চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস এলাকার ভূগর্ভস্থ পানিতে আয়রনের পরিমাণ বেড়েছে। যা পানীয় জলের মানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। আয়রনযুক্ত পানি ব্যবহারে নানা সমস্যা তৈরি হওয়ায় ক্যাম্পাসজুড়ে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়ছে। ক্যাম্পাসে বসবাসকারী শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করে আসছে এবং আয়রনযুক্ত পানির কারণে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার সম্মুখীন হচ্ছিলেন বলে জানান। এছাড়া আয়রনযুক্ত পানি ব্যবহারের ফলে পাইপলাইনে মরিচা পড়া এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত সমস্যাও দেখা দিচ্ছিল।
অবশেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে সুপেয় পানির সংকট ও পানিতে আয়রনের সমস্যা মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক একটি অত্যাধুনিক ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি ইনস্টিটিউটের পরিবহন পুলের পাশে স্থাপনের কাজ চলছে এ প্ল্যান্টের। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে সুপেয় পানি পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে। এই পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানির সরবরাহ নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে এই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। প্ল্যান্টটি আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি হচ্ছে, যা পানির আয়রন এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান কার্যকরভাবে অপসারণ করতে সক্ষম হবে। প্ল্যান্টটি প্রতিদিন কয়েক লাখ লিটার পর্যন্ত পানি পরিশোধন করতে পারবে, যা ক্যাম্পাসের বর্তমান পানির চাহিদা পূরণে অনেকটাই সক্ষম। প্ল্যান্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করবে, ফলে এর পরিচালনায় জনবলের প্রয়োজন কম হবে এবং ত্রুটিমুক্তভাবে পানি পরিশোধন সম্ভব হবে। পরিশোধনকৃত পানি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ, প্রশাসনিক ভবন, আবাসিক হল এবং শিক্ষক–কর্মকর্তাদের বাসভবনে সরবরাহ করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক জনস্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর মাধ্যমে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীরা সারাবছর বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি পাবেন। আয়রনজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন পেটের পীড়া, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি কমে আসবে। বিশুদ্ধ পানির সহজলভ্যতা সামগ্রিক ক্যাম্পাসের পরিবেশগত মান উন্নত করবে। বিশেষ করে আবাসিক হলগুলোতে থাকা শিক্ষার্থীরা, যারা দীর্ঘকাল ধরে বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভুগছিলেন, তারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই প্ল্যান্টের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং পানির গুণগত মান পর্যবেক্ষণের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ভবিষ্যতে যদি পানির চাহিদা আরও বৃদ্ধি পায়, তবে প্ল্যান্টের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়েও কর্তৃপক্ষ সজাগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো, কামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে পানির সমস্যা মারাত্মক। পানিতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে এটি চালু হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্ল্যান্ট থেকে সুপেয় পানি পাওয়া যাবে বলে জানান ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এর পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আকতার হোসেন।