুক্তিযোদ্ধার অনেক বীরত্বগাঁথা তথ্য পাওয়া যায়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মিরসরাই শুভপুর ব্রিজে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম লগ্নেই এক অতুলনীয় সাহস ও বীরত্বের স্বাক্ষর রাখেন তিনি।
চট্টগ্রামের কালুরঘাট ট্রান্সমিশন কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচারে অন্য সংগঠকদের সাথে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। একজন রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধি হয়েও তিনি ভারতে গিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। ইস্টার্ন রিফাইনারিতে গেরিলা হামলা চালানোর লক্ষ্য নিয়ে নিজের দল ও রকেট লান্সারসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নগরীতে ঢুকেন।
নগরীর কাজীর দেউড়িতে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও তার গ্রুপের অবস্থান টের পেয়ে পাকিস্তানি নৌবাহিনী এবং মিলিশিয়া দল তাদের আশ্রয়স্থলটি ঘেরাও করে ফেলে। আত্মরক্ষার জন্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও তার সঙ্গীরা ঘরের ভেন্টিলেটর দিয়ে বের হতে গিয়ে নালায় পড়ে গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় হেমসেন লেনের একটি কলোনিতে গিয়ে সেখানকার লোকজনের সহায়তায় প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তাদের দেয়া কাপড়-চোপড় পরে নিরাপদস্থানে আত্মরক্ষা করেন। পরে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ আবারও ভারতে যান। ১নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্তলগ্নে নিয়মিত বাহিনীর অগ্রাভিযানে শামিল হয়ে শত্রুবাহিনীর পতন ঘটিয়ে ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামকে নগরীকে হানাদারমুক্ত করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বাধীনতাকামী বাঙালি নিধনযজ্ঞে মেতে উঠেছিল পাকিস্তানি দানবরা
পরবর্তী নিবন্ধমোদী আসছেন আজ, স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি